নিজস্ব প্রতিবেদক :
মৌসুমের অন্যতম ভারী বৃষ্টিপাতের সাক্ষী হলো রাজধানীবাসী। সঙ্গে ছিল জলমগ্ন সড়কে আটকে থাকার মতো দুর্ভোগ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যায় শহরের বেশিরভাগ এলাকা। সড়ক থেকে অলিগলি পানির নিচে তলিয়ে নগরবাসীর ভোগান্তির লাগাম আসেনি শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, এলাকা ও অলিগলি এখনও পানির নিচে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনে সিটি করপোরেশনের কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।
গতরাতের বৃষ্টিতে এখনও রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তা, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি পানির নিচে।
সকাল হতে হতে বিভিন্ন সড়েকের পানি নেমে গেলেও রাজধানীর নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি, আজিমপুর, নীলক্ষেত, ঢাকা কলেজ এলাকা, বংশালসহ আরও বেশ কিছু এলাকার সড়ক এখনও জলাবদ্ধ হয়ে আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায়ও থইথই করছে বৃষ্টির পানি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট, কুয়েত মৈত্রী হলসহ বেশকিছু জায়গা তলিয়ে আছে। নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ভেতরে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া নিউমার্কেট এলাকায় চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান মার্কেটসহ আশপাশে বিপণিবিতানগুলোর সামনে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এ এলাকার মিরপুর রোডের অনেক জায়গা থেকে এখনও পানি সরেনি।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন জানান, সকালে হাঁটুপানি মাড়িয়ে দোকান খুলেছেন। অনেক মালামাল ভিজে গেছে। মার্কেটের সামনে পানি জমে থাকায় ক্রেতাসমাগম হচ্ছে না।
নিউমার্কের দোকানি নজরুল বলেন, রাতে সব মাল উঁচু করে রেখে গেছি। সকালে এসে দেখি পানি আরও বেড়েছে। দোকানের ক্যাশ বাক্সসহ প্রায় অর্ধেক কাপড় পানিতে ভিজে গেছে।
পাশের এক বই দোকানি জানায়, অন্তত এক হাজার বই ভিজে গেছে। যেন বন্যা হয়েছে নিউমার্কেটে।
কলেজ ঘুরে দেখা যায়- কলেজের হলের সামনে মাঝে মাঝে যেন স্রোত বইছে। পুকুর প্লাবিত হয়ে একাঠিক হলেও পানি প্রবেশ করেছে। এতে শিক্ষার্থীর ডাইনিং বন্ধ রয়েছে। হল বন্দী হয়ে পড়েছে হাজারো শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ আশপাশের হলগুলোতে প্রবেশ করেছে বৃষ্টির পানি। শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছে হলে। একই অবস্থা দেখা গেছে গ্রীন রোড এলাকায়।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী সাখাওয়াত আল হোসাইন বলেন, সব কিছু পানিতে একাকার। ডাইনিং বন্ধ। হলে পানি উঠেছে। বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। পুরো ক্যাম্পাস যেন পানি আর পানি। এসব পানিতে ময়লা ভাসছে। ভেসে রুমে, হলে ঢুকে পড়ছে।
আজিমপুরের দিক থেকে আসা সিএনজি চালক মোয়াজ্জেম হোসন বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে আজিমপুরে একটা ট্রিপ নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি ওই দিকের রাস্তায় এখনও পানি জমে আছে। সিএনজি নিয়ে গেলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। তাই যাত্রী নামিয়ে রিকশা ঠিক করে দিয়েছি।
বংশাল এলাকারা বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম নিজের ব্যক্তিগত কাজে কাকরাইল গেছেন। তিনি বলেন, বংশালের প্রধান সড়কসহ অলিগলি এখনও পানিতে ডুবে আছে। অলিগলির ময়লা-আবর্জনা পানির সঙ্গে মিশে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আমি একটি কাজে কাকরাইল এসেছি, কিন্তু তার আগে বংশাল পার হওয়ার সময়, প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটু পানি মারিয়ে আমাকে আসতে হয়েছে।
চাঁনখারপুল লেন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ভাঙারির দোকানে কয়েকজন কর্মচারী পানি অপসারণ করছেন। পানি ঢুকে দোকানের বিভিন্ন মালামাল ভিজে গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সড়ক উপচে দোকানের ভেতর পানি ঢুকেছে। সকাল থেকে তারা পানি অপসারণের পাশাপাশি মালামাল সরানোর কাজ করছেন।
নাজিমুদ্দিন রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে সড়কের পাশে জমিয়ে রাখা ময়লা-আবর্জনা ও ড্রেনের ময়লা একাকার হয়ে গেছে। রাত থেকে নোংরা পানি মাড়িয়েই চলাচল করছেন মানুষ। রাস্তার দুপাশের অধিকাংশ দোকানে পানি ঢুকেছে।
এ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাত থেকেই কুইক রেসপন্স টিম জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে। কোথাও পানি জমে থাকলে ১৬১০৬ নাম্বারে নগবাসীকে ফোন করতে বলা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে নগরবাসীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। যদিও এ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।