নিজস্ব প্রতিবেদক :
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় স্বাধীনতার ৫২ বছরেও পশ্চিম বীরগাঁও ও পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগের একমাত্র বীরগাঁও-হাঁসকুড়ি-ধলমৈশা-বড়মোহার নামেমাত্র রাস্তা হলেও হয়নি সড়ক। পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও-হাঁসকুড়ি-ধলমৈশা-করেরগাঁও-বনোয়া গ্রামের একমাত্র চলাচলের পথ এটি। এই পথে সকল মৌসুম উপযোগী স্থায়ী সড়ক না থাকায় এখানকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে আছেন। সীমাহীন কষ্ট আর ভোগান্তি নিয়ে তারা চলাফেরা করছেন। সড়ক নির্মাণ না করায় দুটি ইউনিয়নকে আলাদা করে রাখা হয়েছে।
সড়কটি নির্মাণ হলে পূর্ব বীরগাঁও ও পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের মানুষের যেমন সড়ক যোগাযোগের মেলবন্ধন হতো। তেমনি পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের মানুষজন অতি সহজে এই সড়কটি ব্যবহার করে শান্তিগঞ্জ-রজনীগঞ্জ সড়ক হয়ে উপজেলা সদর শান্তিগঞ্জে পৌঁছতে পারতেন। সড়ক না থাকায় এখন পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের জনগণ পাগলা-বীরগাঁও সড়ক হয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে শান্তিগঞ্জে আসতে হয়।
এলাকাবাসীর দাবি পাগলা-বীরগাঁও সড়কের গুরিয়াখাল সেতুর পশ্চিমের এপ্রোচ থেকে বীরগাঁও-হাসকুড়ি গ্রামের দক্ষিণ হয়ে ধলমৈশা-করেরগাঁও-বনোয়া হয়ে শান্তিগঞ্জ-রজনীগঞ্জ সড়কের জেবিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কি.মি সড়কটি নির্মাণের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শান্তিগঞ্জ-রজনীগঞ্জ সড়কের বড়মোহা অংশের জেবিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে পূর্ব দিকে পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের করেরগাঁও (বনোয়া) ধলমৈশা গ্রামের সীমানা পর্যন্ত প্রায় ১ কি.মি জায়গায় কোন সড়ক নেই। মাটির সড়ক দেখে মনে হয় গত ৫০ বছরেও এই পথে উন্নয়নের ছিটেফোটাও পড়েনি। মাটির সড়কটি একেবারেই সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ধলমৈলা গ্রামের শুরু থেকে ধলমৈশা জামে মসজিদ পর্যন্ত কিছু অংশে সিসি ঢালাই ও কিছু অংশে ইট সলিং সড়ক রয়েছে। এরপর মসজিদের সামনে থেকে হাঁসকুড়ি গ্রামের দক্ষিণ পাশ হয়ে বীরগাঁও পশ্চিম গ্রামের দক্ষিণ হয়ে পাগলা-বীরগাঁও সড়কের বীরগাঁও গুরিয়াখাল ব্রিজের পশ্চিমের এপ্রোচ পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। এখানে বীরগাঁও পশ্চিম গ্রামের অংশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নির্মিত দুইটি ব্রিজ রয়েছে। একটি কৈয়াখালী ব্রিজ ও অন্যটি বীরগাঁও পশ্চিম গ্রামের মনর উল্লার বাড়ির সামনের অংশে উপরের বিলের ব্রিজ। এই অংশেও সড়কের কোন উন্নয়ন বা মাটি না থাকায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ব্রিজ জনগণের কোন কাজে আসছে না। পুরো পথই সমতল ভূমি হয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে শুধু দুটি নবনির্মিত ব্রিজ।
অন্যদিকে, পাগলা-বীরগাঁও সড়কের বীরগাঁও কবরস্থানের সামনের যাত্রী ছাউনী থেকে পশ্চিম দিকে ইমদাদুল হক উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে হাঁসকুড়ি পর্যন্ত আরো একটি সড়ক আছে। এই সড়কটি কিছু অংশে সিসি ঢালাই ও কিছু অংশে ইট সলিং রয়েছে। এই সড়কে গ্রামবাসী চলাচল করেন। গ্রামের মাঝখান দিয়ে যাওয়া অনেক অংশ সরু ও আঁকাবাঁকা। সড়কটি অনেক জায়গায় ভাঙা। যাতায়াত অনুপযোগী। তবে এলাকাবাসী গ্রামের দক্ষিণের সড়কটিই স্থায়ী সড়ক হিসাবে চান। সে জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এই এলাইনমেন্টে দুটি ব্রিজও নির্মাণ করেছে।
