Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল

সাভার উপজেলা প্রতিনিধি : 

হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রঙ বেরঙের ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে হাজারো মানুষের ঢল নামে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। দেশের সূর্য সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ঢেকে যায় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। স্মৃতিসৌধে ঢল নেমেছে সব বয়সী মানুষের। ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকাল ৫টা ৫৬ মিনিটে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও ভুটানের রাজা এবং প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর একে একে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ।

এদিন সকালে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর শহীদদের স্মরণ করে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের ৫৪ বছর পূর্তির দিনটি কর্মসূচি শুরু করেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদীতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর চৌকস দল রাষ্ট্রীয় কায়দায় সালাম জানান। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে কিছু সময় নিরবে দাঁড়িয়ে থেকে জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সর্বস্তরের জনগণের জন্য। সারিবদ্ধ ভাবে ফুল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লাখো জনতা। মুহূর্তেই জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

ফরিদপুর থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সাইফুল। তিনি বলেন, যাদের আত্মত্যাগে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাদের স্মরণ করতে স্মৃতিসৌধে এসেছি।

অন্যদিকে তানিয়া নামে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, আমরা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছি। নয় মাস যুদ্ধের পরে আমরা বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু অনেকেই জীবন দিয়েছিল এই স্বাধীনতার জন্য। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার পরিবারসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের মুখর হয়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ প্রাণ।

গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন আহসান মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি সেহরি খেয়ে শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্য রওনা হই। সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে স্মৃতিসৌধে আসি। এখানে এসে দেখি দলে দলে অসংখ্য মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আসছে। দেখে আমার ভালোই লাগলো। আমি এর আগে কখনও আসিনি। এখানে এসে গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। আমি সকাল ৮টার দিকে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।

আশুলিয়ার জামগড়া এলাকা থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন পোশাক শ্রমিক আব্দুল আউয়াল। তিনি বলেন, আমি প্রতিটা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর সেনাদের শ্রদ্ধা জানাতে আসি। এবার আমার স্ত্রী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এসে দেখি মানুষের ঢল নেমেছে।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ তার সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তিনি বলেন, আজকে আমার সহযোদ্ধাদের সম্মান দেখে মনে হচ্ছে আমরা জীবন বাজি রেখে যে যুদ্ধ করেছি তা সার্থক। যদিও আমরা স্বাধীনতার পরই সার্থকতা পেয়েছি। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মসহ বাংলাদেশ সরকার যে প্রাধান্য আমাদের দিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই চাওয়ার চেয়ে বেশি। আমার শহীদ ভাইদের যে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে তা হয়তো তারা দেখছেন না, কিন্তু তাদের হয়ে আমি যা অনুধাবন করতে পারছি তা যদি শহীদ ভাইদের কাছে পৌঁছে দিতে পারতাম তাহলে আরও শান্তি পেতাম।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এরপর সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটক। এর পরপরই নামে গণমানুষের ঢল। পুরো সৌধ এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরাসহ সাদা পোশাকেও পুলিশের নজরদারি রাখা হয়েছে সৌধ এলাকায়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল

প্রকাশের সময় : ১২:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

সাভার উপজেলা প্রতিনিধি : 

হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রঙ বেরঙের ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে হাজারো মানুষের ঢল নামে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। দেশের সূর্য সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ঢেকে যায় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। স্মৃতিসৌধে ঢল নেমেছে সব বয়সী মানুষের। ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকাল ৫টা ৫৬ মিনিটে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও ভুটানের রাজা এবং প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর একে একে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ।

এদিন সকালে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর শহীদদের স্মরণ করে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের ৫৪ বছর পূর্তির দিনটি কর্মসূচি শুরু করেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদীতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর চৌকস দল রাষ্ট্রীয় কায়দায় সালাম জানান। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে কিছু সময় নিরবে দাঁড়িয়ে থেকে জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সর্বস্তরের জনগণের জন্য। সারিবদ্ধ ভাবে ফুল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লাখো জনতা। মুহূর্তেই জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

ফরিদপুর থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সাইফুল। তিনি বলেন, যাদের আত্মত্যাগে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাদের স্মরণ করতে স্মৃতিসৌধে এসেছি।

অন্যদিকে তানিয়া নামে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, আমরা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছি। নয় মাস যুদ্ধের পরে আমরা বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু অনেকেই জীবন দিয়েছিল এই স্বাধীনতার জন্য। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার পরিবারসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের মুখর হয়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ প্রাণ।

গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন আহসান মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি সেহরি খেয়ে শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্য রওনা হই। সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে স্মৃতিসৌধে আসি। এখানে এসে দেখি দলে দলে অসংখ্য মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আসছে। দেখে আমার ভালোই লাগলো। আমি এর আগে কখনও আসিনি। এখানে এসে গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। আমি সকাল ৮টার দিকে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।

আশুলিয়ার জামগড়া এলাকা থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন পোশাক শ্রমিক আব্দুল আউয়াল। তিনি বলেন, আমি প্রতিটা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর সেনাদের শ্রদ্ধা জানাতে আসি। এবার আমার স্ত্রী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এসে দেখি মানুষের ঢল নেমেছে।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ তার সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তিনি বলেন, আজকে আমার সহযোদ্ধাদের সম্মান দেখে মনে হচ্ছে আমরা জীবন বাজি রেখে যে যুদ্ধ করেছি তা সার্থক। যদিও আমরা স্বাধীনতার পরই সার্থকতা পেয়েছি। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মসহ বাংলাদেশ সরকার যে প্রাধান্য আমাদের দিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই চাওয়ার চেয়ে বেশি। আমার শহীদ ভাইদের যে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে তা হয়তো তারা দেখছেন না, কিন্তু তাদের হয়ে আমি যা অনুধাবন করতে পারছি তা যদি শহীদ ভাইদের কাছে পৌঁছে দিতে পারতাম তাহলে আরও শান্তি পেতাম।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এরপর সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটক। এর পরপরই নামে গণমানুষের ঢল। পুরো সৌধ এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরাসহ সাদা পোশাকেও পুলিশের নজরদারি রাখা হয়েছে সৌধ এলাকায়।