নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। ঘূণিঝড়টি মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১০টা থেকে বুধবার (২৫ অক্টোবর) ১০টার মধ্যে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে পারে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো: এনামুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপ/ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বাস্তবায়ন বোর্ডের এ জরুরি সভা ডাকা হয়।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ও চরিত্রটা বিশ্লেষণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটি আজকে আজ রাত ১০টা থেকে কাল সকাল ১০টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রাত ৮টার মধ্যে যেন সব ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আমরা প্রস্তুত করেছি। আমাদের মেডিক্যাল টিমও প্রস্তুত রয়েছে।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা করতে ১০টি জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, হামুনের গতিপথ দেখতে গতবছরের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মতো। পায়রা বন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে ঘূণিঝড়টি। বাতাসের গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দিয়েছে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ২ টি পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
১০ জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। এই ১০ জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে। ১২ টা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছে। রাত ৮ টার মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি। রান্না করা খাবার, শিশুদের খাবার, সুপেয় পানি, গো-খাদ্যের জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতি জেলায় ২০ লাখ টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি। ১ কোটি টাকা গো-খাদ্যের জন্য এবং ১ কোটি টাকা শিশু খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলায় আগে থেকে চাল, টাকা আছে।
এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানসহ অন্যান্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।