Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লিবিয়ার বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়াল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

লিবিয়ার দেরনার উপকূলে ভেসে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্টের মতে, গত রবিবার এবং সোমবার পূর্ব লিবিয়ায় বন্যায় এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড় ড্যানিয়েলের আঘাতে দেরনায় বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে পুরো শহরটি ভেসে যায় এবং হাজার হাজার মানুষও সমুদ্রে ভেসে যায়।

আন্তর্জাতিক এই সাহায্য গোষ্ঠীর সেক্রেটারি-জেনারেল মারি এল-ড্রেস ফোনে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, ভূমধ্যসাগরীয় এই শহরে আরো ১০ হাজার ১০০ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। লিবিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এর আগে দেরনায় মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার বলেছিল। এছাড়া ঝড় ড্যানিয়েলের আঘাতে দেশটির অন্য অঞ্চলে প্রায় ১৭০ জন নিহত হয়েছেন।

দেরনার মেয়র বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। সংখ্যাটি ২০ হাজার হতে পারে। দেরনায় ছুটে আসা পানিকে বিশাল সুনামির মতো দেখতে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি, জনসাধারণের অবকাঠামোর দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ এবং দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রশাসনের মধ্যে বিভক্ত হওয়ায় বছরের পর বছর দেশটিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই ড্যানিয়েলের মতো ঝড় মোকাবেলা করতে অপ্রস্তুত।

লিবিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সিনিয়র বিশ্লেষক ক্লডিয়া গাজিনি বলেন, দেশে অর্থ তহবিল বরাদ্দ নিয়ে প্রচুর ঝামেলা আছে। গত তিন বছর ধরে উন্নয়নের জন্য কোনো বাজেট নেই এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের জন্যও কোনো বরাদ্দ নেই।

তিনি আরো বলেন, দুটি সরকারের কোনটিই বড় পরিকল্পনা করার জন্য উপযুক্ত নয়। যা অবকাঠামোতে উন্নত করবে।

লিবিয়া রাজনৈতিকভাবে পূর্ব এবং পশ্চিম দুই ভাগে বিভক্ত। ২০১১ সালের বিদ্রোহে দীর্ঘ সময়ের শাসক গাদ্দাফির পতন এবং পরে নিহত হওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের অভাব রয়েছে।

দেরনা শহরে বিপর্যয়ের পেছনে দুর্বল বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন লিবিয়া বিশেষজ্ঞ আয়া বুরওয়েইলা। তিনি বলেন, নিম্নমানের অবকাঠামো অনেক দিন ধরেই লিবিয়ার একটি বড় সমস্যা। পূর্ব লিবিয়ায় যথাযথ বিনিয়োগ হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বাঁধ দুটি ভেঙে গেছে।

দেরনার ডেপুটি মেয়র আহমেদ মাদরাউদও বলেছেন, ২০০২ সাল থেকে বাঁধগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। লিবিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক ছিল মুয়াম্মার গাদ্দাফির সরকার এবং ২০১১ সালে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে তাকে উৎখাত করা হয়। এরপর যে প্রশাসনগুলোই এসেছে তারা ব্যর্থ হয়েছে জনগনকে নিরাপত্তা প্রদানে। তারা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেনি। গত বছর ওমর আল-মুখতার ইউনিভার্সিটির গবেষকদের একটি গবেষণাপত্র সতর্ক করেছিল, যে দুটি বাঁধের প্রতি জরুরি মনোযোগ প্রয়োজন। বন্যা ঝুঁকির উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার পর বাসিন্দারা জানান, শহরের বাইরে দুটি বাঁধ ধসে পড়লে তারা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। বন্যার পানি ওয়াদি ডেরনা উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পরে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে ভবনগুলো ভেঙে পড়েছে এবং লোকজন সমুদ্রে ভেসে গেছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) প্রধান পেটেরি তালাস সাংবাদিকদের বলেন, যদি আবহাওয়া রক্ষণাবেক্ষণ স্বাভাবিক থাকতো, তাহলে জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সবাইকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হতো।

এর আগে, সবশেষ দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ডেরনায় মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০০ বলে জানিয়েছিল। বনযার পাশাপাশি ঝড়ে দেশটির অন্যান্য স্থানেও প্রায় ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এপির প্রতিবেদন বলছে, ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সংঘাতে জর্জরিত তেল-সমৃদ্ধ দেশটিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে বন্যা শুরু হয়। এতে অনেক পরিবার ভেসে গেছে।

এপির প্রতিবেদন বলছে, অস্বাভাবিক শক্তিশালী একটি ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় পূর্ব লিবিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মারাত্মক বন্যা সৃষ্টি করে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডেরনা শহর, যেখানে দুটি বাঁধ ভেঙে ভেসে যায় বহু মানুষ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজের সুফল পাচ্ছে না সাত গ্রামের মানুষ

