নিজস্ব প্রতিবেদক :
পবিত্র মাহে রমজানের শুরুতেই লাগাম ছাড়া হয় মুরগির বাজার। বড় কোম্পানিগুলো দাম কমানোর পর কিছুটা কমতে শুরু করেছে মুরগির দাম। এরপরও পাইকারি বিক্রেতারা কেমন দাম নিচ্ছে তা যাচাই করতে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
সোমবার (২৭ মার্চ) সকালে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
অভিযানকালে ক্রয় ভাউচার দেখাতে না পারায় আল-আমিন ট্রেডার্স নামে এক প্রতিষ্ঠানকে ১ হাজার টাকা জরিমানা এবং জনতা হাঁস আড়ত নামে একটি প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পাশাপাশি জাকারিয়া নামের ওই আড়তের এক প্রতিনিধিকে (লাইনম্যান) বাজার মালিক সমিতির হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। মুরগির দাম নিয়ে কারসাজির ব্যাখ্যা দিতে ওই প্রতিনিধিসহ বাজার মালিক সমিতির নেতাদের সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।
অভিযান শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ্রিংকালে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় অনিয়ম দেখেছি। একই দামে ব্রয়লার মুরগি ক্রয়ের পরেও কেউ কেউ বেশি দামে বিক্রি করছেন। বাজারে এখনো সোনালী বা কক মুরগি বিক্রির ক্ষেত্রে অস্থিরতা রয়েছে। খুচরা পর্যায়ে একই মুরগি কারো কাছে ৩৩০ কারো কাছে ৩৩৫ এবং কোথাও ৩৪০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এই তারতম্যের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা মুরগির ছোট, মাঝারি এবং বড় সাইজের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি ছোট, মাঝারি এবং বড় মুরগির ক্ষেত্রেও আলাদা বিক্রয় চার্ট প্রদর্শন করতে হবে।
শাহরিয়ার বলেন, আমরা আড়ত পর্যায়ে অনিয়ম পেয়েছি। অনিয়মের কারণে একটি আড়তকে সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে এবং অভিযোগ থাকায় একজনকে (জাকারিয়া নামে এক বেপারীকে) ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের জবাবদিহিতার জন্য ডেকেছি।
তিনি বলেন, ব্যাপারী এবং আড়ৎ মালিকদের কারসাজি আমাদের চোখে পড়েছে। তারা ক্রয় ভাউচার প্রদর্শন করছে না। কেউ যদি ক্রয় ভাউচার এবং বিক্রয় রশিদ সংগ্রহ না করে তবে ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবো। এরপরেও বাজার অস্থিতিশীল থাকলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) মুরগি উৎপাদনকারী বড় চার প্রতিষ্ঠান (সিপি, আফতাব, কাজী, প্যারাগন) ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এসে ব্রয়লার মুরগি মিল পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির ঘোষণা দেয়। এর ভিত্তিতে গত শুক্র ও শনিবার (২৪ ও ২৫ মার্চ) দেশব্যাপী তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করে ভোক্তা অধিদপ্তর। তদারকি অভিযানে সার্বিকভাবে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির দাম পড়তির দিকে।
কাপ্তান বাজারে তদারকি করে দেখা গেছে, পাইকারি যে দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হওয়ার কথা সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। কেউ ১৭০ টাকা, কেউ ১৭৫ টাকা করে ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন। এই দামে কিনলে কত টাকা করে বিক্রি করা যায় তা আমরা বিক্রেতাদের কাছে জানতে চেয়েছি। কেউ বলেছেন ১৯০ টাকা, কেউ বলেছে ১৮৫ টাকা করে বিক্রি করা যায়। কিন্তু বাজারে ১৯০ টাকা করে কোথাও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে না। এ জন্য আমরা বাজার সমিতিকে ডেকেছি এবং তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি।
ব্যাপারী ও আড়তদারদের কারসাজি ভোক্তা অধিদপ্তরের চোখে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা ক্রয় রশিদ দেন না। কেউ যদি ক্রয় রশিদ ও বিক্রয় মূল্য না দেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন আনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরও বাজার অস্থিতিশীল হলে সেসব প্রতিষ্ঠান সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার বিধান রয়েছে। এরপরও অনিয়ম করলে অভিযুক্তকে আটক করে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাজারকে অস্থিতিশীল করে ভোক্তার পকেটের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এই প্রবণতা থেকে সবাই বের হয়ে আসেন। বাজার চলবে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। আমাদের পণ্যের সরবরাহ এখন পর্যাপ্ত। সেক্ষেত্রে পণ্যের দাম নিয়ে এমন কারসাজি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, এবার আমাদের অভিযানের কাঠামো কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আমরা বাজার পরিস্থিতর জন্য সমিতির দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। ব্যবসায়ীরা লাভ করুক, সেটা আমরাও চাই। কিন্তু সেটা ভোক্তার পকেটের টাকা কেটে যেন না করা হয়।
এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডলসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।