Dhaka শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজনীতি করা মানে বিচ্ছিন্নভাবে বা জোড়াতালি দিয়ে কোনো কাজ করা নয় : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনীতি করা মানে বিচ্ছিন্নভাবে বা জোড়াতালি দিয়ে কোনো কাজ করা নয়। প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, দলের নেতাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্তরিকতা।

শনিবার (২৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত’ বিষয়ক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৫২ বছরে একটি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তনের বিধানই আমরা তৈরি করতে পারিনি। সেখানে আজকে এসে হঠাৎ করে সব ঠিক করে ফেলবো, এমন কিছু আমি মনে করি না। বিচ্ছিন্নভাবে জোড়া তালি দিয়ে কিছু করা যায় না। কিছু করতে হলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও চিন্তা দরকার। রাজনৈতিক দলের আন্তরিকতা প্রয়োজন। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে এবার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা এখন যে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের কথা বলছি, সেখানে দীর্ঘদিনের অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি কাটিয়ে একদিনে সুন্দর রাষ্ট্র গড়ে তুলব— এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। এক বছরের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন এমনটাও মনে করার কারণ নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কাঠামোটা সংস্কার করা দরকার। কাঠামোটা বদলাতে হবে। গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। আমরা লাগাবো বেগুন গাছ, আসা করবো কমলালেবু তা তো হবে না। আমাদের সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংকটের অন্যতম কারণ হলো দুর্নীতি। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি। ধীরে ধীরে এটা আরও খারাপের দিকে গেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতিতে যে সংকট তার মধ্যে অন্যতম কারণ দুর্নীতি। সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ওপর, যারা ক্ষমতায় এসে কীভাবে দেশটাকে পরিবর্তন করবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল জনগণ, কিন্তু গত ১৫ বছরে তারা এই দেশকে সর্বশ্বান্ত করে দিয়েছে। সেই জায়গা থেকে এক বছরের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন এমনটা মনে করার কারণ নেই।

তিনি বলেন, আমাদের সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারা। আমার খুব অবাক লাগে— একজন স্কুল শিক্ষকের সমস্যা সমাধান করতে তাকে ঢাকায় যেতে হয়, এটার তো কোনো প্রয়োজন নেই। ওই যে সিস্টেম, ওই সিস্টেমে যদি সেন্ট্রালে না আসে তাহলে ঘুষটা আসবে কোত্থেকে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শুনতে খারাপ লাগবে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, স্কুলের শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, নার্সদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে।

তিনি মনে করেন, যে অবস্থাতে এ ধরনের অনিয়ম চলতে থাকে, যে ধরনের বৈষম্য চলতে থাকে সেখানে যেয়ে আপনি রাতারাতি কোনো কিছু গড়ে ফেলতে পারবেন, এটা কঠিন।

আমরা বিপ্লবের কথা চিন্তা করতে পারছি না উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, তাই আমাদের এখন কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করে এমন সিস্টেমে যেতে হবে, যেখানে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা ন্যূনতম ন্যায়বিচার, সেই ন্যায়বিচারটা নিশ্চিত করবে জনগণ।

মির্জা ফখরুল বলেন, গোটা জাতি যে বিষয়টা নিয়ে অত্যন্ত বেশি চিন্তিত, আলোচনা করছে, কনসার্ন হচ্ছে, সেটা হলো সংস্কার, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা এখন আসতে পারিনি। আবার নির্বাচন নিয়েও একই ব্যাপার। জাতি এখন ওই দিকেই কিছুটা মনোনিবেশ করেছে।

