Dhaka মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিকাগোয় ফিলিস্তিনি শিশুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো অঙ্গরাজ্যে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ছয় বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি-আমেরিকান শিশুকে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ছুরি হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ওই শিশুর মা।

স্থানীয় সময় শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে শিকাগো থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার (৪০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি বাড়িতে আহত অবস্থায় ওই মা ও তার ছেলে শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিশুর নাম ওয়াদিয়া আল-ফায়ুম। আল-ফায়ুমের মায়ের নাম নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ করা হয়নি।

স্থানীয় সময় গত শনিবার সকালে শিকাগো থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি বাড়িতে ওই শিশু সন্তান ও তার মাকে উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটিকে হত্যার আগে বড় সামরিক ছুরি দিয়ে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। অন্যদিকে হামলায় আহত মায়ের শরীরেও এক ডজনেরও বেশি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় বছরের ওই শিশুটিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ও তার ৩২ বছর বয়সী মাকে গুরুতরভাবে আহত করার অপরাধে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে মার্কিন পুলিশ। হামলাকারীর বিরুদ্ধে হত্যা ও ঘৃণামূলক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুলিশের অভিযোগ, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে ওই ব্যক্তি ছোট্ট শিশু ও তার মায়ের ওপর হামলা চালান।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) জানিয়েছে, নিহত শিশুর নাম ওয়াদেয়া আল-ফাইয়ুম ও তার মায়ের নাম হানান শাহিন। পরিবারটি দুই বছর ধরে একটি বাড়ির নিচতলায় বাস করত। সন্দেহভাজন ব্যক্তি তাদের বাড়িওয়ালা।

এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম জোসেফ কুবা। শনিবার সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় ৭১ বছর বয়সী এই অভিযুক্তের কপালে কাটা দাগ ছিল।

ঘটনার বিবরণে পুলিসজ জানায়, নিজেদের বেডরুমে ওই নারী এবং তার শিশু সন্তানের উপর ছুরিকাঘাত করে জোসেফ। এ সময় আহত ওই নারী ৯১১ ইমারজেন্সি নম্বরে কল বলে তার বাড়িওয়ালা তাকে একটি ছুরি দিয়ে আক্রমণ করেছে, তখন সে বাথরুমে লুকাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে হামলাকারীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যায়।

গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা জোসেফকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ‘প্রতিশোধ’ নিতে এই হামলা চালান তিনি।

বেঁচে যাওয়া হানান শাহিন জানিয়েছেন, এর আগে জোসেফের মধ্যে ইসলাম বিদ্বেষী কোনো মনোভাবে লক্ষ্য করা যায়নি। তবে শনিবার জোসেফ হঠাৎ করেই তাদের দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন। যখন হানান দরজা খুলে দেন, তখনই জোসেফ তাকে শ্বাসরোধ ও ছুরি দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করেন। এমনকি হামলাকারী সেসময় চিৎকার করে বলতে থাকেন, তোমাদের মুসলমানদের মরতে হবে।

এ ঘটনায় শোক জানিয়ে সোমবার (১৬ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ঘৃণার বশবর্তী হয়ে করা এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধের কোনো স্থান নেই। এমন আচরণ আমাদের মৌলিক মূল্যবোধ বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সব ধরনের ধর্মান্ধতা ও ঘৃণা থেকে দূরে থাকতে হবে।

গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েল অভিমুখে হাজার হাজার রকেট ছুড়ে হামাস। সেইসঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্ত ভেঙ্গে হাজারো হামাস যোদ্ধা তাণ্ডব চালায়। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তিন হাজারের বেশি। এরপরেই গাজায় একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল বাহিনী।

ইসরায়েলের হামলায় ইতিমধ্যে গাজায় নিহত হয়েছে দুই হাজার ৬০০ এর বেশি মানুষ। আহত হয়েছে অন্তত নয় হাজার। সেইসঙ্গে গাজায় স্থল, আকাশ ও নৌ পথে হামলার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