লিবিয়ার বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়াল

প্রকাশের সময় : ১২:০৬:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

লিবিয়ার দেরনার উপকূলে ভেসে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্টের মতে, গত রবিবার এবং সোমবার পূর্ব লিবিয়ায় বন্যায় এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড় ড্যানিয়েলের আঘাতে দেরনায় বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে পুরো শহরটি ভেসে যায় এবং হাজার হাজার মানুষও সমুদ্রে ভেসে যায়।

আন্তর্জাতিক এই সাহায্য গোষ্ঠীর সেক্রেটারি-জেনারেল মারি এল-ড্রেস ফোনে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, ভূমধ্যসাগরীয় এই শহরে আরো ১০ হাজার ১০০ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। লিবিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এর আগে দেরনায় মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার বলেছিল। এছাড়া ঝড় ড্যানিয়েলের আঘাতে দেশটির অন্য অঞ্চলে প্রায় ১৭০ জন নিহত হয়েছেন।

দেরনার মেয়র বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। সংখ্যাটি ২০ হাজার হতে পারে। দেরনায় ছুটে আসা পানিকে বিশাল সুনামির মতো দেখতে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি, জনসাধারণের অবকাঠামোর দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ এবং দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রশাসনের মধ্যে বিভক্ত হওয়ায় বছরের পর বছর দেশটিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই ড্যানিয়েলের মতো ঝড় মোকাবেলা করতে অপ্রস্তুত।

লিবিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সিনিয়র বিশ্লেষক ক্লডিয়া গাজিনি বলেন, দেশে অর্থ তহবিল বরাদ্দ নিয়ে প্রচুর ঝামেলা আছে। গত তিন বছর ধরে উন্নয়নের জন্য কোনো বাজেট নেই এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের জন্যও কোনো বরাদ্দ নেই।

তিনি আরো বলেন, দুটি সরকারের কোনটিই বড় পরিকল্পনা করার জন্য উপযুক্ত নয়। যা অবকাঠামোতে উন্নত করবে।

লিবিয়া রাজনৈতিকভাবে পূর্ব এবং পশ্চিম দুই ভাগে বিভক্ত। ২০১১ সালের বিদ্রোহে দীর্ঘ সময়ের শাসক গাদ্দাফির পতন এবং পরে নিহত হওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের অভাব রয়েছে।

দেরনা শহরে বিপর্যয়ের পেছনে দুর্বল বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন লিবিয়া বিশেষজ্ঞ আয়া বুরওয়েইলা। তিনি বলেন, নিম্নমানের অবকাঠামো অনেক দিন ধরেই লিবিয়ার একটি বড় সমস্যা। পূর্ব লিবিয়ায় যথাযথ বিনিয়োগ হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বাঁধ দুটি ভেঙে গেছে।

দেরনার ডেপুটি মেয়র আহমেদ মাদরাউদও বলেছেন, ২০০২ সাল থেকে বাঁধগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। লিবিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক ছিল মুয়াম্মার গাদ্দাফির সরকার এবং ২০১১ সালে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে তাকে উৎখাত করা হয়। এরপর যে প্রশাসনগুলোই এসেছে তারা ব্যর্থ হয়েছে জনগনকে নিরাপত্তা প্রদানে। তারা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেনি। গত বছর ওমর আল-মুখতার ইউনিভার্সিটির গবেষকদের একটি গবেষণাপত্র সতর্ক করেছিল, যে দুটি বাঁধের প্রতি জরুরি মনোযোগ প্রয়োজন। বন্যা ঝুঁকির উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার পর বাসিন্দারা জানান, শহরের বাইরে দুটি বাঁধ ধসে পড়লে তারা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। বন্যার পানি ওয়াদি ডেরনা উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পরে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে ভবনগুলো ভেঙে পড়েছে এবং লোকজন সমুদ্রে ভেসে গেছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) প্রধান পেটেরি তালাস সাংবাদিকদের বলেন, যদি আবহাওয়া রক্ষণাবেক্ষণ স্বাভাবিক থাকতো, তাহলে জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সবাইকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হতো।

এর আগে, সবশেষ দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ডেরনায় মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০০ বলে জানিয়েছিল। বনযার পাশাপাশি ঝড়ে দেশটির অন্যান্য স্থানেও প্রায় ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এপির প্রতিবেদন বলছে, ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সংঘাতে জর্জরিত তেল-সমৃদ্ধ দেশটিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে বন্যা শুরু হয়। এতে অনেক পরিবার ভেসে গেছে।

এপির প্রতিবেদন বলছে, অস্বাভাবিক শক্তিশালী একটি ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় পূর্ব লিবিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মারাত্মক বন্যা সৃষ্টি করে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডেরনা শহর, যেখানে দুটি বাঁধ ভেঙে ভেসে যায় বহু মানুষ।