Dhaka শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রূপপুরেই হবে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পাবনার রূপপুরেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পাবনাতেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার।

সোমবার (১১ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের বিশেষ গবেষণায় অনুদানের চেক প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বিজ্ঞানকে খুব গুরুত্ব দিতেন। তিনি সদ্য স্বাধীন দেশে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত পরমাণু শক্তি কমিশন মানুষের স্বাস্থ্য পরিচর্যা অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার মেডিসিন প্রচলন করেছে। আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চেষ্টা করেছিলাম দক্ষিণে, কিন্তু দক্ষিণে আমাদের যে মাটি সে মাটি এত নরম, প্রত্যেকটা দিন আমরা দেখেছি আসলে সেখানে করা সম্ভব নয়। এখন যেখানে আমরা করেছি এটা বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার পর দ্বিতীয়টাও আমরা এই পাবনাতেই রূপপুরে করতে পারবো। দক্ষিণ অঞ্চলের প্রত্যেকটি দ্বীপে অ্যাটমিক এনার্জি থেকে লোক পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, মাটির দেখা হয়েছে আসলে যেখানে মাটি খুব নরম, ওখানে করা সম্ভব হবে না। আমি এখনই বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রীকে বললাম যে এটার কাজ আমাদের শেষ হবে, সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়টা যাতে শুরু করতে পারি এখন থেকে আমাদের সেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাছাড়া স্যাটেলাইট এক আমরা উৎক্ষেপণ করেছি এবং স্যাটেলাইট দুই উৎক্ষেপণ করারও উদ্যোগ ইতোমধ্যে আমরা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণা ছাড়া কোনো কিছুতেই উৎকর্ষ লাভ করা যায় না। বিজ্ঞানকে বঙ্গবন্ধুই বেশি গুরুত্ব দিতেন। ৭৫’র পর স্বৈরশাসকরা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় একটু পিছিয়ে আছি। ডাক্তার সাহেবরা শুধু প্র্যাক্টিস করে আর টাকা কামাই করে, গবেষণার দিকে বেশি যায় না। এখন গবেষণার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশনজট। শিক্ষার পরিবেশটাই নষ্ট করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সাল যখন ক্ষমতায় আসি তখন একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী নাই বলতে গেলে। এর ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উপর আমরা জোর দিই। আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিই। যাতে প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরি হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ শাসকদের কাছে ক্ষমতা ছিল ভোগের বস্তু। বিএনপির আমলে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সংসদে বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ভালো না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে, বিদেশি খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায় না। কিন্তু বর্তমান সরকার তা পাল্টে দিয়েছে। গবেষণায় জোর দিয়েছিলাম বলেই, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দেশের সকল বিভাগীয় শহরে নভোথিয়েটার স্থাপন করছি। প্রথমে ঢাকায় করেছি। নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া সরকারে এসেই দুইটা মামলা দিয়েছিল। তখন আমি বলেছি, ভালো করে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে। আমরা একনেকে যারা বসতাম সবাইকে একসঙ্গে মামলার আসামি করে। প্রায় এক ডজন মামলা দিয়েছিল। ২০০৭ সালে দিয়েছিল আরও ছয়টা। আমি বলেছি, সবগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের যা প্রয়োজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সবই করে দিয়ে গিয়েছিলেন। ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলের মানুষের মধ্যে ক্ষমতা দিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) আর্থসামাজিক উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। যখনই সেই পদক্ষেপ নিলেন, তখন এলো চরম আঘাত ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট। জাতির জন্য একটি কলঙ্কময় অধ্যায়।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, একটা রিজার্ভ মানি নেই, কারেন্সি নোট নেই, যুদ্ধকালীন সময়ে কোনো ক্ষেতে ফসল হয়নি, যা কিছু ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সারা দেশ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়কার করে দেয়। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি ছিল গৃহহারা, আর এক কোটি মানুষ ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই ধরনের অবস্থায় শূন্য হাতে দাঁড়িয়ে মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা এলাকায় স্কুল, কলেজের সবগুলোর অবকাঠামো তৈরি করা, শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় বই দেওয়া, ছেলে-মেয়ে, শিক্ষকরা যাতে পোশাক পরতে পারেন সে ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।

