Dhaka বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজাকারদের নিয়ে বিএনপির জন্ম : প্রধানমন্ত্রী

মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে ও রাজাকারদের নিয়ে বিএনপির জন্ম, তারা কখনো মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে মাদারীপুরের কালকিনিতে সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই উন্নয়নের পথে বাধা দিয়ে আসছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। তাই দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করতে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বিএনপি। সন্ত্রাসী দল বিএনপি ও জামায়াতের দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া নির্বাচন করে। সেই নির্বাচনে ভোট চুরি করে। আর এই ভোট চুরির অপরাধে আন্দোলন হয়, সংগ্রাম হয়, জনগণ প্রতিবাদ করে। সেই প্রতিবাদের ফলে ঠিক ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়। ভোট চুরির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করে বিদায় নিয়েছিল। এরপরে যে নির্বাচন হয় আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, যে আদর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বধীন করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা-আদর্শ তাকে হত্যার পর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং হত্যা, ক্যু ষড়যন্ত্রের যে রাজনীতি শুরু হয়েছিল, তার ফলেই এই দেশের মানুষের ভাগ্য বিড়ম্বনা শুরু হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমান। শুধু ক্ষমতা দখলই করেনি এই দেশ কে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। যেখানে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এই দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯১ মার্কিন ডলার। মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই মাথাপিছু আয় ২৭৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর পরে জিয়া-এরশাদ যারাই ক্ষমতায় এসেছে, এদেশের মানুষের আয় কিন্তু বাড়েনি, তারা বাড়াতে পারেনি। তারা রাষ্ট্রীয় সমস্ত অর্থ-সম্পদ দিয়ে কিছু লোককে ধনী শ্রেণিতে তৈরি করে, একটা এলিট গোষ্ঠী তৈরি করে তাদের মাধ্যমে জনগণের ভোট চুরি করা, সেই হ্যাঁ না ভোট। একদিকে সেনাপ্রধান আরেকদিকে রাষ্ট্রপতির দুই পদ বেআইনিভাবে, সংবিধানবিরোধীভাবে দখল করে একটা নির্বাচনের প্রহশন করে জনগণের ভোট কেড়ে নেয়। এবং তারই পকেট থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি হয় ওই বিএনপি সংগঠন। আর যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের জিয়াউর রহমান ফিরিয়ে আনে। তাদেরকে নিয়ে রাজনীতি করে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, বিদেশিদের কাছে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। খুনিদের রাজত্ব আর হবে না বাংলাদেশে। দেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে, এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়া হবে না। যারা দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রি করতে হবে- এ ধরনের একটি প্রস্তাব আসে। আমাদের দেশের গ্যাস আমাদের সম্পদ। তখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, আমাদের সার কারখানা চলে না। আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ না করে এই সামান্য একটু সম্পদ কীভাবে বিক্রি করব? আমি জাতির পিতার কন্যা, দেশের স্বার্থ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ আমার কখনও ছিল না, থাকবেও না। আমি সেটা নাকচ করে দেই। কিন্তু খালেদা জিয়া মুচলেকা দেয় ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বিক্রি করবে।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ এর নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিএনপি যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেছিল…আমরা ক্ষমতা হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে ১৩ জন সচিবকে ওএসডি করে দেওয়া হয়। শত শত অফিসারের চাকরি চলে যায়। এভাবে নির্যাতন শুরু হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিইএনপির আমল ছিল সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, গ্রেনেড হামলা। দুর্নীতিতে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ পাঁচবার হেয় হয়। তাদের অরাজকতা, দুঃশাসনের কারণে ইমার্জেন্সি আসে।

নৌকা মার্কা ছাড়া কোনো উপায় নেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই নৌকা পরপর তিনবার ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। প্রত্যেকটি ঘর আজ আলোকিত। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই কোনো মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। নৌকায় এদেশের উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার। কাজেই নৌকা মার্কায় ভোট আমাদের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করে সেবা করার সুযোগ দিবেন।

