নিজস্ব প্রতিবেদক :
পবিত্র রমজান শুরুর পর প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নেমেই ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। রমজানের প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীর সড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কর্মব্যস্ত মানুষের সংখ্যাও। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গাড়ির জট লেগে রয়েছে। অফিসগামী মানুষকে নাকাল হতে হয়েছে বিভিন্ন সড়কে যানজট ও দীর্ঘ ট্রাফিক সিগনালে।
সোমবার (২৭ মার্চ) সরকারি বেসরকারি অফিস, আদালত, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে খোলায় রাজধানীজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
এতে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। একই জায়গায় দীর্ঘ সময় আটকে থেকে সময় পার করতে হচ্ছে। অফিসগামীরা বলছেন, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলের যন্ত্রণায় বাইরে বের হতেই পারছি না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। কখনোই সময়মতো কোথাও যেতে পারি না।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে যানজট। শুধু মিরপুর সড়কেই দেখা যায়, টেকনিক্যাল থেকে কল্যাণপুর, শ্যামলী হয়ে আসাদগেট আসতেই যেন ঘণ্টা পার। সামনের দিনে ঈদের কেনাকাটা শুরু হলে পরিস্থিতি আরও তীব্র রূপ ধারণ করার শঙ্কা সবার মনে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, বাড্ডা, মহাখালী, হাতিরঝিল, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী ও কালশী এলাকায় যানজট রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির চাপও বাড়ছে বলে জানা গেছে।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা চলছে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কে। সকাল থেকেই বিমানবন্দর সড়ক থেকে মহাখালী পর্যন্ত তীব্র যানজট। গাড়ি এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘসময় গাড়িতে বসে থেকে হাল ছেড়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন অফিসগামীরা।
রাজধানীজুড়ে যানজটের বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, তিন দিন ছুটি থাকার পর রমজানের প্রথম কর্মদিবসে একসঙ্গে সবাই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাছাড়া রমজানে অফিস টাইম পরিবর্তনের কারণেও রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। ফলে রাজধানীজুড়ে এমন যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে শেওড়া ওভার ব্রিজ পর্যন্ত যানচলাচল স্থবির হয়ে রয়েছে। শেওড়া থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে ধীরগতিতে যানচলাচল করছে। আবার বনানী থেকে ধীরগতিতে যানচলাচলের কারণে মহাখালী পার হয়ে জাহাঙ্গীর গেট এলাকা পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে যানজট।
বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য সকাল ৮ টায় বাসে উঠেন কাজী সালেহ। তিনি বলেন, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বনানীর দিকে গাড়ি কোনোভাবেই এগোচ্ছিল না। ঘণ্টার বেশি সময় গাড়ি শেওড়ায় আটকে ছিল। সর্বশেষ ধীরগতিতে মহাখালী এলেও আবার আটকে যায়। পরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে রওনা হই ফার্মগেটের দিকে। রোজা রেখে এভাবে যানজটের মধ্যে চলাচলের কারণে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের।
বনানী ও বিমানবন্দর সড়কের যানজট নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আজ রাস্তায় গাড়ির চাপ তুলনামূলক একটু বেশি। তিন দিন বন্ধ থাকার পর আজ রাজধানীতে সব অফিস খুলেছে। এদিকে, রমজানের কারণে অফিস টাইম একটু পরিবর্তন হয়েছে। সবমিলিয়ে একসঙ্গে সকাল থেকে গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাই এই যানজট। এছাড়া এখনো সব স্কুল বন্ধ হয়নি। অনেক স্কুল এখনো খোলা। একসঙ্গে সকাল ৮টা থেকে রাস্তায় মানুষ ও গাড়ি বের হওয়ায় চাপ বেড়ে গেছে।
এদিকে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পার হয়ে রামপুরা পর্যন্ত সড়কেও রয়েছে যানজট ও গাড়ির চাপ। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ অবস্থার কোনো উন্নতি ছিল না।
রাজধানীর ভাটারা থেকে বনশ্রী এলাকায় অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন মো. ফরিদুর রহমান। তিনি বলেন, নতুন বাজারে এসে দেখি রাস্তা একদম বন্ধ। এ পরিস্থিতি দেখে বাসে না উঠে হেঁটে রওনা হয়ে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত আসি। পরে উত্তর বাড্ডা থেকে একটি রিকশা নিয়ে বনশ্রী পর্যন্ত আসি।
নিউমার্কেটে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জুনায়েদ সিদ্দিক জানান, খিলক্ষেত থেকে বিজয় সরণি আসতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে গেছে। সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে না পারলে অনেক সমস্যা হয় বলে জানান তিনি। জুনায়েদ বলেন, রমজানের সময়টায় সবসময়ই এমন ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায়। সড়ক ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের বাড়তি নজর দেয়া দরকার।
প্রগতি সরণি এলাকার যানজট নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ইমরান হোসেন বলেন, রাজধানীর অন্য সব এলাকার মতো প্রগত সরণি এলাকায়ও সকাল থেকে প্রচুর গাড়ির চাপ। তবে আশা করছি দুপুরের দিকে চাপ কিছুটা কমে যাবে। তবে ইফতারের আগে আবার গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়বে।
এদিকে, সকাল থেকে চলমান যানজটের প্রভাব পড়ছে হাতিরঝিল এলাকায়ও। সাধারণত রাজধানীর অন্য সব এলাকায় যানজট থাকলেও এই এলাকা যানজটমুক্ত থাকে। তবে আজ হাতিরঝিলেও যানজট। এই যানজট সোনারগাঁও হোটেল সিগন্যাল পর্যন্ত পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে হাতিরঝিল দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী মকসুদুর রহমান বলেন, আজ যানজট থেকে হাতিরঝিলও রক্ষা পায়নি। সাধারণত হাতিরঝিলে যানজট থাকে না। তবে তিন দিনের ছুটির প্রভাবে আজ হাতিরঝিলেও যানজট।
এদিকে, সোনারগাঁও হোটেল মোড়ে যানজটের বিষয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক আনোয়ার কবির বলেন, হাতিরঝিল, বাংলামটর ও সোনারগাঁ হোটেল মোড়সহ আশপাশের সব রাস্তায় গাড়ির চাপ খুব বেশি। যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে বেলার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি গাড়ি রাস্তায় চলমান রাখার।
শুধু যানজট নয়, মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার বাতাস অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে রয়েছে। প্রতিবছর ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের বছরের রেকর্ডকে। সম্প্রতি ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে কিছু সুপারিশও দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান দূত জেমস জে শাওয়ার।