এই সমস্যাগুলো ও বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন কথা বলেছি, সংগ্রাম-লড়াই করেছি জানিয়ে তিনি বলেন, এটা মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে- এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এবং আমরা এখন যে সংস্কার, রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কথা বলছি। একই সাথে অনেকে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথাও বলছি। দীর্ঘদিনের অনাচার, নৈরাজ্য, দুর্নীতিগুলোকে কাটিয়ে একদিনেই সুন্দর করে একটা রাষ্ট্র তৈরি করব, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের মধ্য দিয়ে একটা নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, ৫৩ বছরে আমরা একটা নিয়মিতভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে, ক্ষমতা হস্তান্তরের বা ক্ষমতা পরিবর্তনের বিধানই তৈরি করতে পারিনি। সেখানে আজকে এসে হঠাৎ করে এই মুহূর্তের মধ্যে আমরা সবকিছু ঠিক করে ফেলব, এটা মনে করার কারণ নেই। ৫৩ বছর ধরেই চেষ্টা করছি, ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে করি বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছুই করা যায় না। এবং জোড়াতালি দিয়েও কোনো কিছু করা যায় না। এটার সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট চিন্তা প্রয়োজন। এবং রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী তাদের অত্যন্ত সততা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে এই দেশকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। একেবারে বলা যায় যে ভূমিধস করে দিয়েছে। সেই জায়গায় এখান থেকে আবার এক বছরে দেড় বছরের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আর সামাজিক সুরক্ষা কার? নাগরিকের তো, মানুষের তো, সেটা আপনার বিধবাই হোক আর সেটা আপনার কম পয়সার বয়স্কই হোক সবকিছু নির্ভর করত তার কাঠামোর ওপরে। তার ব্যবস্থার ওপরে। আজকে আমাদের সবকিছুই নির্ধারণ করে আমলারা। আমলারাই নির্ধারণ করে সবকিছু। এবং সেখান থেকে সবকিছু নেমে আসে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, আমার কাছে অবাক লাগে, একজন স্কুল শিক্ষককে তার সমস্যার সমাধান করতে হলে ঢাকায় আসতে হয়। সেন্টারে আসতে হয়। যেটার তো কোনো প্রয়োজন নেই। আমার মনে হয় যে জেলাতেই সেটা যথেষ্ট তা সমাধানে। কিন্তু ওই যে সিস্টেম, ওই সিস্টেম যদি সেন্ট্রালে না আসে তাহলে ঘুষ আসবে কোত্থেকে? এগুলো হচ্ছে বাস্তবতা, শুনে খারাপ লাগবে। বাট দ্যাটস ট্রুথ।

তিনি বলেন, ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, স্কুলের শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, নার্সদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, ব্যবস্থাতে এই ধরনের অনিয়ম চলতে থাকে, যে ধরনের বৈষম্য চলতে থাকে, সেখানে সব দুর করে ফেলতে পারবেন, এটা খুব ডিফিকাল্ট।

হতাশাবাদী নই আমি এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, হতাশা আসে, আমি হতাশাবাদী কখনোই ছিলাম না। আমি হতাশাবাদী হতেও চাই না। কিন্তু এটা সত্য কথা, আমি যখন একটা প্রগতিবাদী সমাজ দেখতে চাই। আমি যখন একটা মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য একটা ব্যবস্থা চাই। যখন জনগণের যে বৈষম্য কমিয়ে আনতে চাই। তার আর্থিক বৈষম্য সব কমিয়ে আনতে চাই। তখন যদি আমি দেখি যে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ভিন্ন চেষ্টা করছে। এবং একটা উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তখন তো হতাশা আসবেই।

তিনি বলেন, যদি একটা সুষ্ঠ নির্বাচন করতে পারি, সুষ্ঠু নির্বাচন করে যদি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পার্লামেন্ট গঠন করতে পারি। তাহলে সেখানে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা মূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারব। মনে করি, আপাতত কিছুটা সমস্যার সমাধান করতে পারব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ শেষ করে দিয়ে গেছে। সেগুলোকে আবার নতুন করে গড়তে হবে। সেজন্য তো মানুষগুলো তৈরি করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সচিবালয়ে যাবেন, যারা বসে আছে তারাই সবকিছু নির্ধারণ করে। আমাদের উপদেষ্টারা যারা দায়িত্ব পালন করছেন, এখন অনেক ক্ষেত্রে তারা অসহায়। তারপরেও আশা করি, তারা এতদিন চেষ্টা করেছেন, চেষ্টাটা নিয়ে যারা সংস্কারের কমিশনগুলো আছে। তারা সবাই মিলে শুরু করতে পারি, শুরু করতে পারলেই আমরা একটা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, যেটা বৈষম্যহীননের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।