শিকাগোয় ফিলিস্তিনি শিশুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

প্রকাশের সময় : ০৪:৪৬:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো অঙ্গরাজ্যে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ছয় বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি-আমেরিকান শিশুকে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ছুরি হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ওই শিশুর মা।

স্থানীয় সময় শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে শিকাগো থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার (৪০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি বাড়িতে আহত অবস্থায় ওই মা ও তার ছেলে শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিশুর নাম ওয়াদিয়া আল-ফায়ুম। আল-ফায়ুমের মায়ের নাম নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ করা হয়নি।

স্থানীয় সময় গত শনিবার সকালে শিকাগো থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি বাড়িতে ওই শিশু সন্তান ও তার মাকে উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটিকে হত্যার আগে বড় সামরিক ছুরি দিয়ে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। অন্যদিকে হামলায় আহত মায়ের শরীরেও এক ডজনেরও বেশি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় বছরের ওই শিশুটিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ও তার ৩২ বছর বয়সী মাকে গুরুতরভাবে আহত করার অপরাধে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে মার্কিন পুলিশ। হামলাকারীর বিরুদ্ধে হত্যা ও ঘৃণামূলক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুলিশের অভিযোগ, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে ওই ব্যক্তি ছোট্ট শিশু ও তার মায়ের ওপর হামলা চালান।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) জানিয়েছে, নিহত শিশুর নাম ওয়াদেয়া আল-ফাইয়ুম ও তার মায়ের নাম হানান শাহিন। পরিবারটি দুই বছর ধরে একটি বাড়ির নিচতলায় বাস করত। সন্দেহভাজন ব্যক্তি তাদের বাড়িওয়ালা।

এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম জোসেফ কুবা। শনিবার সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় ৭১ বছর বয়সী এই অভিযুক্তের কপালে কাটা দাগ ছিল।

ঘটনার বিবরণে পুলিসজ জানায়, নিজেদের বেডরুমে ওই নারী এবং তার শিশু সন্তানের উপর ছুরিকাঘাত করে জোসেফ। এ সময় আহত ওই নারী ৯১১ ইমারজেন্সি নম্বরে কল বলে তার বাড়িওয়ালা তাকে একটি ছুরি দিয়ে আক্রমণ করেছে, তখন সে বাথরুমে লুকাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে হামলাকারীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যায়।

গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা জোসেফকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ‘প্রতিশোধ’ নিতে এই হামলা চালান তিনি।

বেঁচে যাওয়া হানান শাহিন জানিয়েছেন, এর আগে জোসেফের মধ্যে ইসলাম বিদ্বেষী কোনো মনোভাবে লক্ষ্য করা যায়নি। তবে শনিবার জোসেফ হঠাৎ করেই তাদের দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন। যখন হানান দরজা খুলে দেন, তখনই জোসেফ তাকে শ্বাসরোধ ও ছুরি দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করেন। এমনকি হামলাকারী সেসময় চিৎকার করে বলতে থাকেন, তোমাদের মুসলমানদের মরতে হবে।

এ ঘটনায় শোক জানিয়ে সোমবার (১৬ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ঘৃণার বশবর্তী হয়ে করা এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধের কোনো স্থান নেই। এমন আচরণ আমাদের মৌলিক মূল্যবোধ বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সব ধরনের ধর্মান্ধতা ও ঘৃণা থেকে দূরে থাকতে হবে।

গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েল অভিমুখে হাজার হাজার রকেট ছুড়ে হামাস। সেইসঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্ত ভেঙ্গে হাজারো হামাস যোদ্ধা তাণ্ডব চালায়। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তিন হাজারের বেশি। এরপরেই গাজায় একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল বাহিনী।

ইসরায়েলের হামলায় ইতিমধ্যে গাজায় নিহত হয়েছে দুই হাজার ৬০০ এর বেশি মানুষ। আহত হয়েছে অন্তত নয় হাজার। সেইসঙ্গে গাজায় স্থল, আকাশ ও নৌ পথে হামলার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।