Dhaka শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা সংকটে প্রতিবেশীদের আশানুরূপ সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ প্রধান প্রতিবেশী দেশগুলোর আশানুরূপ সমর্থন পায়নি বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে বে অফ বেঙ্গল সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, গত আট বছরে, আমাদের প্রতিবেশী, বড় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আমরা যতটা সমর্থন আশা করেছিলাম, তা আসেনি। প্রশ্ন আসে, চীন কেন বাংলাদেশের পক্ষে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসছে না? কারণ বঙ্গোপসাগরের জন্য মিয়ানমার তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে ভারতও মনে করে কালাদান প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ এবং এই প্রকল্পের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের আবর্তে আটকা পড়েছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি কাউকে দোষারোপ করছি না, সবাই নিজের স্বার্থ দেখে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের স্বার্থের সঙ্গে কারো মিল আছে বলে মনে হয় না এবং যার জন্য বিষয়টি দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং টানেলের শেষে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না।

এই খুব দ্রুত এবং খুব সহজে সমাধান হবে না বলে মনে করেন তৌহিদ হোসেন। তবে তার মতে, একটি বিষয় আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই তা হলো এই সমস্যার সমাধান না হলে, এটি বাকি বিশ্বের জন্য সমস্যা হয়ে উঠবে। রোহিঙ্গা তরুণদের ভবিষ্যত নিয়ে বাড়তে থাকা উদ্বেগের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, যে তরুণ প্রজন্ম যাদের ভবিষ্যতের কোনো আশা নেই, তারা অলস বসে থেকে অন্যরা কী করছে তা দেখবে এটা হতে পারে না। একটা সময় আসবে যখন তারা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আমাদের প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের জন্যও গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের আলাদা আলাদা স্বার্থ রয়েছে। অন্যান্য নানা ইস্যুর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত আট বছরে এই সংকট নিরসনে বড় প্রতিবেশীর কাছ থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশার চেয়ে কম।

তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিবেশীদের বিষয়টিকে আমি এভাবে দেখি যে, তাদের নিজেদের স্বার্থ আছে বলে আমাদের পাশে এসে সমস্যার সমাধান তারা করেনি। ফলে এই সমস্যা আমাদের জন্য বড় ধরনের বোঝা তৈরি করেছে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই হুমকি হয়ে থাকবে না, তা ছড়িয়ে পড়বে অন্যখানেও।

বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে চীন কেন এগিয়ে আসেনি, এমন প্রশ্ন উঠতে পারে বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে চীনের কাছে মিয়ানমার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে ভারত চিন্তা করেছে রাখাইনের কালাদান প্রকল্প তার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর প্রবেশাধিকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রকল্পের জন্য ভারতের কাছে মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার কোনো বিকল্প নেই।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, এমন এক পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি, আমরা পরিস্থিতির বলি হয়েছি। আমি কাউকে দায়ী না করেই বলি সবাই নিজের স্বার্থ দেখবে। এতে করে রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিগগিরই এবং খুব সহজে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে বলে টানেলের শেষ প্রান্তে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হলে এটা বাকি বিশ্বের জন্য ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে বলে মন্তব্য করেন এই উপদেষ্টা। কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম বলেন তিনি। প্রতিটি পরিবর্তনে ফল আসতে সময় লাগে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নানা বিষয়ের সমাধানের জন্য আমাদের আরও কিছুটা ধৈর্যের প্রয়োজন। রাজনীতিবিদ, তরুণ প্রজন্মসহ সমাজের সবাই অংশের এই ধৈর্যের প্রয়োজন।

গত ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা কি আসলেই কিছু অর্জন করিনি? আমি আগে পত্রিকায় লিখতাম, টিভিতে কথা বলতাম। আমার সীমারেখা কতটা, সেটা আমি জানতাম। আমি সেই সীমারেখার কাছাকাছি যেতাম। কিন্তু সীমা অতিক্রমের সাহস দেখাতে পারতাম না। পশ্চিমে যাঁরা অবস্থান করেন, তাঁরাই স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতেন। দেশের বাইরে যাঁরা থাকতেন। দেশের ভেতরে যাঁরা থাকতেন, তাঁদের সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করতে পারতেন না। এখন দেশের ভেতরে যাঁরা আছেন, তাঁরাও অবাধে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন। এটা দেখে আমি অত্যন্ত খুশি। এই একটি বিষয় আমরা এরই মধ্যে অর্জন করেছি। আমি আশা করব, ধৈর্য ধারণ করলে, দেশে এবং দেশের বাইরের সব বন্ধুর সহায়তায় সব কটি না হলে তরুণ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারব।

সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও বার্তা দেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হোর্গে কিরোগা। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সংস্থার চেয়ারপারসন মনিরা খান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

