লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি :
টানা বর্ষণ ও মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি জমে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয়দের সহযোগিতায় খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণ করছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া পানিবন্দিদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জের সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় লক্ষ্মীপুরের বিশেষ করে রামগতির চর আবদুল্লাহ, চর রমিজ, পোড়াগাছা, চর আলেকজান্ডার, বড়খেরী, কমলনগরের পাটওয়ারীহাট, সাহেবেরহাট, চরকালকিনি, চরফলকন, সদরের চররমনী মোহন, চরমেঘা, রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাড়িতে পানি ওঠায় জ্বলছে না চুলা। পাশাপাশি টিওবওয়েলগুলো ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। ফলে চরম দুর্ভোগে আছেন বানবাসী মানুষ। বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জেলায় পানিবন্দী আছেন প্রায় ৬ লাখ মানুষ।
এ ছাড়া পশু-পালন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট। পাশাপাশি ৩ হাজার ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১ কিলোমিটার মেঘনা নদী তীররক্ষা বাঁধের কাজও ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র স্রোতের কারণে কাজ করা যাচ্ছে না।
সুরাইয়া জাহান বলেন, জেলায় জলাবদ্ধতায় প্রায় ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট) থেকে শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া আমাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৮৯ টি সাইক্লোন শেল্টারও প্রস্তুত রয়েছে।
জলবদ্ধতা নিরসন নিয়ে তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুরের খালগুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। এতে পানি নামতে পারছে না। জনগণ আমাদেরকে এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। প্রশাসনের উপস্থিতি ও জনগণের সহযোগিতায় অবৈধ বাঁধগুলো কেটে দেওয়া হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, জেলায় প্রায় ৫৪ হাজার পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার পুকুরের ৯০ শতাংশ মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর মাছ চাষের জলাশয়। এতে মৎস্য চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। যার পরিমাণ ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার মতো হতে পারে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নদীতে ভাটা আসায় জলাবদ্ধতা নিরসনে সবগুলো স্লুইচ গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। জোয়ারের সময় গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। সার্বক্ষণিক আমাদের কর্মীরা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।