তবে চিকিৎসকদের এখন গবেষণার উপর গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যারা মেধাবীর কাজে সুযোগ পাবে তাদের গবেষণাও অপরিহার্য। যারা স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা করবে তাদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দিব। বিজ্ঞান ও কৃষিবিষয়ক গবেষণার চাইতে স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় আমরা পিছিয়ে আছি। ডাক্তার সাহেবরা শুধু প্র্যাকটিস করে আর টাকা কামাই করে, গবেষণার দিবে বেশি যায় না।

কৃষিতে গবেষণায় সফলতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষিতে গবেষণা করে কিন্তু আজকে আমরা খাদ্যে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ না… বাংলাদেশে এখন ফলমূল, ফুল এমনকি টিউলিপ- যেটা শীতের দেশ ছাড়া হয় না, সেই টিউলিপও এখন বাংলাদেশে হচ্ছে, স্ট্রবেরিও হচ্ছে। সবই গবেষণার ফসল।’

বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যারা গবেষণা করবেন তাদের উৎসাহ দিতে যা যা করার আমরা করব। কিন্তু গবেষণাটা আমাদের খুব দরকার। বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞান- এ দুটোর উপর আমাদের সবচে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

একই সঙ্গে গবেষকদের স্মরণ করিয়ে দেন, ফেলোশিপ হিসেবে যে টাকাটা আপনাদের দিচ্ছি, মনে রাখতে হবে সে টাকাটা কিন্তু জনগণের টাকা। আর জনগণের টাকা জনগণের কল্যাণেই যেন লাগে। কারণ এই গবেষণা থেকে যেটা উদ্ভাবন হবে সেটা জনকল্যাণেই কাজে লাগবে; সে কথাটা মাথায় রাখতে হবে।

স্বাস্থ্যখাতে গবেষণায় পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকরা শুধু টাকা ইনকাম করে। স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। সরকারি চিকিৎসক যারা আছেন তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস কমিয়ে গবেষণায় মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

এ সময় নারীদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অনূর্ধ্ব ১৬ দলকে ডেকে প্রাইজমানি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫৪ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ২৫ জনকে ন্যাশনাল সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, ১০ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ও ১৯ জনকে বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়ক বেহাল, দুর্ভোগে স্থানীয়রা

রূপপুরেই হবে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০২:২১:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পাবনার রূপপুরেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পাবনাতেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার।

