রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি :
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে শবে বরাতের মিলাদে একটি প্যাকেটের মিষ্টি খেয়ে ১২ জন অসুস্থ হয়েছেন। তাদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মসজিদের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক ও জিল্লু নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
অসুস্থদের মধ্যে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৮ জন হলেন- বহরপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই মসজিদের মোয়াজ্জিন মোজাম্মেল শেখ (৬৫), বহরপুর গ্রামের মৃত শফিজউদ্দিন শেখের ছেলে আরিফ শেখ (৩২), মিন্টু শেখ (৩৫), সালাউদ্দিন শেখের ছেলে শিহাব শেখ (১৮), মাসুম শেখের ছেলে সোহান শেখ (১৭), আনয়ার মন্ডলের ছেলে রিমন মন্ডল (১৭), এলেম শেখের ছেলে মিনার শেখ (২২) ও আলী শেখের ছেলে সোহান শেখ (১৯)।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা চার জন হলেন- বহরপুর গ্রামের শফিউদ্দিন শেখের ছেলে বনি আমিন (৩০), রাজু শেখের ছেলে মাহিম শেখ (১৬), রাজ্জাক শেখের ছেলে মোরসালিন শেখ (১২) ও মোস্তাফিজুর রহমান (৭)।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহান শেখ বলেন, শুক্রবার এশার নামাজের পর পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মিলাদ মাহফিলে অনেকেই মিষ্টি আনেন। আমরা প্রায় ১৫ জন মিষ্টি প্যাকেটিংয়ের দায়িত্ব পালন করছিলাম। মিলাদ শেষে সকলের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এসময় মসজিদের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক এসে আমাদের (মিষ্টি প্যাকেটের দায়িত্বে থাকাদের) এক প্যাকেট চমচম দেয় খাওয়ার জন্য। ওই প্যাকেট খুলে আমি একটি মিষ্টির অর্ধেক খাওয়ার সাথেই মাথা ঘুরতে থাকে। তবে তখন আমি তেমন কিছু মনে না পুরো মিষ্টি খাই। এর ৩ থেকে ৪ মিনিট পরই আমার মাথা ঘুরতে থাকে ও আমি পড়ে যেতে থাকি। পরে আমার আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর আমি নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পাই।
আরেক যুবক আরিফ শেখ বলেন, আমরা যারা ওই প্যাকেটের মিষ্টি খেয়েছি তাদের সকলেরই খাওয়ার ২ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে মাথা ঘোরা শুরু হয়। এরপর আমরা অজ্ঞান হয়ে যাই। যারা অন্য প্যাকেটের মিষ্টি খেয়েছে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। নিশ্চয়ই ওই প্যাকেটের মিষ্টির মধ্যে কোনো ওষুধ ছিল। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার বিচার চাই।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, রোগীদের আমরা আননোন পয়জনিং হিসেবে ভর্তি করে এর যে চিকিৎসা সেই চিকিৎসা দিয়েছি। রোগীরা যেটি বলছেন যে মিষ্টি খাওয়ার পর তাদের কারোর পেট ব্যথা হয়নি। তাদের অভিযোগ, তারা মিষ্টি খাওয়ার ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে কিছু টের পাচ্ছিলেন না। যারা দাঁড়িয়েছিলেন মনে হচ্ছিল তারা পড়ে যাচ্ছেন এবং পরে তাদের আর কিছু মনে নেই।
তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে যে মিষ্টির ভেতরে এমন কিছু ছিল যেটি তাদের ব্রেনের ওপরে কাজ করেছে। এজন্য তাদের ব্রেন ঠিকমতো কাজ করেনি। তবে এখন তারা সকলেই সুস্থ আছেন। আমরা অবশিষ্ট মিষ্টিগুলো সংরক্ষণ করে ঢাকায় পরীক্ষা করার জন্য পাঠাবো। মিষ্টির মধ্যে আসলে কি ছিল তা আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করব।
বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বহরপুর পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে মিলাদের মিষ্টি খেয়ে ১২ জন অসুস্থ হয়েছেন। তাদেরকে ওই মিষ্টির প্যাকেট দিয়েছিলেন মসজিদের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আব্দুল খালেক ও জিল্লু নামে একজনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।