তিনি বলেন, যার যতটুকু জমি উৎপাদন করুন। গণভবন এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন না, এটা এখন একটা ফার্মহাউস হয়ে গেছে। সেখানে আমরা সবই উৎপাদন করি এখন। শুধু তাই না, আমার দাদার জমি যেগুলো পতিত অবস্থায় পড়েছিল সেগুলোকেও চাষের আওতায় এনেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো জমি ফেলে রাখব না। সবজায়গায় আমরা চাষ শুরু করব। নিজেদেরটা যদি আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি তাহলে কারোর কাছে আমাদের আর হাত পাতা লাগবে না। এটা যে শুধু আপনাদের বলছি সেটা না, আমি নিজেও এই কাজ করি। গণভবনের জমিতে আমি সবধরনের উৎপাদন করি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছে সরকার। সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি। এ তারুণ্যকেই তারা স্মার্ট তরুণ সমাজ হিসেবে তৈরি করতে চান। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়তে চান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুব সমাজের জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছি। কম্পিউটার ও ডিজিটাল ডিভাইস এগুলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলদেশ গড়বো, দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, বাংলাদেশ ১৫ বছরে বদলে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবদিকেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন করেছে। এই হলো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সাল। এই ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি তথা স্মার্ট তরুণ সমাজ গড়ে তুলব। একটা স্মার্ট পপুলেশন, আমাদের সরকার হবে স্মার্ট, আমাদের ইকোনমি হবে স্মার্ট, আমাদের সমাজ হবে স্মার্ট।

তিনি বলেন, শিক্ষা-দীক্ষায় এ দেশের জনগণ যেন প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যেতে পারে। আর আজকের তরুণরাই হবে ২০৪১ সালের সৈনিক। তারাই চালাবে এই দেশ। সেভাবেই নিজেদের তৈরি করে তুলতে হবে।

নতুন ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা এবার প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছে তাদের আমি অনুরোধ করবো, নৌকা মার্কায় ভোট দিতে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।

পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আবুল হোসেন যখন যোগাযোগ মন্ত্রী। তখন হঠাৎ বিশ্বব্যাংক একটা অভিযোগ নিয়ে এলো, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। তখন পদ্মা সেতু নির্মাণ এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কেউ দুর্নীতি করবে, এটা কখনই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছিল, আমাদের একটি ব্যাংকের এমডি, সে পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বয়স হয়েছে, তারপরও পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বসে বসে সেই ব্যক্তিই এই ষড়যন্ত্র করেছিল। তখন বিশ্বব্যাংক বললো দুর্নীতি হয়েছে, ঠিক তখনই আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি, তোমরা প্রমাণ করো। বিশ্বব্যাংক পরে কিন্তু প্রমাণ করতে পারে নাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দুর্নীতির অভিযোগে কানাডার আদালতে মামলা হয়েছিল। সেই আদালতে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো দুর্নীতি হয় নাই। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, এই সেতু করবো নিজের টাকায়। এ ঘোষণা দিয়ে বেশি লোকের সমর্থনই পাইনি। তখন জিদ ধরে বসেছিলাম, নিজের টাকা ছাড়া পদ্মা সেতু করবো না। আল্লাহর রহমতে নিজের টাকায় আজ পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মা সেতুর সুফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খুব অল্পসময়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারে। নৌকা মার্কা জয়যুক্ত হয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশে ধারাবাহিক একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এই উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের যা যা প্রয়োজন।

এসময় তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাদারীপুরে আমাদের যারা প্রার্থী তাদের ভোট দেবেন। আমি নৌকা মার্কায় ভোট চাই। কারণ, নৌকাই উন্নয়ন, নৌকাই দেবে সব। নৌকা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এই নৌকা নূহু নবীর নৌকা। যে নৌকা মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই নৌকাই বাংলাদেশের উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার। ‘

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন—কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাদারীপুর-২ আসনের নৌকা প্রার্থী শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী নূর-ই আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় আয়োজত জনসভায় অংশ নেন শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-৩ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী আসন। তাই নিজের জন্য ভোট চাইতে এলাকায় ছুটে যান শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানা-ও।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

