Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লালমনিরহাট সেতুর অভাবে দুর্ভোগ আট গ্রামের মানুষের

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাটে দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকার লোকজন। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিরা এই দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সেতু আর নির্মাণ হয়নি। এ অবস্থায় বর্ষাকালে কলাগাছের ভেলা, আর কাঠের নৌকা এবং অন্য সময় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয় লোকজনকে। নদের দুই পারের সেতুর অভাবে আট গ্রামের ২০ হাজার মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

রত্নাই নদের পূর্ব দিকে কুলাঘাটের শিবের কুটি, দক্ষিণ শিবের কুটি, বনগ্রাম ও বোয়ালমারী, পাশের ইউনিয়ন মোগলহাটের ভাটিবাড়ি ও কোদাল খাতা এবং পশ্চিম দিকে কুলাঘাটের ধাইরখাতা ও লালমনিরহাট পৌরসভার উত্তর সাপটানা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রত্নাই নদের পূর্ব দিকের গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী নদের পশ্চিম দিকের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। আবার নদের পশ্চিম দিকের অনেক শিক্ষার্থী পূর্ব দিকের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে যায়। নদের পশ্চিম দিকের মানুষ চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনে নদের পূর্ব দিকের শিবের কুটি কমিউনিটি ক্লিনিকে যেতে হলে নৌকা কিংবা বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়। আর পূর্ব দিকের গ্রামগুলোর অসুস্থ রোগীদের সুচিকিৎসার দরকার হলে লালমনিরহাট জেলা শহরের সাপটানা রোডের সদর হাসপাতালসহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু রত্নাই নদের ওপর পাকা সেতু না থাকায় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোনো যানবাহন নদের পূর্ব দিকের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করতে পারে না।

কুলাঘাটের শিবের কুটি গ্রামের বাসিন্দা ও মোগলহাট ইউনিয়নের কোদাল খাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারিকুল ইসলাম (৪৯) বলেন, রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাটের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাই। ২০১০ সালে বর্ষাকালে নৌকায় পার হওয়ার সময়ে নদে মোটরসাইকেলসহ পড়ে গিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করেছিলেন। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। ওই দিনের কথা মনে হলে এখনো শিউরে উঠি। কবে যে সরেয়ারতল ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে?

একইভাবে চলাচলের ভোগান্তির কথা জানান পশ্চিম বড়ুয়া রোটারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনা লায়লা বেগম। তিনি বলেন, ‘লালমনিরহাট শহর, বিভাগীয় শহর রংপুর ও রাজধানী ঢাকায় যেতে হয়। তবে যেখানেই যাই না কেন কিংবা গ্রামের বাড়িতে আসা–যাওয়া করতে হলে রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাট পার হতে হয়। ওই ঘাট পার হতে সব সময় ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। এ তো উন্নয়নের গল্প শুনি। সরেয়ারতল ঘাটের সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছাড়া কাজের কাজ কিছুই তো দেখি না।’

শিবের কুটি গ্রামের বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা এবার কুলাঘাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে সরেয়ারতল ঘাটের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে লালমনিরহাট শহরে যেতে হচ্ছে। রাজিয়া জানায়, এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হলে এলাকার সবাই উপকৃত হতো।

কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বলেন, আমি এক যুগের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। লালমনিরহাট-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্যরা রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ডিও লেটার দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। এলজিইডির পক্ষ থেকে চিঠি লেখালেখি আর নদের সরেয়ারতল ঘাটে নানা মাপজোখ হয়। দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি সেতু নির্মাণ করা হবে।

এ সম্পর্কে এলজিইডির লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের ইসলাম বলেন, কুলাঘাটের রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণ করার জন্য ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর “পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ” প্রকল্পের পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছি। প্রস্তাবিত পাকা সেতুর দৈর্ঘ্য ১২৫ মিটার এবং সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় প্রায় তিন কোটি টাকা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

