নিজস্ব প্রতিবেদক :
শহীদ মিনারে প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ।
শেষশ্রদ্ধা জানানোর জন্য সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব।
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ও উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিপুলসংখ্যক মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছেন। তাঁরা তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ নেওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। বাদ জোহর জানাজার পর জুরাইন কবরস্থানে বদরুদ্দীন উমরকে তাঁর মা-বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যান বদরুদ্দীন উমর। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। সর্বশেষ তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালে ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবুল হাশিম ছিলেন বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক। পণ্ডিত পিতার সাহচর্য পেয়েছেন বদরুদ্দীন উমর। তার পরিবার ও বংশের সদস্যরা কমবেশি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিশেষত, কমিউনিস্ট পার্টিতে তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন অনেকে। জ্ঞানেগুণে সুবিস্তৃত ছিল তার পরিবার। মেধা মনন প্রজ্ঞার সঙ্গে তৈরি হয় উন্নত রুচিবোধ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করার আগেই ১৯৫৪ সালে দর্শন বিভাগে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে এমএ পাস করার পরের বছর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি এই তিন বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগেরও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা।
ষাটের দশকে প্রকাশিত তার তিনটি বই সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) তত্ত্বকালে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সময় পাকিস্তান সরকারের সাথে তার বিরোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং তিনি নিজেই ১৯৬৮ সালে অধ্যাপনার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
এই বুদ্ধিজীবী জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন বাংলা ও বাঙালি সমাজ চিন্তা নিয়ে। সমৃদ্ধ পরিবারিক রাজনৈতিক আবহে এবং দীর্ঘ পঠন-পাঠন থেকে ধীরে ধীরে তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, ইতিহাসবিদ, বুদ্ধিজীবী হিসেব আত্মপ্রকাশ করেন। এছাড়া, বদরউদ্দিন উমর বাংলাদেশের একজন শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হয়ে ওঠেন।
বদরুদ্দীন উমর বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ইতিহাস কাউন্সিল ও ফিলিপ্স পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।