Dhaka বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শহর থেকে গরিব তাড়ানোর কাজ করছে রাজউক : পরিকল্পনামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ঢাকা শহরের উন্নয়নে নগর পরিকল্পনায় রাজউক কতটা উন্নতি করেছে, তা এখন ভাবার বিষয়। তারা মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার ও পার্ক তৈরি করছে, ভাড়া দিয়ে খাচ্ছে। গরিবদের কাছ থেকে কম দামে জমি কিনে বড় লোকদের কাছে বিক্রি করছে। এর মাধ্যমে শহর থেকে গরিব তাড়ানোর কাজ করছেন তারা। গরিব মানুষেরা বাস্তুচ্যুত হয়ে এদিক-সেদিক থাকছে। রাজউক নগর উন্নয়নে কতটুকু করেছে, আর গরিব তাড়ানোর জন্য কতটুকু করেছে, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।’

শনিবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অডিটোরিয়ামে ‘ঢাকা ডেলিরিয়াম’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের যে প্রতিষ্ঠান যে উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল তারা কতটুকু তা করতে পারছে সেটা এখন ভাবার বিষয়। আমাকে পরিকল্পনামন্ত্রী বলা হয়, কিন্তু আমি পরিকল্পনার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত না। আমার আশপাশের কিছু লোক আছে তারা পরিকল্পনা করে। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও দেশের পরিকল্পনা সঠিকভাবে করতে পারছে না। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেছিলেন তার কোনোটাই বাস্তবায়ন করতে পারছে না পরিকল্পনা কমিশন। প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের নির্দেশে পরিকল্পনা করা হয়।

তিনি বলেন, সরকার এখন দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া এবং সারা দেশে বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গ্রামের মানুষও যাতে শহরের সুবিধা পায় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা যে ৮০ ভাগ জিডিপিতে অবদান রাখে, এটা আদৌও কত ভাগ বাস্তব তা ভাবার বিষয়। এখানে সুষম বণ্টন নেই। সরকার প্রধান এখন সুষম অবস্থা চাইছেন সারা দেশে। এটির জন্য গ্রাম হবে শহর সেটি ভাবা হচ্ছে। এ ঢাকা শহর উন্নয়নে ভূমি দস্যুরা অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ঢাকাকে পরিকল্পিত করতে হলে রাজধানীর বাইরে সমন্বিত পরিকল্পনা ও ঢাকাকেন্দ্রিক পরিকল্পনা একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রাম পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, মফস্বলে পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। শুধু নগরায়ন করলে হবে না, অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সুবিধা ছাড়া কোনো উন্নয়নই টেকসই হয় না। তবে এ উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন প্রয়োজন। সুন্দর নগরায়নের সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। সব জায়গায় সমান আইন থাকতে হবে। এজন্য নাগরিককে সচেতন হতে হবে।

আর্কিটেকচারের নির্বাহী পরিচালক লেখক-গবেষক আদনান জেড মোর্শেদ বলেন, শহর পরিকল্পনায় সবাইকেই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ এটি জটিল প্রক্রিয়া। তাই পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দু-চারজনকে দিয়ে মহাপরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। টেবিলে বসে নগর পরিকল্পনা করলে হবে না, বাইরে বের হতে হবে। শহর কখনো বেহেশত হবে না। সবাইকে কাজ করতে হবে। বর্তমান যুগে শহর হচ্ছে, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ভালো শহর করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নগর ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এটাকে সামাজিক দায়বদ্ধতায় আনতে হবে।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ঢাকা এখন বহু চরিত্রের সংমিশ্রণ। এ শহরটা অনেক বড় হয়ে গেছে। সময় ও চাহিদার অনুপাতে এখানে নানান কিছু তৈরি হয়েছে। তবে এখনো নারীদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়নি। পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা এতই অপ্রতুল যে, কর্মজীবী নারীরা প্রতিদিনকার জীবনে চরমভাবে ভুক্তভোগী হন। এ বিষয় নিয়ে আমাদের আরও সংবেদনশীল হয়ে কাজ করতে হবে।

