নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণফোরামের সভাপতি পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিক, সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে এ ঘোষণা দেন তিনি।
অসুস্থতার কারণে ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতি তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের কোষাধ্যক্ষ শাহ নূরুজ্জামান।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আপনাদের নিয়ে পথ চলেছি, জাতীয় সমস্যা ও সংকট নিরসনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার বয়স এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় এখন আর সক্রিয়ভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমি সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে তথা গণফোরামের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। তবে আমি আমার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে দেশ ও জাতির জন্য সাধ্য মোতাবেক অবদান রাখতে চেষ্টা করব। দলের প্রতিও আমার আন্তরিকতা, দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আমার আবেগ-অনুভূতি, সহানুভূতি-সহযোগিতা ও পরামর্শ সব সময়ই থাকবে।
গণফোরামের কাউন্সিলরগণকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা দলকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে আজ নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করবেন। আজকের এই কাউন্সিলে আপনারা গণতান্ত্রিকভাবে যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে যাচ্ছেন, আমি আশা করব এই কমিটি আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। দেশের গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন। জয় হোক গণফোরামের জয় হোক জনতার।
তিনি আরও বলেন, গণফোরাম প্রতিষ্ঠায় যারা অগ্রনী ভূমিকা রেখে ছিলেন, যাদের ত্যাগ ও শ্রমে গড়ে ওঠা গণফোরাম, তাদের অনেকেই আজ নেই। তাদের মধ্যে ষাটের দশকের অন্যতম ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিক, পংকজ ভট্টচার্য, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, জিয়াউল হক টুলু, বেগম নূরজাহান মুরশিদ, মেজর জেনারেল (অব.) খলিলুর রহমান, এ ইউ আহম্মেদ, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, এনায়েতুর রহমান, কমান্ডার আব্দুর রউফ, মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমী, প্রকৌশলী গোলাম মর্তুজা খান, ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাসেম, শ্রী মনোরঞ্জন ধর, জামিল চৌধুরী, ফজলুল হক খন্দকার, অধ্যক্ষ এমদাদুর রহমান, অ্যাডভোকেট এনায়েত পীর, রণেশ মৈত্র, আব্দুল মতিন চৌধুরী, ডা. আব্দুল হাকিম, সি এম মুর্শেদ, মো. আবেদ আলী, অ্যাডভোকেট খতিব উদ্দিন, শংকর বোস, অ্যাডভোকেট কে এম ফজলুল কাদের, কফিল উদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট কাজী আব্দুস শহীদ লাল, অ্যাডভোকেট জানে আলম, অ্যাডভোকেট এমদাদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট চিত্তরঞ্জন গুহ, মো. জামাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আফতাব হোসেন চৌধুরী, নওয়াব আলী, ডা. হাবিবুর রহমান, সাইদুর রহমান সাইদসহ আরও অনেকেই আজ জীবিত নেই। তাদের প্রতি আমি আজ কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
কাউন্সিলে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মফিজুল ইসলাম খান কামাল ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ড. মো. মিজানুর রহমান। এক সপ্তাহের মধ্যে গণফোরামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে ড. কামাল হোসেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি হিসেবে আজীবন দায়িত্বে থাকবেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন ড. কামাল। সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি তার নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি মনোনীত সাত প্রার্থী জয়লাভ করেন। পরে অবশ্য আরেকটি আসন পায় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত বিএনপি। ৩০ ডিসেম্বর অনিয়ম ও সংঘর্ষের কারণে স্থগিত হয়েছিল আসনটি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২)।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন।