স্পোর্টস ডেস্ক :
২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭-০ তে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর, আজ ঘরের মাঠে র্যাঙ্কিংয়ে ১০৪ নম্বরে থাকা লেবাননের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। দুই দলের র্যাঙ্কিংয়ে বিস্তর ব্যবধান থাকলেও লেবাননকে নিজেদের মাঠে বাংলাদেশের ধরাশায়ী করার পরিকল্পনা ছিল। যদিও দলের দুই নির্ভরযোগ্য ফুটবলার রাকিব হোসেন ও সাদ উদ্দিন না থাকায় দলের শক্তি কিছুটা খর্ব হয়েছে। তারপরেও আজ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় পিছিয়ে পড়েও শক্তিশালী লেবাননকে শেখ মোরসালিনের দুর্দান্ত এক গোলে রুখে দিয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে বিশাল পরাজয়ের পর ৭৯ ধাপ এগিয়ে থাকা লেবাননের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম পয়েন্ট অর্জন করল বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচে একাদশে থাকা সাদ উদ্দিন ও রাকিব হোসেন সাসপেনশনের জন্য এই ম্যাচে নিষিদ্ধ। সাসপেনশনের বাইরে গত ম্যাচে একাদশে খেলা হাসান মুরাদ এবং মজিবুর রহমান জনিও ছিলেন না আজ। তরুণ ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন মদ কান্ডে ক্লাব ও জাতীয় দলে নিষিদ্ধ ছিলেন। আর্থিক জরিমানায় ছাড় পাওয়ায় তার আবার জাতীয় দলের দরজা খুলেছে। গত ম্যাচে খেলেছিলেন বদলি হয়ে। রাকিবের অনুপস্থিতিতে আজ সুযোগ পেয়েছেন শুরুর একাদশেই। ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিনের জায়গায় খেলেন ইসা ফয়সাল।
২০১১ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ঢাকায় লেবাননকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। লেবাননের ফিফা র্যাংকিং তখন ১৫৯। বাংলাদেশের ১৪৭। ১২ বছর পর র্যাংকিংয়ে এখন বাংলাদেশের চেয়ে ৭৯ ধাপ এগিয়ে লেবানন। শক্তিতে তারাই এগিয়ে। ফলে লেবাননের জয়ই ছিল এই ম্যাচে স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু আরেকটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফেবারিট হয়েও বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগ করে মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের শুরুতেই গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল লেবানন। তবে তাদের সেই প্রচেষ্টা গোলে রূপান্তরিত হয়নি। ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে লেবানিজদের দূরপাল্লার কয়েকটি শট বাংলাদেশের রক্ষণ কাঁপায়। পাল্টা জবাব আসে স্বাগতিকদের কাছ থেকেও। বল নিজেদের পায়ে রেখে জামালদের লেবাননকে চাপে রাখার চেষ্টাও কাজে এলো ভালোভাবেই।
গোলমুখে বাংলাদেশের প্রথম আক্রমণ ম্যাচের ২৪তম মিনিটে। অধিনায়ক জামালের কর্নার থেকে বিশ্বনাথ ঘোষের হেড গ্লাভসে নেন লেবানিজ গোলরক্ষক মোস্তফা মাতার। পরের মিনিটে আরেকটি গোছানো আক্রমণ স্বাগতিকদের। এবার বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মোরসালিন, শট নেওয়ার সুযোগ না পেয়ে সোহেল রানার (জুনিয়র) উদ্দেশে বল বাড়ালেও লেবাননের ডিফেন্ডার মোহাম্মদ এল হায়েক এসে ক্লিয়ার করে দেন।
৩৩তম মিনিটে আবারও বাংলাদেশের আক্রমণ। এবার ডান প্রান্ত থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের নিচু ক্রস, গোল মুখে দাঁড়িয়ে মোরসালিন। ফাহিমের শট তার পায়ে যাওয়ার আগেই সেই শট ফেরান কাসেম আল জেইন। প্রথমার্ধের শেষদিকে আরেকটি গোছাল আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। ডান দিক থেকে ফয়সাল আহমেদের ক্রস জটলার মধ্য থেকে গোলমুখে শট নিয়েছিলেন মোরসালিন, কিন্তু তা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