ব্যাটারিচালিত এক রিকশাচালক কিছুদিন আগে বলেছিলেন, স্যার আপনার তো আমাদের মতো গরিব মানুষের লগে পারেন, অন্য কারো লগে পারেন না’- এমন মন্তব্য ছুঁড়ে দিল মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন বা জোড়াতালি দিয়ে করা যায় না, এটা আমি আগেও বলেছি। লাভ নেই তো। একজন কৃষক তো আপনার পুরোপুরিভাবে তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ভরে গিয়েছে, কেন? কারণ তার কর্ম নেই, কর্মসংস্থান নেই, তাকে বেঁচে থাকতে হলে রিকশাটা চালিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। সুতরাং গভমেন্টকে সেই পলিসি আনতে হবে, যে পলিসিতে তার বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তৈরি হবে। এবং একইসাথে এই রাস্তাগুলোকে ঠিক করা সম্ভব হবে। এটাই হচ্ছে মূল কথা।

তিনি বলেন, সবশেষ কথা, ঐক্যবদ্ধ থেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে, দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যৎ তৈরি করার জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ মানুষ পারে, ’৫২ তে পেরেছে, ’৬৯ এ পেরেছে , ’৭০ এ পেরেছে, ’৭১ এ পেরেছে। সুতরাং না পারার কোনো কারণ নেই। আর সবশেষে (চব্বিশের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান) যেটা পেরেছে, এটা তো অভাবনীয় অসাধারণ, সেই ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, আমরা পারব।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

খানাখন্দে ভরা সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক, তিন উপজেলার যাত্রীদের দুর্ভোগ

রাজনীতি করা মানে বিচ্ছিন্নভাবে বা জোড়াতালি দিয়ে কোনো কাজ করা নয় : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৩:৩৯:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনীতি করা মানে বিচ্ছিন্নভাবে বা জোড়াতালি দিয়ে কোনো কাজ করা নয়। প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, দলের নেতাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্তরিকতা।

শনিবার (২৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত’ বিষয়ক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৫২ বছরে একটি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তনের বিধানই আমরা তৈরি করতে পারিনি। সেখানে আজকে এসে হঠাৎ করে সব ঠিক করে ফেলবো, এমন কিছু আমি মনে করি না। বিচ্ছিন্নভাবে জোড়া তালি দিয়ে কিছু করা যায় না। কিছু করতে হলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও চিন্তা দরকার। রাজনৈতিক দলের আন্তরিকতা প্রয়োজন। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে এবার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা এখন যে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের কথা বলছি, সেখানে দীর্ঘদিনের অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি কাটিয়ে একদিনে সুন্দর রাষ্ট্র গড়ে তুলব— এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। এক বছরের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন এমনটাও মনে করার কারণ নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কাঠামোটা সংস্কার করা দরকার। কাঠামোটা বদলাতে হবে। গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। আমরা লাগাবো বেগুন গাছ, আসা করবো কমলালেবু তা তো হবে না। আমাদের সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংকটের অন্যতম কারণ হলো দুর্নীতি। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি। ধীরে ধীরে এটা আরও খারাপের দিকে গেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতিতে যে সংকট তার মধ্যে অন্যতম কারণ দুর্নীতি। সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ওপর, যারা ক্ষমতায় এসে কীভাবে দেশটাকে পরিবর্তন করবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল জনগণ, কিন্তু গত ১৫ বছরে তারা এই দেশকে সর্বশ্বান্ত করে দিয়েছে। সেই জায়গা থেকে এক বছরের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন এমনটা মনে করার কারণ নেই।