দ্য হান্ড্রেডে দল পেলেন পাকিস্তানের ইমাদ ও আমির

রাজাকারদের নিয়ে বিএনপির জন্ম : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৮:০৭:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩

মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে ও রাজাকারদের নিয়ে বিএনপির জন্ম, তারা কখনো মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে মাদারীপুরের কালকিনিতে সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই উন্নয়নের পথে বাধা দিয়ে আসছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। তাই দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করতে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বিএনপি। সন্ত্রাসী দল বিএনপি ও জামায়াতের দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া নির্বাচন করে। সেই নির্বাচনে ভোট চুরি করে। আর এই ভোট চুরির অপরাধে আন্দোলন হয়, সংগ্রাম হয়, জনগণ প্রতিবাদ করে। সেই প্রতিবাদের ফলে ঠিক ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়। ভোট চুরির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করে বিদায় নিয়েছিল। এরপরে যে নির্বাচন হয় আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, যে আদর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বধীন করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা-আদর্শ তাকে হত্যার পর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং হত্যা, ক্যু ষড়যন্ত্রের যে রাজনীতি শুরু হয়েছিল, তার ফলেই এই দেশের মানুষের ভাগ্য বিড়ম্বনা শুরু হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমান। শুধু ক্ষমতা দখলই করেনি এই দেশ কে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। যেখানে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এই দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯১ মার্কিন ডলার। মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই মাথাপিছু আয় ২৭৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর পরে জিয়া-এরশাদ যারাই ক্ষমতায় এসেছে, এদেশের মানুষের আয় কিন্তু বাড়েনি, তারা বাড়াতে পারেনি। তারা রাষ্ট্রীয় সমস্ত অর্থ-সম্পদ দিয়ে কিছু লোককে ধনী শ্রেণিতে তৈরি করে, একটা এলিট গোষ্ঠী তৈরি করে তাদের মাধ্যমে জনগণের ভোট চুরি করা, সেই হ্যাঁ না ভোট। একদিকে সেনাপ্রধান আরেকদিকে রাষ্ট্রপতির দুই পদ বেআইনিভাবে, সংবিধানবিরোধীভাবে দখল করে একটা নির্বাচনের প্রহশন করে জনগণের ভোট কেড়ে নেয়। এবং তারই পকেট থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি হয় ওই বিএনপি সংগঠন। আর যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের জিয়াউর রহমান ফিরিয়ে আনে। তাদেরকে নিয়ে রাজনীতি করে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, বিদেশিদের কাছে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। খুনিদের রাজত্ব আর হবে না বাংলাদেশে। দেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে, এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়া হবে না। যারা দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রি করতে হবে- এ ধরনের একটি প্রস্তাব আসে। আমাদের দেশের গ্যাস আমাদের সম্পদ। তখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, আমাদের সার কারখানা চলে না। আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ না করে এই সামান্য একটু সম্পদ কীভাবে বিক্রি করব? আমি জাতির পিতার কন্যা, দেশের স্বার্থ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ আমার কখনও ছিল না, থাকবেও না। আমি সেটা নাকচ করে দেই। কিন্তু খালেদা জিয়া মুচলেকা দেয় ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বিক্রি করবে।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ এর নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিএনপি যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেছিল…আমরা ক্ষমতা হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে ১৩ জন সচিবকে ওএসডি করে দেওয়া হয়। শত শত অফিসারের চাকরি চলে যায়। এভাবে নির্যাতন শুরু হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিইএনপির আমল ছিল সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, গ্রেনেড হামলা। দুর্নীতিতে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ পাঁচবার হেয় হয়। তাদের অরাজকতা, দুঃশাসনের কারণে ইমার্জেন্সি আসে।

নৌকা মার্কা ছাড়া কোনো উপায় নেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই নৌকা পরপর তিনবার ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। প্রত্যেকটি ঘর আজ আলোকিত। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই কোনো মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। নৌকায় এদেশের উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার। কাজেই নৌকা মার্কায় ভোট আমাদের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করে সেবা করার সুযোগ দিবেন।