গোলশূন্য প্রথমোর্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ায় দুই দলই। শুরুতেই নিজেদের গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে বদলি করে মেহেদি হাসান শ্রাবণকে নামাতে হয়েছে বাংলাদেশের কোচ কাবরেরাকে। প্রথমার্ধেই অসুস্থ অনুভব করছিলেন তিনি। জাতীয় দলের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ভুল প্রায় করেই বসেছিলেন শ্রাবণ। ৪৮ মিনিটে হাসান মাতুকের ফ্রি-কিকে সামনে এগিয়ে এসে ফিস্ট করার চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ গোলরক্ষকের। ফাঁকা পোস্টে কাসেম আল জেইনের হেডে বল অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে।
৫২ মিনিটে মাঠে অনাহুত দর্শকের হানা। বাংলাদেশের পতাকা কাঁধে চাপিয়ে সোহেল রানাকে জড়িয়ে ধরলেন এক দর্শক। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা এসে সরান তাকে। এই অর্ধে বাংলাদেশের প্রথম আক্রমণ ৫৯ মিনিটে। প্রতি আক্রমণে লেবাননের বক্সে বিশ্বনাথের জোরের সঙ্গে নেওয়া শট পায়ে গলাতে পারেননি মোরসালিন।
পুরো ম্যাচে দাপুটে খেলা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ ছুটে যায় ৬৭ মিনিটে। গোলরক্ষক শ্রাবণের মস্ত ভুলে এগিয়ে যায় লেবানন। বদলি হিসেবে মাঠে এসে চার মিনিটের মধ্যে লেবাননকে এগিয়ে নেন মাজেদ ওসমান। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা লেবাননের দু’টি প্রচেষ্টা রক্ষণে বাধা পেলে শ্রাবণ এগিয়ে এসে বল আয়ত্তে নিতে গিয়েছিলেন। বিশ্বনাথ হেডে বিপদমুক্ত করতে যান, তাই বলটা আয়ত্তে নিতে পারেননি শ্রাবণ। উল্টো তার বুকে লেগে বল চলে যায় ফাঁকায় দাঁড়ানো মাজেদের কাছে। ঠাণ্ডা মাথায় ফাঁকা পোস্টে বল জমা করেন এই বদলি স্ট্রাইকার।
পিছিয়ে পড়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে চোখ ধাঁধানো গোলে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান মোরসালিন। মাঝমাঠ থেকে লেবাননের এক খেলোয়াড়ের ব্যাকপাসে বল পান মোরসালিন। একাই চলে যান বক্সের সামনে। ডি-বক্সে সামনের জায়গাটা মোরসালিনের বেশ পছন্দের, সেখান থেকেই নিলেন ডান পায়ে বুলেট গতির এক শট। বাঁকানো শটে বল লেবানন গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জড়ালো বাঁ পোস্ট দিয়ে জালে। মাত্র ৯ ম্যাচে চতুর্থ আন্তর্জাতিক গোল হয়ে গেল মোরসালিনের। গোলের পর উদ্দাম উদযাপনে দেখলেন হলুদ কার্ডও।
৮৯ মিনিটে দারুণ এক গোলের সুযোগ মিস করেন মোরসালিন। রফিকের ক্রস পেয়ে যান ফাঁকায় থাকা মোরসালিন। গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি তিনি। তার শট সাইড নেট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। শেষ দিকে বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করলেও গোলের দেখা মেলেনি লেবাননের। এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়লো বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে কিংস অ্যারেনায় অপরাজিত থাকার রেকর্ড আরও লম্বা হলো বাংলাদেশের।
এই ড্রয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুই ম্যাচে ১ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। লেবানন আগের ম্যাচে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ড্র করে। দুই ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ২। তবে ঢাকায় জয়ের আশা নিয়েই এসেছিল লেবানন। সেই জয় না পাওয়া তাঁদের কাছে হতাশাই। যদিও জেতার মতো ফুটবল খেলতে পারেনি সফরকারীরা। লেবাননের ক্রোয়েশিয়ান কোচ বলেছিলেন ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে হারানো কঠিন হবে। সত্যিই তাই হলো।
হয়তো কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়েছে তাদের। আর বাংলাদেশ মাঝমাঠ খেলা তৈরি করেছে। আক্রমণে মোরছালিন, ফাহিমরা বেশ ভুগিয়েছেন লেবানন রক্ষণকে। জিতলে পারলে ভালো হতো। তবে এই ড্র বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। আগামী ২১ মার্চে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ঢাকাতেই পরের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।