লালমনিরহাট সেতুর অভাবে দুর্ভোগ আট গ্রামের মানুষের

প্রকাশের সময় : ০৪:৩১:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাটে দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকার লোকজন। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিরা এই দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সেতু আর নির্মাণ হয়নি। এ অবস্থায় বর্ষাকালে কলাগাছের ভেলা, আর কাঠের নৌকা এবং অন্য সময় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয় লোকজনকে। নদের দুই পারের সেতুর অভাবে আট গ্রামের ২০ হাজার মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

রত্নাই নদের পূর্ব দিকে কুলাঘাটের শিবের কুটি, দক্ষিণ শিবের কুটি, বনগ্রাম ও বোয়ালমারী, পাশের ইউনিয়ন মোগলহাটের ভাটিবাড়ি ও কোদাল খাতা এবং পশ্চিম দিকে কুলাঘাটের ধাইরখাতা ও লালমনিরহাট পৌরসভার উত্তর সাপটানা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রত্নাই নদের পূর্ব দিকের গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী নদের পশ্চিম দিকের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। আবার নদের পশ্চিম দিকের অনেক শিক্ষার্থী পূর্ব দিকের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে যায়। নদের পশ্চিম দিকের মানুষ চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনে নদের পূর্ব দিকের শিবের কুটি কমিউনিটি ক্লিনিকে যেতে হলে নৌকা কিংবা বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়। আর পূর্ব দিকের গ্রামগুলোর অসুস্থ রোগীদের সুচিকিৎসার দরকার হলে লালমনিরহাট জেলা শহরের সাপটানা রোডের সদর হাসপাতালসহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু রত্নাই নদের ওপর পাকা সেতু না থাকায় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোনো যানবাহন নদের পূর্ব দিকের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করতে পারে না।

কুলাঘাটের শিবের কুটি গ্রামের বাসিন্দা ও মোগলহাট ইউনিয়নের কোদাল খাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারিকুল ইসলাম (৪৯) বলেন, রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাটের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাই। ২০১০ সালে বর্ষাকালে নৌকায় পার হওয়ার সময়ে নদে মোটরসাইকেলসহ পড়ে গিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করেছিলেন। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। ওই দিনের কথা মনে হলে এখনো শিউরে উঠি। কবে যে সরেয়ারতল ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে?

একইভাবে চলাচলের ভোগান্তির কথা জানান পশ্চিম বড়ুয়া রোটারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনা লায়লা বেগম। তিনি বলেন, ‘লালমনিরহাট শহর, বিভাগীয় শহর রংপুর ও রাজধানী ঢাকায় যেতে হয়। তবে যেখানেই যাই না কেন কিংবা গ্রামের বাড়িতে আসা–যাওয়া করতে হলে রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাট পার হতে হয়। ওই ঘাট পার হতে সব সময় ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। এ তো উন্নয়নের গল্প শুনি। সরেয়ারতল ঘাটের সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছাড়া কাজের কাজ কিছুই তো দেখি না।’

শিবের কুটি গ্রামের বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা এবার কুলাঘাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে সরেয়ারতল ঘাটের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে লালমনিরহাট শহরে যেতে হচ্ছে। রাজিয়া জানায়, এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হলে এলাকার সবাই উপকৃত হতো।

কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বলেন, আমি এক যুগের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। লালমনিরহাট-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্যরা রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ডিও লেটার দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। এলজিইডির পক্ষ থেকে চিঠি লেখালেখি আর নদের সরেয়ারতল ঘাটে নানা মাপজোখ হয়। দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি সেতু নির্মাণ করা হবে।

এ সম্পর্কে এলজিইডির লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের ইসলাম বলেন, কুলাঘাটের রত্নাই নদের সরেয়ারতল ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণ করার জন্য ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর “পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ” প্রকল্পের পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছি। প্রস্তাবিত পাকা সেতুর দৈর্ঘ্য ১২৫ মিটার এবং সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় প্রায় তিন কোটি টাকা।