আবহাওয়া

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

শহর থেকে গরিব তাড়ানোর কাজ করছে রাজউক : পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৭:১৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ঢাকা শহরের উন্নয়নে নগর পরিকল্পনায় রাজউক কতটা উন্নতি করেছে, তা এখন ভাবার বিষয়। তারা মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার ও পার্ক তৈরি করছে, ভাড়া দিয়ে খাচ্ছে। গরিবদের কাছ থেকে কম দামে জমি কিনে বড় লোকদের কাছে বিক্রি করছে। এর মাধ্যমে শহর থেকে গরিব তাড়ানোর কাজ করছেন তারা। গরিব মানুষেরা বাস্তুচ্যুত হয়ে এদিক-সেদিক থাকছে। রাজউক নগর উন্নয়নে কতটুকু করেছে, আর গরিব তাড়ানোর জন্য কতটুকু করেছে, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।’

শনিবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অডিটোরিয়ামে ‘ঢাকা ডেলিরিয়াম’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের যে প্রতিষ্ঠান যে উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল তারা কতটুকু তা করতে পারছে সেটা এখন ভাবার বিষয়। আমাকে পরিকল্পনামন্ত্রী বলা হয়, কিন্তু আমি পরিকল্পনার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত না। আমার আশপাশের কিছু লোক আছে তারা পরিকল্পনা করে। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও দেশের পরিকল্পনা সঠিকভাবে করতে পারছে না। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেছিলেন তার কোনোটাই বাস্তবায়ন করতে পারছে না পরিকল্পনা কমিশন। প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের নির্দেশে পরিকল্পনা করা হয়।

তিনি বলেন, সরকার এখন দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া এবং সারা দেশে বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গ্রামের মানুষও যাতে শহরের সুবিধা পায় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা যে ৮০ ভাগ জিডিপিতে অবদান রাখে, এটা আদৌও কত ভাগ বাস্তব তা ভাবার বিষয়। এখানে সুষম বণ্টন নেই। সরকার প্রধান এখন সুষম অবস্থা চাইছেন সারা দেশে। এটির জন্য গ্রাম হবে শহর সেটি ভাবা হচ্ছে। এ ঢাকা শহর উন্নয়নে ভূমি দস্যুরা অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ঢাকাকে পরিকল্পিত করতে হলে রাজধানীর বাইরে সমন্বিত পরিকল্পনা ও ঢাকাকেন্দ্রিক পরিকল্পনা একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রাম পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, মফস্বলে পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। শুধু নগরায়ন করলে হবে না, অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সুবিধা ছাড়া কোনো উন্নয়নই টেকসই হয় না। তবে এ উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন প্রয়োজন। সুন্দর নগরায়নের সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। সব জায়গায় সমান আইন থাকতে হবে। এজন্য নাগরিককে সচেতন হতে হবে।

আর্কিটেকচারের নির্বাহী পরিচালক লেখক-গবেষক আদনান জেড মোর্শেদ বলেন, শহর পরিকল্পনায় সবাইকেই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ এটি জটিল প্রক্রিয়া। তাই পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দু-চারজনকে দিয়ে মহাপরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। টেবিলে বসে নগর পরিকল্পনা করলে হবে না, বাইরে বের হতে হবে। শহর কখনো বেহেশত হবে না। সবাইকে কাজ করতে হবে। বর্তমান যুগে শহর হচ্ছে, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ভালো শহর করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নগর ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এটাকে সামাজিক দায়বদ্ধতায় আনতে হবে।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ঢাকা এখন বহু চরিত্রের সংমিশ্রণ। এ শহরটা অনেক বড় হয়ে গেছে। সময় ও চাহিদার অনুপাতে এখানে নানান কিছু তৈরি হয়েছে। তবে এখনো নারীদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়নি। পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা এতই অপ্রতুল যে, কর্মজীবী নারীরা প্রতিদিনকার জীবনে চরমভাবে ভুক্তভোগী হন। এ বিষয় নিয়ে আমাদের আরও সংবেদনশীল হয়ে কাজ করতে হবে।