স্পোর্টস ডেস্ক :
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএলে) দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টেবিল টপার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ভালো সূচনার পরেও আবু হায়দার রনির বোলিং তোপে বেশি রান তুলতে পারেনি ফরচুন বরিশাল। বাঁহাতি পেসার মাত্র ১৩ বলে ৫ উইকেট নিয়ে এলোমেলো করে দেন বরিশালের ব্যাটিং অর্ডার।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান সংগ্রহ করেছে বরিশাল। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছেন কাইল মেয়ার্স। জবাবে খেলতে নেমে ১৯ ওভার ৩ বলে ৯ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় রংপুর। এই জয়ের ফলে প্রথম দল হিসেবে কোয়ালিফায়ার রাউন্ড নিশ্চিত করলো রংপুর।
১৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার মুমিনুল হকের (০) উইকেট হারায় রংপুর। তবে ব্র্যান্ডন কিংয়ের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ভালোভাবেই লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকে তারা। ওভারপ্রতি ১০ রানের বেশি তোলা এই জুটিকে থামান মেহেদী হাসান মিরাজ। ২২ বলে ৪৫ রান করে তার বলে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন কিং।
৭৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো রংপুরের স্কোর মুহূর্তেই পরিণত হয় ৫ উইকেটে ৮৭। ১৩ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে নিজেদের কাজটা কঠিন করে তোলেন নুরুল হাসান সোহানরা। ২৯ রানে আউট হন সাকিব।
টম মুরস ও জেমস নিশাম এই বিপদে হাল ধরেন। দলীয় ১১৮ রানে মুরসকে (১৭) ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙলে বরিশালের আশা জাগে। নিশাম ১৭ বলে ২৮ রান করে দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন। তাকে ফিরতে হয় ১৩৭ রানে। তাদের দুজনকেসহ ম্যাককয় তিন ওভারে ৩ ব্যাটারকে ফেরান। লক্ষ্য থেকে তিন রান দূরে থাকতে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে (১৩) তৃতীয় শিকার বানান তিনি। দলীয় ১৫০ রানে রনি নবম ব্যাটার হিসেবে ফিরে গেলে ম্যাচে উত্তেজনা বাড়ে। ২ রান করতে ঘাম ছুটেছে হাসান ও শামীম হোসেন পাটোয়ারীর।
শেষ ওভারে ২ রান লাগে রংপুরের। হাতে একটিমাত্র উইকেট। সাইফউদ্দিনের করা শেষ ওভারে শামীম পাটোয়ারী প্রথম বলে সিঙ্গেলস নিয়ে টাই করেন, পরের বলে হাসান মাহমুদের ব্যাটের কানায় লেগে চার হয়ে গেলে উচ্ছ্বাসে ভাসে রংপুর শিবির।
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে বরিশালকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও টম ব্যান্টন। এক প্রান্তে ঝড় তুলতে শুরু করেন তামিম। তুলনায় ব্যান্টন ছিলেন কম আগ্রাসী। তাদের জুটি থামে পঞ্চম ওভারে। সাকিব আল হাসানের করা ওভারের প্রথম বলেই মুমিনুল হকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম। এই বাঁহাতি ব্যাটার ২০ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় করেন ৩৩ রান।
তামিম বিদায় নিলেও বরিশাল ঘুরে দাঁড়ায় কাইল মায়ার্সের ব্যাটে। ব্যান্টনের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৭২ রান। ২৪ বলে ২৬ রান করা ব্যান্টনকে বিদায় করেন কিউই অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। মায়ার্স অবশ্য রংপুরের বোলারদের ওপর ভালোভাবেই ছড়ি ঘুরিয়েছেন। ২৭ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৬ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেন ক্যারিবীয় ব্যাটার। তবে তাকে ছাপিয়ে যান রনি। ১৩তম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার ও মায়ার্সকে বিদায় করেন রনি।
নিজের পরবর্তী ওভারে রনি শিকার করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট। এদিকে বিধ্বংসী বোল করা রনি ইনিংসের ১৭তম ওভারে বল করতে এসে মেহেদী হাসান মিরাজকে আউট করে ফাইফার পূরণ করেন রনি। ৮ বলে ৩ রান করেন মিরাজ। বরিশালের যাওয়া আসার মিছিলে আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। একমাত্র মায়ার্স ছাড়া রনির শিকার বাকি ৪ ব্যাটার কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। শেষদিকে বরিশালকে কোনোমতে দেড়শ পার করতে ভূমিকা রাখেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (১০) ও ওবেদ ম্যাকয় (১২*)।
বল হাতে ৫ উইকেট নেওয়ার পথে ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান খরচ করেছেন রনি। বিপিএলের ইতিহাসে এটিই যেকোনো বোলারের সেরা বোলিং ফিগার। আবু হায়দার পেছনে ফেলেছেন তাঁর রংপুরের সতীর্থ সাকিব আল হাসানকে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ঢাকা ডাইনামাইটসের হয়ে রংপুরের বিপক্ষে ১৬ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব।