Dhaka শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাত সাড়ে ১০টায় এক মিনিট অন্ধকার থাকবে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। গণহত্যা দিবসের রাতে এক মিনিট অন্ধকারে থাকবে দেশ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে কালরাতের স্মরণে শনিবার (২৫ মার্চ) রাত ১০টা ৩০ থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিট সারাদেশের মানুষ প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। তবে কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ওই রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে যে গণহত্যায় মেতে উঠেছিল, তা শুধু এ দেশের নয়, সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে এক জঘন্য কালো অধ্যায়। সে রাতে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটে মিছিলরত বাঙালিদের নির্বিচার হত্যার পর পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনাসহ বিভিন্ন এলাকায় একযোগে হামলা চালিয়ে অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করেছিল তারা।

বর্বরতার মর্মন্তুদ সেই কাহিনী সংক্ষেপে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ২৫ মার্চের সেই গণহত্যার কথা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বই, ডকুমেন্টারি ও মিডিয়ায় প্রচারিত হলেও দীর্ঘ ৪৫ বছর দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।

পাকিস্তানী সামরিক আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের যৌথ চক্রান্তের সিদ্ধান্তই ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইট। বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা না দিতেই চালানো হয় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। ওই রাতে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই হত্যা করা হয় কমপক্ষে দশ হাজারের বেশি নিরীহ মানুষকে। পাশাপাশি দেশের বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ।

৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু আক্রমণ প্রতিহতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখার আহ্বান জানান। পাশাপাশি চালিয়ে যান আলোচনাও। কিন্তু পাকিস্তানীদের উদ্দেশ্য ছিল সময়ক্ষেপণ। পশ্চিম থেকে আনা হচ্ছিল সৈন্য আর গোলাবারুদ। আর ঢাকা পরিণত হয়েছিল বিক্ষোভের নগরীতে।

২৫ মার্চ সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকের পর পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান, ‘পরিস্থিতি সঙ্কটজনক’। পরে ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক করেন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে। চুড়ান্ত করা হয় হামলার নীল নকশা। শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারে সেনানিবাসগুলো সফর করেন। বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা ও সৈন্যদের রাখা হয় নজরদারিতে। সন্ধ্যায় কোনো ঘোষণা না দিয়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। রাত দশটায় শহরে ছড়িয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী।

পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরান ঢাকায় একযোগে আক্রমণ করে হানাদার বাহিনী। মেতে ওঠে ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে। ঢাকায় থাকা বিশ্ব গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা তুলে ধরেন সেই বর্বর গণহত্যার কথা।

২০১৭ সাল থেকে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে দেশে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণের ভয়াবহতা বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ।

আক্রমণকারী হানাদারদের একটি দল যায় ধানমন্ডি। গ্রেফতারের আগেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন স্বাধীনতার। নয় মাস যুদ্ধের পর মুক্তি লাভ করে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের নতুন একটি ভূখণ্ড; যার নাম, বাংলাদেশ।

শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা শুরু হয়েছে। সারাদেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া স্কুল, কলেজ এবং মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময়ে দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়গুলোতে প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

রাত সাড়ে ১০টায় এক মিনিট অন্ধকার থাকবে দেশ

প্রকাশের সময় : ১২:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। গণহত্যা দিবসের রাতে এক মিনিট অন্ধকারে থাকবে দেশ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে কালরাতের স্মরণে শনিবার (২৫ মার্চ) রাত ১০টা ৩০ থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিট সারাদেশের মানুষ প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। তবে কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ওই রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে যে গণহত্যায় মেতে উঠেছিল, তা শুধু এ দেশের নয়, সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে এক জঘন্য কালো অধ্যায়। সে রাতে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটে মিছিলরত বাঙালিদের নির্বিচার হত্যার পর পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনাসহ বিভিন্ন এলাকায় একযোগে হামলা চালিয়ে অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করেছিল তারা।

বর্বরতার মর্মন্তুদ সেই কাহিনী সংক্ষেপে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ২৫ মার্চের সেই গণহত্যার কথা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বই, ডকুমেন্টারি ও মিডিয়ায় প্রচারিত হলেও দীর্ঘ ৪৫ বছর দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।

পাকিস্তানী সামরিক আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের যৌথ চক্রান্তের সিদ্ধান্তই ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইট। বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা না দিতেই চালানো হয় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। ওই রাতে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই হত্যা করা হয় কমপক্ষে দশ হাজারের বেশি নিরীহ মানুষকে। পাশাপাশি দেশের বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ।

৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু আক্রমণ প্রতিহতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখার আহ্বান জানান। পাশাপাশি চালিয়ে যান আলোচনাও। কিন্তু পাকিস্তানীদের উদ্দেশ্য ছিল সময়ক্ষেপণ। পশ্চিম থেকে আনা হচ্ছিল সৈন্য আর গোলাবারুদ। আর ঢাকা পরিণত হয়েছিল বিক্ষোভের নগরীতে।

২৫ মার্চ সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকের পর পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান, ‘পরিস্থিতি সঙ্কটজনক’। পরে ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক করেন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে। চুড়ান্ত করা হয় হামলার নীল নকশা। শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারে সেনানিবাসগুলো সফর করেন। বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা ও সৈন্যদের রাখা হয় নজরদারিতে। সন্ধ্যায় কোনো ঘোষণা না দিয়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। রাত দশটায় শহরে ছড়িয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী।

পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরান ঢাকায় একযোগে আক্রমণ করে হানাদার বাহিনী। মেতে ওঠে ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে। ঢাকায় থাকা বিশ্ব গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা তুলে ধরেন সেই বর্বর গণহত্যার কথা।

২০১৭ সাল থেকে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে দেশে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণের ভয়াবহতা বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ।

আক্রমণকারী হানাদারদের একটি দল যায় ধানমন্ডি। গ্রেফতারের আগেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন স্বাধীনতার। নয় মাস যুদ্ধের পর মুক্তি লাভ করে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের নতুন একটি ভূখণ্ড; যার নাম, বাংলাদেশ।

শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা শুরু হয়েছে। সারাদেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া স্কুল, কলেজ এবং মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময়ে দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়গুলোতে প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।