আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীতে এক ড্রোন হামলায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান সালেহ আল-আরৌরি নিহত হয়েছেন। এ হামলায় হামাসের সামরিক শাখা কাশেম ব্রিগেডের দুইজন কমান্ডারও নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) এই হামলা চালানো হয়। লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী পরিচালিত আল-মায়াদিন টেলিভিশনের খবরে এ দাবি করা হয়েছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহর দাহিয়ে তাদের কার্যালয়ে বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উপপ্রধান সালেহ আল-আরোউরিসহ ওই তিনজন রয়েছেন।
সালেহ আল-আরোউরি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপপ্রধান। তিনি এই গোষ্ঠীর সামরিক কর্মকাণ্ডেও গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়ে। এক বিবৃতিতে ইসরাইলের হামলাকে কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে তিনি বলেছেন, ইসরাইল লেবাননের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে এবং চলমান সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরান। লেবানন ইসরাইলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ করার ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরাইলের সেনাবাহিনী এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তার দেশের বাহিনীগুলো প্রস্তুত রয়েছে।
হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, উপপ্রধান সালেহ আল-আরুরির রক্ত বৃথা যাবে না।
তার মৃত্যু নিয়ে ইসমাইল হানিয়া বলেন, হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে মূল্য দিতে হবে। তিনি বলেন, শহীদ আরুরি ও তার সহকর্মীদের তাজা রক্ত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের হাজার হাজার শহীদের রক্তের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এই রক্ত বৃথা যাবে না।
হানিয়া বলেন, যে আন্দোলন তার জাতিকে নিজের প্রতিষ্ঠাতা ও কমান্ডারদের শাহাদাতকে উপহার হিসেবে পেশ করে সেই আন্দোলন কখনও পরাজিত হয় না। হামাসের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কেবল হামাসের শক্তি, স্থিতিস্থাপকতা এবং অটল সংকল্পকে আরো শক্তিশালী করবে।
কে ছিলেন সালেহ আল-আরৌরি?
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপপ্রধান এবং সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ১৯৬৬ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ইসরায়েলি কারাগারে ১৫ বছর কাটানোর পর লেবাননে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসনে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি হামাস এবং গাজায় গোষ্ঠীটির যুদ্ধের কৌশল বিষয়ে একজন মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
গত মাসে তিনি আল জাজিরাকে বলেছিলেন, গাজায় ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ না হলে হামাস বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে না।
তিনি বলেছিলেন, প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে। কোনও ভয় বা উদ্বেগ নেই। প্রতিরোধ জয়ী হবে।
অক্টোবরে রামাল্লার কাছে তার বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাকে একজন বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে। তার সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল মার্কিন সরকার।