রোহিঙ্গা সংকটে প্রতিবেশীদের আশানুরূপ সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৬:২৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ প্রধান প্রতিবেশী দেশগুলোর আশানুরূপ সমর্থন পায়নি বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে বে অফ বেঙ্গল সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, গত আট বছরে, আমাদের প্রতিবেশী, বড় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আমরা যতটা সমর্থন আশা করেছিলাম, তা আসেনি। প্রশ্ন আসে, চীন কেন বাংলাদেশের পক্ষে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসছে না? কারণ বঙ্গোপসাগরের জন্য মিয়ানমার তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে ভারতও মনে করে কালাদান প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ এবং এই প্রকল্পের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের আবর্তে আটকা পড়েছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি কাউকে দোষারোপ করছি না, সবাই নিজের স্বার্থ দেখে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের স্বার্থের সঙ্গে কারো মিল আছে বলে মনে হয় না এবং যার জন্য বিষয়টি দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং টানেলের শেষে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না।

এই খুব দ্রুত এবং খুব সহজে সমাধান হবে না বলে মনে করেন তৌহিদ হোসেন। তবে তার মতে, একটি বিষয় আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই তা হলো এই সমস্যার সমাধান না হলে, এটি বাকি বিশ্বের জন্য সমস্যা হয়ে উঠবে। রোহিঙ্গা তরুণদের ভবিষ্যত নিয়ে বাড়তে থাকা উদ্বেগের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, যে তরুণ প্রজন্ম যাদের ভবিষ্যতের কোনো আশা নেই, তারা অলস বসে থেকে অন্যরা কী করছে তা দেখবে এটা হতে পারে না। একটা সময় আসবে যখন তারা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আমাদের প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের জন্যও গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের আলাদা আলাদা স্বার্থ রয়েছে। অন্যান্য নানা ইস্যুর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত আট বছরে এই সংকট নিরসনে বড় প্রতিবেশীর কাছ থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশার চেয়ে কম।

তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিবেশীদের বিষয়টিকে আমি এভাবে দেখি যে, তাদের নিজেদের স্বার্থ আছে বলে আমাদের পাশে এসে সমস্যার সমাধান তারা করেনি। ফলে এই সমস্যা আমাদের জন্য বড় ধরনের বোঝা তৈরি করেছে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই হুমকি হয়ে থাকবে না, তা ছড়িয়ে পড়বে অন্যখানেও।

বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে চীন কেন এগিয়ে আসেনি, এমন প্রশ্ন উঠতে পারে বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে চীনের কাছে মিয়ানমার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে ভারত চিন্তা করেছে রাখাইনের কালাদান প্রকল্প তার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর প্রবেশাধিকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রকল্পের জন্য ভারতের কাছে মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার কোনো বিকল্প নেই।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, এমন এক পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি, আমরা পরিস্থিতির বলি হয়েছি। আমি কাউকে দায়ী না করেই বলি সবাই নিজের স্বার্থ দেখবে। এতে করে রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিগগিরই এবং খুব সহজে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে বলে টানেলের শেষ প্রান্তে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হলে এটা বাকি বিশ্বের জন্য ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে বলে মন্তব্য করেন এই উপদেষ্টা। কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম বলেন তিনি। প্রতিটি পরিবর্তনে ফল আসতে সময় লাগে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নানা বিষয়ের সমাধানের জন্য আমাদের আরও কিছুটা ধৈর্যের প্রয়োজন। রাজনীতিবিদ, তরুণ প্রজন্মসহ সমাজের সবাই অংশের এই ধৈর্যের প্রয়োজন।

গত ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা কি আসলেই কিছু অর্জন করিনি? আমি আগে পত্রিকায় লিখতাম, টিভিতে কথা বলতাম। আমার সীমারেখা কতটা, সেটা আমি জানতাম। আমি সেই সীমারেখার কাছাকাছি যেতাম। কিন্তু সীমা অতিক্রমের সাহস দেখাতে পারতাম না। পশ্চিমে যাঁরা অবস্থান করেন, তাঁরাই স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতেন। দেশের বাইরে যাঁরা থাকতেন। দেশের ভেতরে যাঁরা থাকতেন, তাঁদের সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করতে পারতেন না। এখন দেশের ভেতরে যাঁরা আছেন, তাঁরাও অবাধে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন। এটা দেখে আমি অত্যন্ত খুশি। এই একটি বিষয় আমরা এরই মধ্যে অর্জন করেছি। আমি আশা করব, ধৈর্য ধারণ করলে, দেশে এবং দেশের বাইরের সব বন্ধুর সহায়তায় সব কটি না হলে তরুণ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারব।

সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও বার্তা দেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হোর্গে কিরোগা। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সংস্থার চেয়ারপারসন মনিরা খান।