তিনি বলেন, যার যতটুকু জমি উৎপাদন করুন। গণভবন এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন না, এটা এখন একটা ফার্মহাউস হয়ে গেছে। সেখানে আমরা সবই উৎপাদন করি এখন। শুধু তাই না, আমার দাদার জমি যেগুলো পতিত অবস্থায় পড়েছিল সেগুলোকেও চাষের আওতায় এনেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো জমি ফেলে রাখব না। সবজায়গায় আমরা চাষ শুরু করব। নিজেদেরটা যদি আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি তাহলে কারোর কাছে আমাদের আর হাত পাতা লাগবে না। এটা যে শুধু আপনাদের বলছি সেটা না, আমি নিজেও এই কাজ করি। গণভবনের জমিতে আমি সবধরনের উৎপাদন করি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছে সরকার। সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি। এ তারুণ্যকেই তারা স্মার্ট তরুণ সমাজ হিসেবে তৈরি করতে চান। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়তে চান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুব সমাজের জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছি। কম্পিউটার ও ডিজিটাল ডিভাইস এগুলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলদেশ গড়বো, দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, বাংলাদেশ ১৫ বছরে বদলে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবদিকেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন করেছে। এই হলো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সাল। এই ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি তথা স্মার্ট তরুণ সমাজ গড়ে তুলব। একটা স্মার্ট পপুলেশন, আমাদের সরকার হবে স্মার্ট, আমাদের ইকোনমি হবে স্মার্ট, আমাদের সমাজ হবে স্মার্ট।

তিনি বলেন, শিক্ষা-দীক্ষায় এ দেশের জনগণ যেন প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যেতে পারে। আর আজকের তরুণরাই হবে ২০৪১ সালের সৈনিক। তারাই চালাবে এই দেশ। সেভাবেই নিজেদের তৈরি করে তুলতে হবে।

নতুন ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা এবার প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছে তাদের আমি অনুরোধ করবো, নৌকা মার্কায় ভোট দিতে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।

পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আবুল হোসেন যখন যোগাযোগ মন্ত্রী। তখন হঠাৎ বিশ্বব্যাংক একটা অভিযোগ নিয়ে এলো, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। তখন পদ্মা সেতু নির্মাণ এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কেউ দুর্নীতি করবে, এটা কখনই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছিল, আমাদের একটি ব্যাংকের এমডি, সে পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বয়স হয়েছে, তারপরও পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বসে বসে সেই ব্যক্তিই এই ষড়যন্ত্র করেছিল। তখন বিশ্বব্যাংক বললো দুর্নীতি হয়েছে, ঠিক তখনই আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি, তোমরা প্রমাণ করো। বিশ্বব্যাংক পরে কিন্তু প্রমাণ করতে পারে নাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দুর্নীতির অভিযোগে কানাডার আদালতে মামলা হয়েছিল। সেই আদালতে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো দুর্নীতি হয় নাই। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, এই সেতু করবো নিজের টাকায়। এ ঘোষণা দিয়ে বেশি লোকের সমর্থনই পাইনি। তখন জিদ ধরে বসেছিলাম, নিজের টাকা ছাড়া পদ্মা সেতু করবো না। আল্লাহর রহমতে নিজের টাকায় আজ পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মা সেতুর সুফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খুব অল্পসময়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারে। নৌকা মার্কা জয়যুক্ত হয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশে ধারাবাহিক একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এই উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের যা যা প্রয়োজন।

এসময় তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাদারীপুরে আমাদের যারা প্রার্থী তাদের ভোট দেবেন। আমি নৌকা মার্কায় ভোট চাই। কারণ, নৌকাই উন্নয়ন, নৌকাই দেবে সব। নৌকা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এই নৌকা নূহু নবীর নৌকা। যে নৌকা মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই নৌকাই বাংলাদেশের উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার। ‘

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন—কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাদারীপুর-২ আসনের নৌকা প্রার্থী শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী নূর-ই আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় আয়োজত জনসভায় অংশ নেন শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-৩ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী আসন। তাই নিজের জন্য ভোট চাইতে এলাকায় ছুটে যান শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানা-ও।