তিনি বলেন, আমাদের সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারা। আমার খুব অবাক লাগে— একজন স্কুল শিক্ষকের সমস্যা সমাধান করতে তাকে ঢাকায় যেতে হয়, এটার তো কোনো প্রয়োজন নেই। ওই যে সিস্টেম, ওই সিস্টেমে যদি সেন্ট্রালে না আসে তাহলে ঘুষটা আসবে কোত্থেকে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শুনতে খারাপ লাগবে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, স্কুলের শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, নার্সদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে।

তিনি মনে করেন, যে অবস্থাতে এ ধরনের অনিয়ম চলতে থাকে, যে ধরনের বৈষম্য চলতে থাকে সেখানে যেয়ে আপনি রাতারাতি কোনো কিছু গড়ে ফেলতে পারবেন, এটা কঠিন।

আমরা বিপ্লবের কথা চিন্তা করতে পারছি না উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, তাই আমাদের এখন কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করে এমন সিস্টেমে যেতে হবে, যেখানে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা ন্যূনতম ন্যায়বিচার, সেই ন্যায়বিচারটা নিশ্চিত করবে জনগণ।

মির্জা ফখরুল বলেন, গোটা জাতি যে বিষয়টা নিয়ে অত্যন্ত বেশি চিন্তিত, আলোচনা করছে, কনসার্ন হচ্ছে, সেটা হলো সংস্কার, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা এখন আসতে পারিনি। আবার নির্বাচন নিয়েও একই ব্যাপার। জাতি এখন ওই দিকেই কিছুটা মনোনিবেশ করেছে।

এই সমস্যাগুলো ও বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন কথা বলেছি, সংগ্রাম-লড়াই করেছি জানিয়ে তিনি বলেন, এটা মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে- এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এবং আমরা এখন যে সংস্কার, রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কথা বলছি। একই সাথে অনেকে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথাও বলছি। দীর্ঘদিনের অনাচার, নৈরাজ্য, দুর্নীতিগুলোকে কাটিয়ে একদিনেই সুন্দর করে একটা রাষ্ট্র তৈরি করব, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের মধ্য দিয়ে একটা নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, ৫৩ বছরে আমরা একটা নিয়মিতভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে, ক্ষমতা হস্তান্তরের বা ক্ষমতা পরিবর্তনের বিধানই তৈরি করতে পারিনি। সেখানে আজকে এসে হঠাৎ করে এই মুহূর্তের মধ্যে আমরা সবকিছু ঠিক করে ফেলব, এটা মনে করার কারণ নেই। ৫৩ বছর ধরেই চেষ্টা করছি, ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে করি বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছুই করা যায় না। এবং জোড়াতালি দিয়েও কোনো কিছু করা যায় না। এটার সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট চিন্তা প্রয়োজন। এবং রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী তাদের অত্যন্ত সততা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে এই দেশকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। একেবারে বলা যায় যে ভূমিধস করে দিয়েছে। সেই জায়গায় এখান থেকে আবার এক বছরে দেড় বছরের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আর সামাজিক সুরক্ষা কার? নাগরিকের তো, মানুষের তো, সেটা আপনার বিধবাই হোক আর সেটা আপনার কম পয়সার বয়স্কই হোক সবকিছু নির্ভর করত তার কাঠামোর ওপরে। তার ব্যবস্থার ওপরে। আজকে আমাদের সবকিছুই নির্ধারণ করে আমলারা। আমলারাই নির্ধারণ করে সবকিছু। এবং সেখান থেকে সবকিছু নেমে আসে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, আমার কাছে অবাক লাগে, একজন স্কুল শিক্ষককে তার সমস্যার সমাধান করতে হলে ঢাকায় আসতে হয়। সেন্টারে আসতে হয়। যেটার তো কোনো প্রয়োজন নেই। আমার মনে হয় যে জেলাতেই সেটা যথেষ্ট তা সমাধানে। কিন্তু ওই যে সিস্টেম, ওই সিস্টেম যদি সেন্ট্রালে না আসে তাহলে ঘুষ আসবে কোত্থেকে? এগুলো হচ্ছে বাস্তবতা, শুনে খারাপ লাগবে। বাট দ্যাটস ট্রুথ।

