নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, সংবিধান সংশোধন, বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ মোট পাঁচ দফা নতুন দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেল সোয়া পাঁচটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
একইসঙ্গে অবিলম্বে এসব দাবি মেনে নেওয়া না হলে শিগগিরই রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো
১. অনতিবিলম্বে ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে। সে জায়গায় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে।
২. এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তাদেরকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. এই সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দীনকে পদচ্যুত করতে হবে।
৪. জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এসব নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একই সাথে তারা যেন ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে না পারে ও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ ফ্যাসিবাদী সব সংগঠন এবং মুজিববাদী চেতনার সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণমাধ্যমকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। ১৭ জুলাই যখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, তখনই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে—জঙ্গি সংগঠন ও তার মা শেখ হাসিনার এই বাংলাদেশে স্থান হবে না।
অনলাইনে সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মীদের উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, তোমরা আমাদের কী ভয় দেখাবে! আমরা পুলিশ লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমাদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করেছি। তোমাদের ‘মাদার অব টেরর’ শেখ হাসিনা তোমাদের ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য টেনে-হিঁচড়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ৭২ সালের বাকশালি সংবিধান বাতিল করে জাতীয় দলগুলোর সঙ্গে বসে যদি এই মাসের মধ্যে নতুন সংবিধান বাস্তবায়ন শুরু না করা হয়, তাহলে নাগরিক কমিটি অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। যারা আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
সমম্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন কী খেয়ে, কোন মানসিক অবস্থায় থেকে তিনি বলছেন যে, তার কাছে পদত্যাগপত্র নাই! শেখ হাসিনাকে যেভাবে পালাতে হয়েছে, সাহাবুদ্দিককেও সেভাবে পালাতে হবে। কোনো ফ্যাসিস্ট যদি গর্ত থেকে উঁকি দিতে চায়, ছাত্রজনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে প্রতিহত করবে।
সমম্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ফ্যাসিবাদের মূল আদর্শ মুজিববাদিতা। ছাত্রলীগ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রনায়ক ছিল। শেখ হাসিনার সময় তারা এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম জারি রেখেছে। বিগত ১৫ বছরে তারা বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। হাজার হাজার মানুষকে গুম করেছিল। ছাত্রলীগ দিয়ে এই ফ্যাসিবাদের শুরু হয়। তাই এদের নিষিদ্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ৩ তারিখ অঙ্গীকার করেছিলাম, ফ্যাসিবাদের বিলোপ করব এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করব। কিন্তু ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত সাহাবুদ্দিন এখনো ক্ষমতায় আছে।
সমম্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, ৭২ সালের সংবিধান জনগণের মতামত নিয়ে তৈরি করা হয়নি। সেই ৭২ সালের সংবিধান রক্ষা করে বসে থাকা রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
গণজমায়েতে আরও বক্তব্য দেন সমম্বয়ক লুৎফর রহমান, সহ-সম্বয়ক রিফাত রশীদ, শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’
তবে সম্প্রতি মানজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়ত সময় পাননি।’
এরপর নতুন করে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সরকার পতনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ।