নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর কাপ্তানবাজার ও জয়কালী মন্দিরের কাছাকাছি হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে অস্থায়ী দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সুইপার কলোনিতে আগুনের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট এক ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
রোববার (২৬ মার্চ) দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে আগুন লাগে।
সোমবার (২৭ মার্চ) ভোর পাঁচটায় অগ্নিকাণ্ডের খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আগুনের কারণে হানিফ ফ্লাইওভারের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষ দেখবো। ফ্লাইওভারের নিচে এভাবে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ। এমতাবস্থায় বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিলে এরকম ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে।
তিনি আরো বলেন, এই সুইপার কলোনিতে টিনশেড ঘরে মানুষ বসবাস করে। এখানে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্না হতো। এখানে অনেক দাহ্য পদার্থ ছিল। এ কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে, কলোনিতে লাগা আগুন যেন অন্যদিকে ছড়িয়ে না পড়ে। কারণ পাশে আরও অনেকের বসবাস এবং কিছু আবাসিক ভবন রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের এক ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় সাড়ে চারটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের পিলার ও কংক্রিটের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার। পরীক্ষা করলেই জানা যাবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের নিচে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে এ রকম ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পাওয়া তথ্য মতে, সুইপার কলোনির আনুমানিক ২০টি টিনশেড ঘর আগুনে পুড়েছে।
তিনি বলেন, আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। এখানে দাহ্য পদার্থ ছিল, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে। যেকোনো কারণেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে, আমরা তদন্ত করে দেখব।
এতে দগ্ধ হয়েছেন ৭ জন। তাদেরকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার (২৭ মার্চ) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তাদেরকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
দগ্ধরা হলেন – রাজু বসাক (৩৬), তার মা কান্তা রানী (৬০), গীতারানী দে (৬৫), শান্তি রানী (২৭) আফজাল( ৫২), কৃষ্ণ (৭) এবং লক্ষ্মণ (৩)
রাজুর ভাইয়ের ছেলে শিবা জানান, তারা সুইপারের কাজ করেন। থাকেন কলোনিতে। ভোরে আগুন লাগার পর তারা দগ্ধ হন। কি থেকে আগুন লেগেছে তা জানাতে পারেননি তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলেন, রাজু বসাকের ১০ শতাংশ, কান্তারানীর ১০ শতাংশ, গীতারানী দের ১ শতাংশ, আফজালের ১০ শতাংশ, কৃষ্ণের ৭ শতাংশ, শান্তি রানীর ১০ শতাংশ, ও লক্ষ্মণের ৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
বাচ্চু মিয়া আরও জানান, এর মধ্যে কৃষ্ণ (৭) শান্তি রানী (২৭) লক্ষ্মণকে (৩) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি চারজনকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রাখা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন দোলন জানিয়েছেন, ৩টা ২৬ মিনিটে একটি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে আরও ছয়টি ইউনিট যুক্ত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট ৪ টা ৩০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।