Dhaka শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাশিয়ায় নাভালনির মৃত্যু, পুতিনের বিরুদ্ধে যা বললেন স্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সেই নাভালনি কারাগারে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন। এই মৃত্যুর জন্য পুতিনকে জবাব দিতে হবে কথা বলেন নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া। অশ্রুসজল চোখে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, খুব শিগগিরই পুতিনের অপশাসনের অবসান ঘটবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে শুক্রবার নাভালনির মৃত্যুসংবাদ পান তাঁর স্ত্রী। কান্না সংবরণ করে আবেগতাড়িত বক্তব্যে তিনি বলেন, সে (অ্যালেক্সেই নাভালনি) এখানেই থাকতে পারত, এই সম্মেলনকক্ষে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সূত্র থেকে যে খবর আমরা পেলাম, তা কীভাবে বিশ্বাস করব জানি না। কারণ, বহু বছর ধরেই আমরা পুতিন ও তার সরকারকে বিশ্বাস করতে পারি না। তারা সব সময় মিথ্যা বলে।

ইউলিয়া নাভালনায়া আরও বলেন, এটা সত্যি যে আমি পুতিনকে চাই। তার পুরো দল এবং তার সমস্ত বন্ধুরা জানুক যে তারা আমাদের দেশ, আমার পরিবার এবং আমার স্বামীর প্রতি কী করেছে। আমি পুতিনের কাছে জবাব চাই। সেই দিন খুব তাড়াতাড়ি আসবে।

পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নাভালনায়া। তিনি বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, এই কক্ষের এবং সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন আমরা পুতিনের ভয়ংকর শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাঁকে পরাজিত করি। আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে, তার জন্য পুতিন প্রশাসনের সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করতে হবে।

কিন্তু নাভালনির মৃত্যু সংবাদ সবকিছু ওলট-পালট করে দেয়। দাভোস অব ডিফেন্সের আয়োজকরা সম্মেলন শুরুর দিন শুক্রবার নির্ধারিত আলোচানা স্থগিত রেখে ইউলিয়া নাভালনায়াকে মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি যখন বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে ওঠেন, সে সময় সম্মেলনে উপস্থিত সবাই তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান।

নাভালনায়া বলেন, ‘এখানে আসার আগে দীর্ঘ সময় ধরে আমি ভেবেছি যে আমার কি এখানে আসা উচিত, না কি শিগগিরই মস্কোতে আমার ছেলে মেয়েদের কাছে যাওয়া উচিত। কিন্তু তখন আমার মনে হলো, এই অবস্থায় অ্যালেক্সেই থাকলে কী করতেন। আমি নিশ্চিত, তিনি এই মঞ্চে উপস্থিত থাকতেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। কমলা বলেন, অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু সংবাদ যদি সত্য হয়, তাহলে এটি হবে পুতিনের নিষ্ঠুরতার আরও একটি উদাহারণ। যদি সত্যিই এটি ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই রাশিয়া এর জন্য দায়ী— এটা আমরা স্পষ্টভাবে বলছি,’ সম্মেলন মঞ্চে বলেন কমলা হ্যারিস।

সম্মেলনের অবসরে কমলা হ্যারিস এবং অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে ইউলিয়া নাভালনায়া আলাদাভাবে কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। রাশিয়ার কোনো কর্মকর্তা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না।

শুক্রবার তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এক বিবৃতিতে ইয়ামালো নেনৎস কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, এই দিন সকালে কারাগারের ভেতর হাঁটার সময় হঠাৎ তিনি অসুস্থ বোধ করেন এবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কারা চিকিৎকদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়; সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাভালনিকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঠিক কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, বিবৃতিতে তা স্পষ্ট করেনি কারা কর্তৃপক্ষ।

এদিকে তার মৃত্যু হয়েছে—সেকথা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। কারণ, দুই দিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়ার উদ্দেশে একটি আবেগপূর্ণ ভিডিওবার্তা দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাকে বেশ হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত মনে হয়েছে।

নাভালনির সমর্থকদের একাংশের অভিযোগ, কারাগারে খুন করা হয়েছে নাভালনিকে এবং প্রশাসন সেটি আড়াল করতে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করছে।

নাভালনির প্রধান সহকারী লিওনিদ ভলকোভ বলেছেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রের প্রচারণা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। তার ম্তৃ্যুর খবর যদি সত্য হয়,তাহলে নাভালনি মরেননি। পুতিনই তাকে (নাভালনি) খুন করেছেন।’

তবে শুক্রবার এক বার্তায় পুতিনের মুখপাত্র এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, নাভালনির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার করতে করতে এখন কুসংস্কারের পথে এগোচ্ছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

