সিলেট জেলা প্রতিনিধি :
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভিসা নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের কথায় ঠিক থাকে, তাহলে বিএনপি নেতাদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ করা উচিত। কারণ তারা নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সিলেটে নিজ বাসভবনে মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে বিএনপির জনপ্রিয়তা অনেকটা কমে গেছে। তাই তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপির দাবি হলো দুইটি- একটি প্রধানমন্ত্রীর অপসারণ, দ্বিতীয়টি খালেদা জিয়াকে সাজা না দেওয়া।
ড. মোমেন বলেন, ভিসানীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের কথায় ঠিক থাকে, তাহলে বিএনপি নেতাদের ওপর এই মুহূর্তেই তা আরোপ করা উচিত। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তাদের ওপর অবশ্যই ভিসানীতি দেওয়া উচিত। হয়তো দিয়েছেও। কারণ, আমেরিকা নাম প্রকাশ করে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বাস মিস করেছে। যখন জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তখন তারা ইস্যুটি ধরতে পারতো। তখন যথেষ্ট জনসমর্থন গ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু তারা সেটি ধরতে পারেনি। তারা সবগুলো ইস্যু মিস করেছে। এটা তারা বড় ভুল করেছে। কারণ তাদের মধ্যে নেতৃত্বের অপরিপক্কতা রয়েছে। যেটা আমি সবসময়ই বলি।
‘বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে’ মন্তব্য করে ড. মোমেন বলেন, শুধু সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে বিএনপি অনেক নিচে নেমে গেছে। কারণ তারা ইস্যুভিত্তিক। তাদের ইস্যুই দুটি। একটি হলো প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, আরেকটি তাদের নেত্রীর মুক্তি। নেত্রীকেতো আওয়ামী লীগ জেলে দেয়নি। তাদের গড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার জেলে দিয়েছে। এটা নিয়ে জনগণের মাথাব্যথা নেই।
খালেদা জিয়াকে সাজা সরকার দেয়নি মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারের স্টেপ ডাউন কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে হয় না। এটা সামরিক শাসনে সম্ভব। নেতৃত্বে অপরিপক্বতার কারণে তারা বারবার বিভিন্ন ইস্যু মিস করছে।
নির্বাচন কমিশন এখন শক্তিশালী বলেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণা বিষয়ে কড়াকড়ি করছে। একইভাবে বিএনপির ওপর সমানভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২২৭ জন পর্যবেক্ষক ও অসংখ্য সাংবাদিক আসবে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভোট দেব। জনগণ যেভাবে ভোট দিবে তাতেই আমি খুশি, জনগণ ভোট না দিলে নাই। এর সার্টিফিকেট বিদেশিদের কাছ থেকে কেন নিতে হবে? আমেরিকা-ভারতের মতো পৃথিবীর অনেক দেশে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক থাকে না।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তারা তথ্য সংগ্রহ করছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কীভাবে তিক্ততা কমানো যায়, বিএনপি কেন নির্বাচনে আসেনি। এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে পর্যবেক্ষক দল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আমার লোক ভোট দিলে অন্য কেউ কেন সার্টিফিকেট দেবে? বাংলাদেশের মানুষ এদেশ স্বাধীন করেছে; কেউ সার্টিফিকেট দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেনি। দেশের মানুষের ওপর আমার বিশ্বাস থাকলে অন্য লোককে দিয়ে কেন নির্বাচন অথেনটিকেট করতে যাবো? আমি ব্যক্তিগতভাবে এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে। আমি আমেরিকা-ভারতে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দেখিনি। আমরা ম্যাচিউরড ডেমোক্রেুসি। ডেমোক্রেসির জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি। খুব কম দেশের মানুষ ডেমোক্রেসির জন্য রক্ত দিয়েছে। আমি কেন অন্যের সার্টিফিকেটে চলবো?
মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মার্কিন পর্যবেক্ষক দল তথ্য সংগ্রহ করছে, ভবিষ্যতে কীভাবে বাংলাদেশের বড় দুই দলের মধ্যে তিক্ততা দূর করা যায়। আজকের বৈঠকে তাদের দুইটি প্রশ্ন ছিল। প্রথমটি বড় দুইটি দলের মধ্যে তিক্ততা কমানো যায় কীভাবে। আগামীতে আমাদের কোনো সাজেশন আছে কি না? আর আরেকটি প্রশ্ন ছিল তাদের—এবারের নির্বাচনে বিএনপি এলো না কেন? আমি বলেছি, সেটা তাদের (বিএনপিকে) জিজ্ঞাসা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি তাদের (বিএনপি) নিজেদের মধ্যে আলোচনার অভাব আছে। তাদের লোকেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলে এরকম বোকামি সিদ্ধান্ত হতো না। নির্বাচন বয়কট করে সরকার পরিবর্তন করা যায় না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মার্কিন পর্যবেক্ষক দল জানতে চেয়েছে নির্বাচনে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? কেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে? আমি বললাম, খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে আমার তিনটি পর্যবেক্ষণ আছে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা শক্তিশালী না, বিশেষ করে বিরোধী দল নেই। যার ফলে আমার লোকেরা মনে করছে উনিতো জিতে যাবেন। তাহলে লাইনে দাঁড়িয়ে কী হবে? আমি আশা করবো দলের লোকজন ভোট দেবে। তবে সাধারণ লোকজন ভাববে উনিতো বিজয়ী হবেন, খামাখা গিয়ে ভোট দিয়ে কী হবে। আর আরেকটি হলো ভোটের তারিখ। এটা আমি খেয়াল করিনি। আমেরিকাতে মঙ্গলবারে ভোট হয়। আমাদের এখানে ৭ জানুয়ারি না হয়ে আগামী মঙ্গলবারে হলে লোকজন শহরে থাকতো। এখন টানা তিনদিন ছুটি থাকায় অনেকে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে চলে গেছে। এতে করে আমরা অনেক ভোটার হারাবো। এটা আমরা আগে খেয়াল করিনি। এটা চিন্তা করা উচিত ছিল।
ভোটের দিন বিএনপির হরতাল প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘ইসি এত কড়া, এত শক্তিশালী যে কারণে আমরা এখন কথা বলতে পারছি না। আমাদের ভোট দেন, এ কথাও বলতে পারছি না। কারণ ইসি নিষেধ করেছে। কিন্তু অন্যান্য দলের প্রতিও তাদের এ নিষেধাজ্ঞা নেই। আমরা সরকারি দল প্রচারণা করতে পারবো না, আর ওরা (বিএনপি) প্রচারণা করতে পারবে ভোট দিও না; এটা কেমন কথা? ইসির ভূমিকা সমানভাবে হওয়া উচিত।’
পর্যবেক্ষক দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সিনিয়র উপদেষ্টা জেওফ্রি ম্যাকডোনাল্ড, আইআরআইয়ের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিতাভ ঘোষ ও আইআরআইয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডেভিড হোগস্ট্রা।