Dhaka সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে থ্রি-হুইলার, ঘটছে দুর্ঘটনা

রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি : 

রাজবাড়ীর মহাসড়ক এখন অবৈধ যানবাহনের অভয়ারণ্য। কাগজে-কলমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস্তবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়কের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। দ্রুতগতির বাস-ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা এসব দুর্বল যানবাহনে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

গত মাসে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কল্যাণপুর ও আলিপুর এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনা শুধু নসিমান চাপায় নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।

বিআরটিএ রাজবাড়ী সার্কেলের তথ্য অনুযায়ী গত ১৭ মাসে জেলায় মোট ৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৫২ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৫ জন। আহত ৭৫ জনের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও অবৈধ মাহেন্দ্র দ্বারা সংগঠিত হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে তাদের ৪৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড়ে থেকে পাংশা উপজেলায় শেয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার, গোয়ালন্দ মোড় থেকে বসন্তপুর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের অনেক স্থানই দখল করে আছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মাহিন্দ্র। সংযোগ সড়কগুলোতে রয়েছে একাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড। সেখানে এলোমেলোভাবে পার্ক করা হয়েছে শত শত যান। মহাসড়কের রাস্তা ইজারা দেওয়ার ঘটনার তথ্য উঠে এসেছে সরেজমিনে সংগ্রহ করা প্রতিবেদনে। মহাসড়কে গোয়ালন্দ মোড়, গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, চন্দনী বাসট্যান্ড, পাংশা আজিজ সরদার বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে এসব অবৈধ যানের স্ট্যান্ড। এ ছাড়া, রাজবাড়ী শহরের বড়পুল ও রেলগেট এলাকায় রয়েছে অস্থায়ী স্ট্যান্ড।

আহলাদিপুর হাইওয়ে থানা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে রয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ মাসোয়ারা নিয়ে এসব যানবাহন চলার অনুমতি দিয়ে থাকেন। এ কারণে গোপনে নয়, বরং প্রকাশ্যে দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে তারা।

একটি দূরপাল্লার বাসের চালক রবিউল আজম বলেন, মহাসড়কে যাতায়াতরত গাড়িগুলো দ্রুতগামী হবে, এটিই স্বাভাবিক। দেখা যায়, এই দ্রুতগতির সঙ্গে পাল্লা দেয় থ্রি-হুইলারগুলো। এতে দুর্ঘটনা ঘটে অহরহ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন, মাহিন্দ্র এসব যানবাহন দখল করে থাকে। যে কারণে গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত দ্রুতগতির বাস ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতি তোলা যায় না। অনেক সময় যাত্রীরা আমাদের রাগ করেন।

গোয়ালন্দ মোড় এলাকার বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন বলেন, গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার রাস্তা। গোয়ালন্দ মোড়ের সঙ্গেই হাইওয়ে থানা। অথচ গোয়ালন্দ, খানখানাপুর, মকবুলের দোকান, গোয়ালন্দ বাস স্ট্যান্ড, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় মহাসড়কের ওপর অবৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব স্থানে অর্ধশত করে গাড়ি সবসময় থাকে। হাইওয়ে পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। নামে মাত্র দু-একটা যানবাহন ধরে আটক করে জরিমানা আদায় করে। এগুলো চোর-পুলিশ খেলা মাত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাহেন্দ্রচালক বলেন, মহাসড়কে চলতে গেলে গোয়ালন্দ মোড়ে ১০ টাকা, গোয়ালন্দ বাজার ৪০ টাকা, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে আমাদের ১০০ টাকা দিতে হয় সড়কে। আগে ঝামেলা হলেও এখন ঝামেলা হয় না। পুলিশ এখন গাড়ি ধরে না।

মহাসড়কে অবৈধ ত্রি হুইলার চলাচলের ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ত্রি-হুইলারের সমস্যা দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। আলাদা সার্ভিস লেন না থাকায় এবং জনগণের সড়কে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের পর্যাপ্ত বিকল্প যানবাহন না থাকায় সমস্যাটা জটিল হচ্ছে। প্রতিনিয়ত অবৈধ থ্রি হুইলার বন্ধে পুলিশ কাজ করছেন।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য ত্রি-হুইলারের জন্য আলদা সার্ভিস লেন করা যেতে পারে। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

