নিজস্ব প্রতিবেদক :
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
সোমবার (২ অক্টোবর) শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ৭ অক্টোবর টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে এটি ব্যবহার করতে পারবেন যাত্রীরা। এরমধ্যে বিমানবন্দরে যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ পরিচালনায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হবে। সিস্টেম ও মেশিনারি স্থাপন করা হয়েছে, সফট ওপেনিংয়ের পর বাকি কাজ শেষ হতে আরও এক বছর লাগবে, ১ ও ২ টার্মিনাল থেকে কিভাবে তৃতীয় টার্মিনালে পরিচালনা স্থানান্তর হবে সেই কাজ চলবে।
চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং হতে যাচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বিগত ২০২০ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালে নির্মাণের চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১ হাজার ৪৭১ দিনের মধ্যে সফট ওপেনিং করার কথা ছিল। আজকে চুক্তি অনুযায়ী ১ হাজার ২৪১ দিন। আগামী ৭ অক্টোবর সফট ওপেনিং হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন সফট ওপেনিং এ উপস্থিত থাকবেন। নির্ধারিত সময়ের আগে সফট ওপেনিং হতে যাচ্ছে তৃতীয় টার্মিনালের। সফট ওপেনিংয়ের অনুষ্ঠান তৃতীয় টার্মিনালের ভেতরে অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশের মানুষ যেন উদ্বোধনের দিন গণমাধ্যমের এই টার্মিনাল দেখতে পারেন, সে জন্য আমরা ভেতরে উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি।
তৃতীয় টার্মিনালের কাজের অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল সফট ওপেনিংয়ের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করা। বর্তমানে এখন প্রায় ৮৮ শতাংশের ওপরে অর্থাৎ ৮৯ শতাংশের কাছাকাছি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি ওপেনিংয়ের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন, বডিং ব্রিজ দৃশ্যমান হয়েছে। এই টার্মিনাল থেকে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী সেবা পাবেন। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যাত্রীদের জন্য টার্মিনালটি ফুল ফাংশনাল করার। তবে আমাদের কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক আগে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। নির্ধারিত সময়ের আগে যাত্রীদের জন্য টার্মিনালটি ফুল ফাংশনাল হবে বলে আশা করছি।
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, টার্মিনাল চালু হতে এক বছর লাগলেও এর পার্কিংসহ অন্যান্য স্থাপনা ক্রমেই ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া কিছুদিনের মধ্যেই টার্মিনালের পার্কিংয়ে প্লেন রাখা হবে। এখানে এক সঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখা যাবে।
তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে যোগাযোগ বা যাতায়াতের সব মাধ্যম যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত কাওলা মেট্রোরেল স্টেশনের সঙ্গে টানেল নির্মাণ করা হবে। এখন টার্মিনাল অংশে টানেল তৈরি আছে। বিআরটি লাইনের সঙ্গেও যাতে সংযোগ দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উদ্বোধনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সফট ওপেনিংয়ের আগে আমাদের টার্মিনালের কাজ শেষ হয়েছে। লিফট, ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং, বোর্ডিং ব্রিজ বসে গেছে। এগুলো সফট ওপেনিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো। বাকি ১০ শতাংশ কাজ সফট ওপেনিংয়ের পর শুরু হবে। আপাতত আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বুঝে নেব। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরে আমরা টার্মিনালটি সবার জন্য উন্মুক্ত করতে পারব।
এম মফিদুর রহমান বলেন, ১২৪১তম দিনে সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগে আমরা সফট ওপেনিং করতে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কারণে সবকিছু সম্ভব হয়েছে। আমরা সকল মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও তদারকি করা হয়েছে।
এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, যাত্রীরা কিংবা সর্বসাধারণের জন্য আগামী বছরের শেষে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এই প্রকল্পের কারণে সড়ক ট্রেন এলিভেটেড এক্সপ্রেস ব্যবহার করে যাত্রীরা বিমানবন্দরে প্রবেশ ও বের হতে পারবেন। ১২৩০ গাড়ি পার্কিং করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, জাইকার অর্থায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। বছরে ১৬ বিলিয়ন যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা আছে এই থার্ড টার্মিনালে। ২৬টি বোর্ডিং চালু করা হবে যাত্রী সেবার জন্য। তৃতীয় টার্মিনালে লাগেজ চারটি স্তরে অটোমেটিক চেক করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বেবিচক চেয়ারম্যান ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।