নিজস্ব প্রতিবেদক :
রমজান মাস শুরুর আগে শুক্রবার (৮ মার্চ) ছুটির দিনের শেষ বাজার। যে কারণে বেশিরভাগ ক্রেতা রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বাজারে এসেছিলেন সকালে। তবে আগেভাগেই বেশিরভাগ পণ্যের দর বেড়ে যাওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা। আবার অনেকেই প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনে দাম কমার অপেক্ষায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। পবিত্র এই মাসটি শুরুর আগেই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে।
শুক্রবার (০৮ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ক্রেতারা বলেছেন, আগের রমজান থেকে এ রমজানে খেজুর, ছোলা, ডাল, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়েছে। যা অনেকটা নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে বলা চলে।
গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে কচুরমুখী ১০০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০, করলা ১০০, ঢেঁড়স ৮০, বরবটি ১৪০, শশা ৮০, খিরাই ৬০, পেঁপে ৫০, ধুন্দুল ৮০, চিচিঙ্গা ৮০, ঝিঙ্গা ১০০, পটল ১২০, সজনে ২৪০ এবং প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
চলতি সপ্তাহে এসব বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মূলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০, পাকা টমেটো ৪০ থেকে ৬০, কাঁচা টমেটো ৩০, গাজর ৩০ থেকে ৪০, আলু ৩৫ এবং প্রতিটি ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধা কপি ৪০ থেকে ৫০ ও ব্রুকলি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে ধনে পাতা কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, লেবুর হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কলার হালি ৪০, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকলি ৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বাজারগুলোতে লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০, মূলা শাক ১৫, পালং শাক ১০ থেকে ১৫, কলমি শাক ১০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পুরাতন পেঁয়াজ ১২০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আদা ২২০ থেকে ২৪০ টাকা ও রসুন ২২০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
চলতি সপ্তাহে এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি, যা গত সপ্তাহে ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সোনালি ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সোনালি হাইব্রিডের কেজি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৭০০ ও লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শুক্রবার বাজারগুলোতে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা, এক কেজি শিং মাছ (চাষের, আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০, মাগুর মাছ ৭০০ থেকে ১ হাজার, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০, পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৯০০, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০, তেলাপিয়া ২২০, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৪০, মলা ৫০০, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৬০০, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০, কাচকি মাছ ৬০০, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০, রুপচাঁদা ১ হাজার ২০০, বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০, দেশি কই ১ হাজার, মেনি মাছ ৭০০, সোল মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৯০০, বেলে মাছ ৭০০ এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন এক কেজি সাধারণ মানের (জাহেদি) খেজুরের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজার আগ মুহূর্তে এ ধরনের খেজুরের কেজি ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। এছাড়া ভালো মানের খেজুর ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে, যা গত রমজানের থেকে ৪০০ টাকা বেশি।
বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০-১২০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৮৫-৯০ টাকা, ডাবলির ডাল ৮৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫-১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫-১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০-১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১০৫-১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে বেসন ১৪০-১৬০ টাকা খোলা আটা ৫০-৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫-৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫-৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও!
তবে বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন দামের ভোজ্যতেল। বোতলজাত সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামে বিক্রি হলেও বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেলে। রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৩ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।
রোজার আগে ঊর্ধ্বমুখী মসলার বাজারও। জিরা বাদে বেড়ে গেছে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম। প্রতি কেজি জিরা ৭৫০ টাকা, এলাচ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, দারুচিনি ৪৬০-৪৭০ টাকা, গোলমরিচ ৯০০ টাকা ও লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ টাকায়।
যাত্রাবাড়ীর মুদি দোকানদার কামাল হোসেন বলেন, রমজানের আগে সরবরাহ কম থাকায় প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। বাড়তি কেনা পড়ে তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।
রাজধানীর মিরপুর বাজারে কেনাকাটা করতে আসা আজমল হোসেন বলেন, দাম বাড়ার কারণে চাহিদামত পণ্য সংগ্রহ করতে পারছি না। প্রতিদিনই দেখি কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু আমাদের বেতন তো আর বাড়ে না। বাচ্চাদের চাহিদামত অনেক কিছু কিনতে পারছি না। পৃথিবীর অন্যান্য মুসলমান দেশে রমজান আসলে সকল পণ্যের দাম কমায়। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান আসলেই পণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করে। তাদের বিচার আল্লাহ করবে।