তিনি বলেন, ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, স্কুলের শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, নার্সদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, ব্যবস্থাতে এই ধরনের অনিয়ম চলতে থাকে, যে ধরনের বৈষম্য চলতে থাকে, সেখানে সব দুর করে ফেলতে পারবেন, এটা খুব ডিফিকাল্ট।

হতাশাবাদী নই আমি এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, হতাশা আসে, আমি হতাশাবাদী কখনোই ছিলাম না। আমি হতাশাবাদী হতেও চাই না। কিন্তু এটা সত্য কথা, আমি যখন একটা প্রগতিবাদী সমাজ দেখতে চাই। আমি যখন একটা মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য একটা ব্যবস্থা চাই। যখন জনগণের যে বৈষম্য কমিয়ে আনতে চাই। তার আর্থিক বৈষম্য সব কমিয়ে আনতে চাই। তখন যদি আমি দেখি যে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ভিন্ন চেষ্টা করছে। এবং একটা উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তখন তো হতাশা আসবেই।

তিনি বলেন, যদি একটা সুষ্ঠ নির্বাচন করতে পারি, সুষ্ঠু নির্বাচন করে যদি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পার্লামেন্ট গঠন করতে পারি। তাহলে সেখানে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা মূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারব। মনে করি, আপাতত কিছুটা সমস্যার সমাধান করতে পারব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ শেষ করে দিয়ে গেছে। সেগুলোকে আবার নতুন করে গড়তে হবে। সেজন্য তো মানুষগুলো তৈরি করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সচিবালয়ে যাবেন, যারা বসে আছে তারাই সবকিছু নির্ধারণ করে। আমাদের উপদেষ্টারা যারা দায়িত্ব পালন করছেন, এখন অনেক ক্ষেত্রে তারা অসহায়। তারপরেও আশা করি, তারা এতদিন চেষ্টা করেছেন, চেষ্টাটা নিয়ে যারা সংস্কারের কমিশনগুলো আছে। তারা সবাই মিলে শুরু করতে পারি, শুরু করতে পারলেই আমরা একটা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, যেটা বৈষম্যহীননের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।

ব্যাটারিচালিত এক রিকশাচালক কিছুদিন আগে বলেছিলেন, স্যার আপনার তো আমাদের মতো গরিব মানুষের লগে পারেন, অন্য কারো লগে পারেন না’- এমন মন্তব্য ছুঁড়ে দিল মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন বা জোড়াতালি দিয়ে করা যায় না, এটা আমি আগেও বলেছি। লাভ নেই তো। একজন কৃষক তো আপনার পুরোপুরিভাবে তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ভরে গিয়েছে, কেন? কারণ তার কর্ম নেই, কর্মসংস্থান নেই, তাকে বেঁচে থাকতে হলে রিকশাটা চালিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। সুতরাং গভমেন্টকে সেই পলিসি আনতে হবে, যে পলিসিতে তার বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তৈরি হবে। এবং একইসাথে এই রাস্তাগুলোকে ঠিক করা সম্ভব হবে। এটাই হচ্ছে মূল কথা।

তিনি বলেন, সবশেষ কথা, ঐক্যবদ্ধ থেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে, দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যৎ তৈরি করার জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ মানুষ পারে, ’৫২ তে পেরেছে, ’৬৯ এ পেরেছে , ’৭০ এ পেরেছে, ’৭১ এ পেরেছে। সুতরাং না পারার কোনো কারণ নেই। আর সবশেষে (চব্বিশের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান) যেটা পেরেছে, এটা তো অভাবনীয় অসাধারণ, সেই ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, আমরা পারব।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু প্রমুখ।