ধলমৈশা গ্রামের বাবুল মিয়া জানান, ৫০ বছরেও আমরার এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়নি। খুব কষ্ট করে যাতায়াত করি। হেমন্তে এই এলাকার মানুষ পায়ে হেঁটে ও বর্ষায় নৌকা যোগে যাতায়াত করতে হয়। আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারে না। তাই এই এলাকার শিক্ষার হারও কম। আমরা যে কি কষ্টে আছি, তা বলে বুঝানো যাবে না। একজন লোক অসুস্থ হলে, তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যায় না। পথেই মরতে হয় বা অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। সীমাহীন দুর্ভোগে আছি আমরা।
করেরগাঁও গ্রামের আবুল কাশেম জানান, আমাদের কথা কেউ চিন্তা করেন না। অকারণে হাওরের মাঝখান দিয়ে সড়ক হয়। কিন্তু আমাদের চলাচলের একমাত্র সড়কটি কেউ নির্মাণ করেন না। দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়েই চলাফেরা করছি। এই সড়কটি নির্মাণ করা হলে পুরো ইউনিয়নের লোকজন এই সড়ক দিয়ে অতি সহজে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছাতে পারবেন। আমাদেরও জীবনমান উন্নত হবে। সড়ক না থাকায় ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারে না।
বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য জুবায়েল আহমেদ জানান, বীরগাঁও-হাঁসকুড়ি-ধলমৈশা-করেরগাঁও (বনোয়া) হতে বড়মোহা জেবিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের শান্তিগঞ্জ-রজনীগঞ্জ সড়ক পর্যন্ত মাটির সড়ক থাকলেও স্থায়ী কোন সড়ক নাই। এই সড়কটি ভালোভাবে নির্মাণ করলে পুরো পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের মানুষ দ্রুত উপজেলা সদর শান্তিগঞ্জে পৌঁছাতে পারবেন। সেই সাথে আমাদের এই ৫-৬টি গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগ ছাড়াই স্কুলে ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করতে পারবে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন- এই সড়কটি যেনো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণ করে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুযোগ করে দেন।
পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাইজুল ইসলাম জানান, বীরগাঁও-হাসকুড়ি-ধলমৈশা-বড়মোহা সড়কটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি নির্মাণ করা হলে পুরো ইউনিয়নবাসীর যাতায়াতের সহজ মাধ্যম হতো। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ইউনিয়নের মানুষ অনেক কষ্ট করে যাতায়ত করছেন। আর এই ৪টি গ্রামের কোন সড়ক নাই। এই সড়কটি নির্মাণ করা হলে এই ৪টি গ্রামসহ পুরো ইউনিয়নের চিত্র বদলে যাবে। আমরা অতি সহজে উপজেলা সদর শান্তিগঞ্জ ও পার্শবর্তী ইউনিয়ন পশ্চিম বীরগাঁও ও পাথারিয়া ইউনিয়নের যাতায়াত করতে পারবো।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আল-নুর তারেক জানান, পাগলা-বীরগাঁও সড়ক থেকে শান্তিগঞ্জ-রজনীগঞ্জ পর্যন্ত এই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সড়কের অধিকাংশ অংশে মাটি না থাকায় এটি স্থায়ীভাবে করা যাচ্ছে না। ‘হাওর অঞ্চলের জীবন মান উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এই সড়কটি সাবমার্সেবল সড়ক হিসেবে ধরা আছে। কিন্তু এই এলাকার মানুষ সাবমার্সেবল সড়ক চায় না। তারা এই সড়কটি স্থায়ী সড়ক চান। তাই আমরা এই কাজটি করতে পারছি না। তবে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা টিআর-কাবিখা-কাবিটা প্রকল্প দিয়ে এই সড়কটির মাটির কাজ সম্পন্ন করতে পারলে আমরা সড়কটিকে স্থায়ীভাবে আরসিসি ঢালাই ও ব্লক দিয়ে সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করে দিতে পারবো।