Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুদ্ধ করে দেশ পেয়েছি, কারও খবরদারির কাছে নতজানু হব না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

স্বাধীন সার্বভৌম দেশ আমাদের, স্বাধীন জাতি আমরা। যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে আমরা আমাদের দেশ পেয়েছি। কারো খবরদারির কাছে নতজানু হব না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১৮ জুন) স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অন্য কারো ব্যাপারে হস্তক্ষেপে আগ্রহী না। তাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করুক তা চায় না ঢাকা। বিশ্বে সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি অনুরসরণ করে চলেছে সরকার। দেশের উন্নয়নে যা প্রয়োজন তার সবই করা হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেউ যাতে দেশের ক্ষতি করতে না পারে সে বিষয়ে এসএসএফ সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন মাত্র এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল। সেটা বাড়িয়েছিলাম ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটাকে ৩ হাজার ৯০০ মেগাওয়াটে কমিয়ে আনে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে। আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি আমরা; যা শুধু আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগেনি, করোনাকালীন সময়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের ডিজিটাল সিস্টেম কাজে লেগেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার পূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিল (বিএনপি) বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতির কারণে তখনো বিশ্ব ব্যাংক তাদের অর্থ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু তখনকার সরকারের সাহস ছিল না যে তাদের প্রতিবাদ করে, কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় তারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যখন আমাদের উপর দোষারোপ করল আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ আমার কোন দূর্বলতা ছিল না। আগের সরকার পারেনি কারণ তাদের দূর্বলতা ছিল। তারা সত্যিই দুর্নীতি করেছিল। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। এখানে ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমার চাওয়া সারা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে চলে। ৭৫-এর পর বৈরী পরিবেশে দেশে ফিরেছি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয়ে। সে লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, তখন সবাই টাকা সরিয়ে নেয়। সাথে সাথে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করব। আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করে আমাদের সক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছি।

নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণের পরে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই একটা ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে অনেকে সমীহ করে। দাতারা আগের মতো আর শর্তের পর শর্ত দেয় না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি একটা কথা বলতে পারি, এই একটা ঘটনাই কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেমন প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু শর্ত আর শর্ত আর নানা কথা, এখন আর সেটা করতে কেউ সাহস পায় না। বাংলাদেশকে এখন সকলেই সমীহর চোখে দেখে। আমি মনে করি, এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একমাত্র ব্যতিক্রম যেখান থেকে মিত্র শক্তি তাদের সৈন্য ফিরিয়ে নিয়েছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো স্বাধীনচেতা নেতৃত্বের জন্য।

২১ আগস্টসহ বিভিন্ন হামলায় জীবনহানির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আর কোনো প্রাণহানি হোক তা আমি চাই না।

এসময় আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সরকার সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর করে যাওয়া প্রতিরক্ষা নীতির ওপর ভিত্তি করেই তার সরকার ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছে। সমস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এখন বিশ্বে মানবিক সেনাবাহিনী হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা অনেক বেশি জরুরি তা আমি জানি। তাছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বপ্ন দুয়ার খুলে দিয়েছে, সেই সাথে অনেক শঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। প্রযুক্তি এক ধরনের কার্যক্রমের আশঙ্কা বা নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদেরকে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

তিনি আরো বলন, আমাদের এসএসএফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিদেশি কোনো অতিথি যখন আসে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময় আমরা যেসব অনুষ্ঠান করেছি সেই সময় একই সাথে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান আমাদের দেশে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তা প্রদানে যথেষ্ট দক্ষতা পরিচয় দিয়েছেন। তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আমরা যখন এসএসএফকে কাজে লাগিয়েছি, প্রত্যেকে প্রশংসা করেছেন। গর্বে আমার বুক ভরে গেছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

যুদ্ধ করে দেশ পেয়েছি, কারও খবরদারির কাছে নতজানু হব না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০১:২৩:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

স্বাধীন সার্বভৌম দেশ আমাদের, স্বাধীন জাতি আমরা। যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে আমরা আমাদের দেশ পেয়েছি। কারো খবরদারির কাছে নতজানু হব না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১৮ জুন) স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অন্য কারো ব্যাপারে হস্তক্ষেপে আগ্রহী না। তাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করুক তা চায় না ঢাকা। বিশ্বে সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি অনুরসরণ করে চলেছে সরকার। দেশের উন্নয়নে যা প্রয়োজন তার সবই করা হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেউ যাতে দেশের ক্ষতি করতে না পারে সে বিষয়ে এসএসএফ সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন মাত্র এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল। সেটা বাড়িয়েছিলাম ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটাকে ৩ হাজার ৯০০ মেগাওয়াটে কমিয়ে আনে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে। আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি আমরা; যা শুধু আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগেনি, করোনাকালীন সময়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের ডিজিটাল সিস্টেম কাজে লেগেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার পূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিল (বিএনপি) বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতির কারণে তখনো বিশ্ব ব্যাংক তাদের অর্থ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু তখনকার সরকারের সাহস ছিল না যে তাদের প্রতিবাদ করে, কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় তারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যখন আমাদের উপর দোষারোপ করল আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ আমার কোন দূর্বলতা ছিল না। আগের সরকার পারেনি কারণ তাদের দূর্বলতা ছিল। তারা সত্যিই দুর্নীতি করেছিল। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। এখানে ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমার চাওয়া সারা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে চলে। ৭৫-এর পর বৈরী পরিবেশে দেশে ফিরেছি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয়ে। সে লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, তখন সবাই টাকা সরিয়ে নেয়। সাথে সাথে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করব। আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করে আমাদের সক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছি।

নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণের পরে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই একটা ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে অনেকে সমীহ করে। দাতারা আগের মতো আর শর্তের পর শর্ত দেয় না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি একটা কথা বলতে পারি, এই একটা ঘটনাই কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেমন প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু শর্ত আর শর্ত আর নানা কথা, এখন আর সেটা করতে কেউ সাহস পায় না। বাংলাদেশকে এখন সকলেই সমীহর চোখে দেখে। আমি মনে করি, এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একমাত্র ব্যতিক্রম যেখান থেকে মিত্র শক্তি তাদের সৈন্য ফিরিয়ে নিয়েছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো স্বাধীনচেতা নেতৃত্বের জন্য।

২১ আগস্টসহ বিভিন্ন হামলায় জীবনহানির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আর কোনো প্রাণহানি হোক তা আমি চাই না।

এসময় আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সরকার সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর করে যাওয়া প্রতিরক্ষা নীতির ওপর ভিত্তি করেই তার সরকার ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছে। সমস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এখন বিশ্বে মানবিক সেনাবাহিনী হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা অনেক বেশি জরুরি তা আমি জানি। তাছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বপ্ন দুয়ার খুলে দিয়েছে, সেই সাথে অনেক শঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। প্রযুক্তি এক ধরনের কার্যক্রমের আশঙ্কা বা নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদেরকে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

তিনি আরো বলন, আমাদের এসএসএফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিদেশি কোনো অতিথি যখন আসে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময় আমরা যেসব অনুষ্ঠান করেছি সেই সময় একই সাথে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান আমাদের দেশে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তা প্রদানে যথেষ্ট দক্ষতা পরিচয় দিয়েছেন। তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আমরা যখন এসএসএফকে কাজে লাগিয়েছি, প্রত্যেকে প্রশংসা করেছেন। গর্বে আমার বুক ভরে গেছে।