রাশিয়ায় নাভালনির মৃত্যু, পুতিনের বিরুদ্ধে যা বললেন স্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৮:২২:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সেই নাভালনি কারাগারে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন। এই মৃত্যুর জন্য পুতিনকে জবাব দিতে হবে কথা বলেন নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া। অশ্রুসজল চোখে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, খুব শিগগিরই পুতিনের অপশাসনের অবসান ঘটবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে শুক্রবার নাভালনির মৃত্যুসংবাদ পান তাঁর স্ত্রী। কান্না সংবরণ করে আবেগতাড়িত বক্তব্যে তিনি বলেন, সে (অ্যালেক্সেই নাভালনি) এখানেই থাকতে পারত, এই সম্মেলনকক্ষে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সূত্র থেকে যে খবর আমরা পেলাম, তা কীভাবে বিশ্বাস করব জানি না। কারণ, বহু বছর ধরেই আমরা পুতিন ও তার সরকারকে বিশ্বাস করতে পারি না। তারা সব সময় মিথ্যা বলে।

ইউলিয়া নাভালনায়া আরও বলেন, এটা সত্যি যে আমি পুতিনকে চাই। তার পুরো দল এবং তার সমস্ত বন্ধুরা জানুক যে তারা আমাদের দেশ, আমার পরিবার এবং আমার স্বামীর প্রতি কী করেছে। আমি পুতিনের কাছে জবাব চাই। সেই দিন খুব তাড়াতাড়ি আসবে।

পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নাভালনায়া। তিনি বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, এই কক্ষের এবং সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন আমরা পুতিনের ভয়ংকর শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাঁকে পরাজিত করি। আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে, তার জন্য পুতিন প্রশাসনের সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করতে হবে।

কিন্তু নাভালনির মৃত্যু সংবাদ সবকিছু ওলট-পালট করে দেয়। দাভোস অব ডিফেন্সের আয়োজকরা সম্মেলন শুরুর দিন শুক্রবার নির্ধারিত আলোচানা স্থগিত রেখে ইউলিয়া নাভালনায়াকে মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি যখন বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে ওঠেন, সে সময় সম্মেলনে উপস্থিত সবাই তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান।

নাভালনায়া বলেন, ‘এখানে আসার আগে দীর্ঘ সময় ধরে আমি ভেবেছি যে আমার কি এখানে আসা উচিত, না কি শিগগিরই মস্কোতে আমার ছেলে মেয়েদের কাছে যাওয়া উচিত। কিন্তু তখন আমার মনে হলো, এই অবস্থায় অ্যালেক্সেই থাকলে কী করতেন। আমি নিশ্চিত, তিনি এই মঞ্চে উপস্থিত থাকতেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। কমলা বলেন, অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু সংবাদ যদি সত্য হয়, তাহলে এটি হবে পুতিনের নিষ্ঠুরতার আরও একটি উদাহারণ। যদি সত্যিই এটি ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই রাশিয়া এর জন্য দায়ী— এটা আমরা স্পষ্টভাবে বলছি,’ সম্মেলন মঞ্চে বলেন কমলা হ্যারিস।

সম্মেলনের অবসরে কমলা হ্যারিস এবং অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে ইউলিয়া নাভালনায়া আলাদাভাবে কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। রাশিয়ার কোনো কর্মকর্তা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না।

শুক্রবার তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এক বিবৃতিতে ইয়ামালো নেনৎস কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, এই দিন সকালে কারাগারের ভেতর হাঁটার সময় হঠাৎ তিনি অসুস্থ বোধ করেন এবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কারা চিকিৎকদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়; সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাভালনিকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঠিক কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, বিবৃতিতে তা স্পষ্ট করেনি কারা কর্তৃপক্ষ।

এদিকে তার মৃত্যু হয়েছে—সেকথা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। কারণ, দুই দিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়ার উদ্দেশে একটি আবেগপূর্ণ ভিডিওবার্তা দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাকে বেশ হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত মনে হয়েছে।

নাভালনির সমর্থকদের একাংশের অভিযোগ, কারাগারে খুন করা হয়েছে নাভালনিকে এবং প্রশাসন সেটি আড়াল করতে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করছে।

নাভালনির প্রধান সহকারী লিওনিদ ভলকোভ বলেছেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রের প্রচারণা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। তার ম্তৃ্যুর খবর যদি সত্য হয়,তাহলে নাভালনি মরেননি। পুতিনই তাকে (নাভালনি) খুন করেছেন।’

তবে শুক্রবার এক বার্তায় পুতিনের মুখপাত্র এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, নাভালনির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।