স্পোর্টস ডেস্ক :
নিউইয়র্কে আশা জাগিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের হার চার রানে। শেষ ওভারে ১১ রান দরকার ছিল। সেটা তুলতে পারেনি টাইগাররা। তবে বাংলাদেশের জন্য ১১৪ রানের লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন কিছু ছিল না। কিন্তু ব্যাটারদের দায়িত্বহীনতার খেসারত দিতে হয়েছে দলকে। বিশেষ করে অভিজ্ঞ সাকিব অভিজ্ঞতার মূল্য দিতে পারছেন না। দলের কঠিন মুহূর্তে হাল ধরতে না পারায় সমালোচিত হচ্ছেন এই অলরাউন্ডার। ভারতীয় সাবেক তারকা শেবাগের মতে সাকিবের এখন অবসর নেওয়া উচিত।
সাকিব শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছিলেন উইকেটশূন্য, রান ৮। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ব্যাটিং-বোলিংয়ে একেবারেই ছন্নছাড়া। কাল মাত্র এক ওভার বোলিং করেছেন। খুব বেশি খরুচে বোলিং না করলেও বাকি সময়টায় মাঠে থেকে আর বল হাতে নেননি। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বল থেকেই পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আনরিখ নর্কিয়ের পরিকল্পিত ফাঁদে পড়ে বল আকাশে তুলে বিদায় নেন। ৪ বলে ৩ রান করেন, তার উইকেটের পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
অথচ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তিনি। এখন পর্যন্ত সবকটি বিশ্বকাপেই খেলেছেন। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচও খেলার অভিজ্ঞতা বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের। বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগও খেলে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাও তারই বেশি। তারপরও অভিজ্ঞতার কোনও মূল্যই দিতে পারছেন না সাকিব। নিজের উইকেটের মূল্য না বুঝতে পেরে বারবারই দলকে বিপদে ফেলছেন তিনি। বাংলাদেশর বহু ম্যাচ জয়ের নায়ক এখন হয়ে উঠছেন বহু ম্যাচ হারের খলনায়ক!
ক্রিকবাজের পডকাস্টে সাকিবের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ।
শেবাগ বলেছেন, গত বিশ্বকাপেই আমার এমন মনে হয়েছে, ওকে আর টি-টোয়েন্টিতে খেলানো উচিত নয়। অনেক আগেই ওর অবসর নেয়ার সময় হয়েছে। তুমি এত সিনিয়র ক্রিকেটার, নিজে অধিনায়ক ছিলে, তোমার পরিসংখ্যানের অবস্থা এমন, সাকিবের নিজেরই তো লজ্জা পাওয়া উচিত। নিজেরই বলা উচিত, আমি এই সংস্করণ থেকে অবসর নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমি তো দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বিশ্বকাপ, যেটা শ্রীলঙ্কায় হয়েছিল। তখন ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল, আফগানিস্তানে একটা পেসার ছিল, স্বাচ্ছন্দ্যে আমি ওদের মারতে পারছি, তখনই নির্বাচকদের বলে দিয়েছিলাম, আমাকে যেন টি-টোয়েন্টি দলে রাখা না হয়। আমি ওয়ানডে ও টেস্ট খেলবো। দিন শেষে নিজে তো বোঝা যায় আমার ব্যাটিং ভালো হচ্ছে না, বোলিং ভালো হচ্ছে না, দলের জন্য অবদানই রাখতে পারছি না। তাহলে খেলে কী হবে? আমার হিসেবে তো ওর অবসরের সময় আগেই হয়েছে।
সাকিবের আউটের সমালোচনা করে শেবাগ বলেছেন, অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বলেই যদি তাকে বিশ্বকাপে আনা হয়, তাহলে সেটা করে দেখাক। এই উইকেটে কিছু সময় তো দাও। তুমি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট কিংবা ম্যাথু হেইডেন নও। তুমি বাংলাদেশের খেলোয়াড়। সেটা হিসাব করে খেলো। হুক-পুল তোমার শট নয়। তোমার যেটা শট, সেটা খেলো, অন্তত উইকেটে তো থাকো।
বিশ্বকাপের পর সাকিবকে আরে দলে দেখতে চান না শেবাগ। নির্বাচকদের কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত মন্তব্য করে বলেন, কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় নির্বাচকদের এসেছে। তরুণদের সুযোগ দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, যদি আপনি ফল না পান, তাহলে তরুণদের সুযোগ দিয়েই ম্যাচ হারুন। অন্তত তাতে ওদের অভিজ্ঞতা তো হবে। এরা তো তা থেকে কিছু শিখবে, সামনে অবদান রাখতে পারবে। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে কেনো নিয়ে আসা হয়-কারণ, সে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। দলের পরিবেশ ঠিক রাখে, অভিজ্ঞতা দিয়ে রান করবে, উইকেট নেবে, ডট বল দেবে। সাকিব তো এসব কিছুই করতে পারছে না। আমার মনে হয় না এই বিশ্বকাপের পর ওর খেলা উচিত। কিংবা ওকে খেলানো উচিত।
একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের পাশাপাশি সাবেক অধিনায়কের এমন কাজে লজ্জা হওয়া উচিত বলে জানান শেবাগ। তিনি বলেন, তুমি (সাকিব) একজন সিনিয়র খেলোয়াড়, সাবেক অধিনায়কৃ অথচ এটাই তোমার ক্রিকেট সেন্স! তোমার লজ্জা পাওয়ার পাশাপাশি এই ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়া উচিত।