নিজস্ব প্রতিবেদক :
লাগামহীন গতিতে ছুটছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। তেল, চিনি, আদা, রসুন, কাঁচা মরিচসহ কিছুইতেই স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের। এদিকে আদা, রসুন এবং কাঁচা মরিচের পর নতুন করে আগুন লেগেছে আলু-পেঁয়াজের বাজারেও। সপ্তাহঘুরেই কেজি প্রতি ৩০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। অপরদিকে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
১০ থেকে ২০ টাকা দাম কমে বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৭০ থেকে ৯০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ২০০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, নতুন আলু ১৪০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ৫০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা এবং গাজর ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে লাল শাকের আঁটি ২০ টাকা, লাউ শাক ৩০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে সব ধরনের মাছও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চাষের কই ৩০০ টাকা, পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, গুড়া মাছ (কাচকি) প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা, বাইম মাছ ছোটগুলো প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, মাঝারি শোল মাছ প্রতি কেজি ১২৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ১১০০ টাকা, ছোট চিংড়ি প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, আইড় মাছ প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং রূপচাঁদা প্রতি কেজি সাইজ ভেদে ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছ।
লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়। আর দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকা।
এছাড়া বয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা, সোনালী মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, কক মুরগি ৩৫০ টাকা। বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও সপ্তাহঘুরে তা এখন ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আলুর বাজারেও আগুন! খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে কিছু ইতিবাচক প্রভাব থাকার কথা চিনির দামে। কারণ গত বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে অর্ধেকে করেছে। তবে এরপর বাজারে পণ্যটির দাম আরও বেড়েছে। বাজারে এখন খোলা চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেশি।
চিনির দাম কমেনি বরং আগের থেকে ৫ টাকা কেজিতে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। শেষ মঙ্গলবার পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তায় চিনির দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এছাড়া পাইকারি পর্যায়ে প্যাকেট চিনির কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। এতদিন আমরা কেজি ১৩১ টাকায় কিনে ১৩৫ টাকায় চিনি বিক্রি করতাম। এখন কিনতে হয় ১৩৫ টাকা দরে। বিক্রি ১৪০ টাকা।
গত রোববার থেকে ভারত পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মুল্য বেঁধে দেওয়ার পর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। এরমধ্যে পাড়া-মহল্লায় কিছু দোকানে ১৫০ টাকাও বিক্রি করতে দেখা গেছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।
আজিজুল নামের একজন ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন পুরাই অসাধু। পেঁয়াজ আমদানি করতে বেশি টাকা লাগবে সেই খবর শুনেই তারা দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু আলু আমদানি হচ্ছে সেটা কোনো প্রভাব নেই। চিনির শুল্ক কমেছে সেটার কোনো খোঁজ নেই।
তিনি বলেন, আসলে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বিক্রেতারা সঙ্গে সঙ্গে সেটি কার্যকর করেন। কিন্তু কমলে সে দাম কার্যকর করতে তাদের গড়িমসির শেষ থাকে না।
বাজার করতে আসা রাণু বেগম বলেন, সবকিছুরই দাম বাড়ছে। আমরা কিছুই কিনতে পারছি না। সবকিছুর দাম বাড়ল, আমাদের আয় তো বাড়েনি। আমার স্বামী আগে যেমন ৪০০ টাকা রোজ আয় করতো এখনও তাই করে। অনেক জিনিস প্রয়োজন থাকার পরও কিনতে পারি না। সরকার প্রধানের কাছে অনুরোধ থাকবে জিনিসপত্রের দাম কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।