নিজস্ব প্রতিবেদক :
হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আবরার ফাহাদের বাবা মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ বলেছেন, আমরা এ রায়ে আপাতত সন্তুষ্ট। রায়ের পরে পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করা যেন হয় সেটি আমাদের প্রত্যাশা। পাশাপাশি ভবিষ্যতে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।
রোববার (১৬ মার্চ) রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি।
আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং আছে, সেটার পরিবর্তন চাই। ছাত্ররা যাতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে আমরা সবার কাছে আবেদন জানাই। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য পাঠান। তারা যদি পড়ালেখা বাদ দিয়ে অন্য কিছুতে জড়ায় তাতে বাবা-মা কষ্ট পান। তাই শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়ানো উচিত নয়।
প্রতিবাদী তারুণ্য ক্যাটাগরিতে এবার আবরার ফাহাদকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বরকত উল্লাহ বলেন, তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত দিয়েছে এতে আমরা গর্বিত। এজন্য সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
এ সময় আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, আজকে যে রায়টি হয়েছে, এতে আমরা সন্তুষ্ট। হাইকোর্ট থেকে এত দ্রুত একটি রায় আসবে এটি আমরা এক বছর আগেও চিন্তা করিনি। এটা হয়তো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্ভব হয়েছে। এখনো হয়তো অনেকগুলো স্টেপ বাকি আছে। সেগুলো যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় সেটা আমাদের চাওয়া থাকবে। সাড়ে পাঁচ বছর হয়ে যাচ্ছে আমরা এটা নিয়ে আছি। আরও কতদিন লাগবে আমরা জানি না। এটি একট দৃষ্টান্ত উপস্থাপন হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিণতি আর কারও না হয়। এজন্য আমাদের চাওয়া যত দ্রুত সম্ভব বাকি স্টেপগুলো সম্পন্ন হোক।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে কিনা এটা যারা রাজনীতি করে তারা বলতে পারবে। আমরা সব সময় চাই, যে পরিণতি আবরার ফাহাদের হয়েছে, তা যাতে আর কোনো শিক্ষার্থীর না হয়।
আবরার ফাইয়াজ বলেন, একজন আসামির কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য হতাশার। কারণ, আমরা অপেক্ষায় আছি কবে এদের রায় কার্যকর হবে। তার মধ্যে আমরা জানতে পারছি, একজন পালিয়ে চলে গেছে। এটা কেন লুকিয়ে রাখা হলো, এটার কোনো পরিষ্কার উত্তর আমরা পাইনি।
এর আগে, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল রেখে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রোববার এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে বি রুমি, জহিরুল ইসলাম সুমন ও নূর মোহাম্মদ আজমী এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ উপস্থিত ছিলেন।
আসামিপক্ষে আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী ও আজিজুর রহমান দুলু উপস্থিত ছিলেন। আদালত কক্ষে আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। আজ রায় ঘোষণা করলেন হাইকোর্ট।