সোমবার (১১ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের বিশেষ গবেষণায় অনুদানের চেক প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বিজ্ঞানকে খুব গুরুত্ব দিতেন। তিনি সদ্য স্বাধীন দেশে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত পরমাণু শক্তি কমিশন মানুষের স্বাস্থ্য পরিচর্যা অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার মেডিসিন প্রচলন করেছে। আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চেষ্টা করেছিলাম দক্ষিণে, কিন্তু দক্ষিণে আমাদের যে মাটি সে মাটি এত নরম, প্রত্যেকটা দিন আমরা দেখেছি আসলে সেখানে করা সম্ভব নয়। এখন যেখানে আমরা করেছি এটা বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার পর দ্বিতীয়টাও আমরা এই পাবনাতেই রূপপুরে করতে পারবো। দক্ষিণ অঞ্চলের প্রত্যেকটি দ্বীপে অ্যাটমিক এনার্জি থেকে লোক পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, মাটির দেখা হয়েছে আসলে যেখানে মাটি খুব নরম, ওখানে করা সম্ভব হবে না। আমি এখনই বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রীকে বললাম যে এটার কাজ আমাদের শেষ হবে, সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়টা যাতে শুরু করতে পারি এখন থেকে আমাদের সেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাছাড়া স্যাটেলাইট এক আমরা উৎক্ষেপণ করেছি এবং স্যাটেলাইট দুই উৎক্ষেপণ করারও উদ্যোগ ইতোমধ্যে আমরা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণা ছাড়া কোনো কিছুতেই উৎকর্ষ লাভ করা যায় না। বিজ্ঞানকে বঙ্গবন্ধুই বেশি গুরুত্ব দিতেন। ৭৫’র পর স্বৈরশাসকরা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় একটু পিছিয়ে আছি। ডাক্তার সাহেবরা শুধু প্র্যাক্টিস করে আর টাকা কামাই করে, গবেষণার দিকে বেশি যায় না। এখন গবেষণার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশনজট। শিক্ষার পরিবেশটাই নষ্ট করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সাল যখন ক্ষমতায় আসি তখন একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী নাই বলতে গেলে। এর ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উপর আমরা জোর দিই। আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিই। যাতে প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরি হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ শাসকদের কাছে ক্ষমতা ছিল ভোগের বস্তু। বিএনপির আমলে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সংসদে বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ভালো না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে, বিদেশি খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায় না। কিন্তু বর্তমান সরকার তা পাল্টে দিয়েছে। গবেষণায় জোর দিয়েছিলাম বলেই, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দেশের সকল বিভাগীয় শহরে নভোথিয়েটার স্থাপন করছি। প্রথমে ঢাকায় করেছি। নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া সরকারে এসেই দুইটা মামলা দিয়েছিল। তখন আমি বলেছি, ভালো করে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে। আমরা একনেকে যারা বসতাম সবাইকে একসঙ্গে মামলার আসামি করে। প্রায় এক ডজন মামলা দিয়েছিল। ২০০৭ সালে দিয়েছিল আরও ছয়টা। আমি বলেছি, সবগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের যা প্রয়োজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সবই করে দিয়ে গিয়েছিলেন। ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলের মানুষের মধ্যে ক্ষমতা দিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) আর্থসামাজিক উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। যখনই সেই পদক্ষেপ নিলেন, তখন এলো চরম আঘাত ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট। জাতির জন্য একটি কলঙ্কময় অধ্যায়।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, একটা রিজার্ভ মানি নেই, কারেন্সি নোট নেই, যুদ্ধকালীন সময়ে কোনো ক্ষেতে ফসল হয়নি, যা কিছু ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সারা দেশ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়কার করে দেয়। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি ছিল গৃহহারা, আর এক কোটি মানুষ ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই ধরনের অবস্থায় শূন্য হাতে দাঁড়িয়ে মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা এলাকায় স্কুল, কলেজের সবগুলোর অবকাঠামো তৈরি করা, শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় বই দেওয়া, ছেলে-মেয়ে, শিক্ষকরা যাতে পোশাক পরতে পারেন সে ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।

তবে চিকিৎসকদের এখন গবেষণার উপর গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যারা মেধাবীর কাজে সুযোগ পাবে তাদের গবেষণাও অপরিহার্য। যারা স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা করবে তাদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দিব। বিজ্ঞান ও কৃষিবিষয়ক গবেষণার চাইতে স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় আমরা পিছিয়ে আছি। ডাক্তার সাহেবরা শুধু প্র্যাকটিস করে আর টাকা কামাই করে, গবেষণার দিবে বেশি যায় না।

কৃষিতে গবেষণায় সফলতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষিতে গবেষণা করে কিন্তু আজকে আমরা খাদ্যে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ না… বাংলাদেশে এখন ফলমূল, ফুল এমনকি টিউলিপ- যেটা শীতের দেশ ছাড়া হয় না, সেই টিউলিপও এখন বাংলাদেশে হচ্ছে, স্ট্রবেরিও হচ্ছে। সবই গবেষণার ফসল।’

বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যারা গবেষণা করবেন তাদের উৎসাহ দিতে যা যা করার আমরা করব। কিন্তু গবেষণাটা আমাদের খুব দরকার। বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞান- এ দুটোর উপর আমাদের সবচে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

একই সঙ্গে গবেষকদের স্মরণ করিয়ে দেন, ফেলোশিপ হিসেবে যে টাকাটা আপনাদের দিচ্ছি, মনে রাখতে হবে সে টাকাটা কিন্তু জনগণের টাকা। আর জনগণের টাকা জনগণের কল্যাণেই যেন লাগে। কারণ এই গবেষণা থেকে যেটা উদ্ভাবন হবে সেটা জনকল্যাণেই কাজে লাগবে; সে কথাটা মাথায় রাখতে হবে।

স্বাস্থ্যখাতে গবেষণায় পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকরা শুধু টাকা ইনকাম করে। স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। সরকারি চিকিৎসক যারা আছেন তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস কমিয়ে গবেষণায় মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

এ সময় নারীদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অনূর্ধ্ব ১৬ দলকে ডেকে প্রাইজমানি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫৪ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ২৫ জনকে ন্যাশনাল সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, ১০ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ও ১৯ জনকে বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।