রাজবাড়ীতে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে থ্রি-হুইলার, ঘটছে দুর্ঘটনা

প্রকাশের সময় : ১২:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি : 

রাজবাড়ীর মহাসড়ক এখন অবৈধ যানবাহনের অভয়ারণ্য। কাগজে-কলমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস্তবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়কের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। দ্রুতগতির বাস-ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা এসব দুর্বল যানবাহনে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

গত মাসে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কল্যাণপুর ও আলিপুর এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনা শুধু নসিমান চাপায় নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।

বিআরটিএ রাজবাড়ী সার্কেলের তথ্য অনুযায়ী গত ১৭ মাসে জেলায় মোট ৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৫২ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৫ জন। আহত ৭৫ জনের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও অবৈধ মাহেন্দ্র দ্বারা সংগঠিত হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে তাদের ৪৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড়ে থেকে পাংশা উপজেলায় শেয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার, গোয়ালন্দ মোড় থেকে বসন্তপুর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের অনেক স্থানই দখল করে আছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মাহিন্দ্র। সংযোগ সড়কগুলোতে রয়েছে একাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড। সেখানে এলোমেলোভাবে পার্ক করা হয়েছে শত শত যান। মহাসড়কের রাস্তা ইজারা দেওয়ার ঘটনার তথ্য উঠে এসেছে সরেজমিনে সংগ্রহ করা প্রতিবেদনে। মহাসড়কে গোয়ালন্দ মোড়, গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, চন্দনী বাসট্যান্ড, পাংশা আজিজ সরদার বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে এসব অবৈধ যানের স্ট্যান্ড। এ ছাড়া, রাজবাড়ী শহরের বড়পুল ও রেলগেট এলাকায় রয়েছে অস্থায়ী স্ট্যান্ড।

আহলাদিপুর হাইওয়ে থানা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে রয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ মাসোয়ারা নিয়ে এসব যানবাহন চলার অনুমতি দিয়ে থাকেন। এ কারণে গোপনে নয়, বরং প্রকাশ্যে দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে তারা।

একটি দূরপাল্লার বাসের চালক রবিউল আজম বলেন, মহাসড়কে যাতায়াতরত গাড়িগুলো দ্রুতগামী হবে, এটিই স্বাভাবিক। দেখা যায়, এই দ্রুতগতির সঙ্গে পাল্লা দেয় থ্রি-হুইলারগুলো। এতে দুর্ঘটনা ঘটে অহরহ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন, মাহিন্দ্র এসব যানবাহন দখল করে থাকে। যে কারণে গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত দ্রুতগতির বাস ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতি তোলা যায় না। অনেক সময় যাত্রীরা আমাদের রাগ করেন।

গোয়ালন্দ মোড় এলাকার বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন বলেন, গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার রাস্তা। গোয়ালন্দ মোড়ের সঙ্গেই হাইওয়ে থানা। অথচ গোয়ালন্দ, খানখানাপুর, মকবুলের দোকান, গোয়ালন্দ বাস স্ট্যান্ড, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় মহাসড়কের ওপর অবৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব স্থানে অর্ধশত করে গাড়ি সবসময় থাকে। হাইওয়ে পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। নামে মাত্র দু-একটা যানবাহন ধরে আটক করে জরিমানা আদায় করে। এগুলো চোর-পুলিশ খেলা মাত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাহেন্দ্রচালক বলেন, মহাসড়কে চলতে গেলে গোয়ালন্দ মোড়ে ১০ টাকা, গোয়ালন্দ বাজার ৪০ টাকা, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে আমাদের ১০০ টাকা দিতে হয় সড়কে। আগে ঝামেলা হলেও এখন ঝামেলা হয় না। পুলিশ এখন গাড়ি ধরে না।

মহাসড়কে অবৈধ ত্রি হুইলার চলাচলের ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ত্রি-হুইলারের সমস্যা দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। আলাদা সার্ভিস লেন না থাকায় এবং জনগণের সড়কে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের পর্যাপ্ত বিকল্প যানবাহন না থাকায় সমস্যাটা জটিল হচ্ছে। প্রতিনিয়ত অবৈধ থ্রি হুইলার বন্ধে পুলিশ কাজ করছেন।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য ত্রি-হুইলারের জন্য আলদা সার্ভিস লেন করা যেতে পারে। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে।