Dhaka শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ শাসন করেছেন, তারা জনগণের আমানত রক্ষা করেন নাই : জামায়াত আমির

বীরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি : 

বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ শাসন করেছেন, তারা জনগণের আমানত রক্ষা করেন নাই। তারা জনগণের আমানত নিজেদের পকেটে লুকিয়েছেন, দেশের সম্পদ তসরুপ করেছেন। সেই সম্পদ তারা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। আগে টাকা পাচার করেছেন-পরে যেখানে পাচার করেছেন সেখানে তারা পালিয়ে হাজির হয়েছেন। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত তারা মানুষ খুন করেছেন।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে, তাদের আমরা সম্মানিত করতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে কোন বৈষম্য থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না। এমন একটি রাষ্ট্র চাই-যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। দেশের যেসব মানুষের সামর্থ থাকবে না, তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে এই রাষ্ট্র। এদেশে কোন পথশিশু থাকবে না। সব পথশিশুর দায়িত্ব নেবে সরকার। এমন একটি রাষ্ট্র চাই যেখানে অফিস, আদালত, কোর্ট, কাচারি-কোথাও ঘুস বাণিজ্য থাকবে না, যেখানে কোন চাঁদাবাজ ও দখলদারিত্ব থাকবে না। আমাদের মা বোনেরা তাদের ইজ্জতের সঙ্গে বসবাস করবে। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেকটি মানুষকে শ্রদ্ধা করবে। এমন বাংলাদেশ যদি আপনারা চান-তাহলে দরকার আপনাদের অকুন্ঠ সমর্থন ও ত্যাগ-তিথিক্ষা।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে অপার সম্ভাবনাময় ছোট একটি দেশ বাংলাদেশ। এখানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের ভাই-বোনেরা যুগযুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর ভালোবাসা নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু মাঝে মাঝে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশের সম্প্রতি নষ্ট করতে চায়। সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু, স্বাধীনতা পক্ষে-বিপক্ষে দুটি শক্তিতে ভাগ করতে চায়। দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কোন উদাহারণ নেই কোন জাতি বিভক্ত হয়ে সম্মানিত এবং মর্যাদা লাভ করেছে এবং তারা উন্নতির শিখরে উঠেছে। বরঞ্চ বিভক্ত জাতি বিশৃঙ্খল থাকে। ওই বিভক্তি আমাদের সর্বনাশ করেছে। আমরা এই বিভক্তির কবর রচনা করতে চাই। এখন যারা এই বিভক্তিকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করবে তারা কার্যত জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবে। আমাদের এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দেশ এবং জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, বুক পেতে যারা জীবন দিতে পেরেছে তাদের হাতে এদেশ নিরাপদ থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা তাদেরকে সম্মানিত করতে চাই। আমরা একটি সোনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে নৈতিকতার শিক্ষা থাকবে। শিক্ষা মানুষকে মানুষ করবে। আমাদের শিশুরা একটি সার্টিফিকেট নিয়ে শুধু বের হবে না। দুই হাতে কাজ নিয়েও বের হবে। অফিস আদালতে ঘুষ বাণিজ্য চলবে না, কোনো চাঁদাবাজ আর হাত বাড়াবে না, দখলদারিত্ব থাকবে না- এমন একটি বাংলাদেশ আমরা চাই।

শফিকুর রহমান বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আমরা নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু স্বৈরাচার সরকরের পতন ঘটাতে পারিনি। আমাদের ছেলেমেয়েদের হাতে তাদের নেতৃত্বে আমরা দেশবাসী ছিলাম। অগ্রভাগে তারাই ছিল। এটা আমাদের গর্বের।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন ১৮ নয়, ১৭ বছর বয়স যাদের হয়েছে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কেউ কেউ বলছেন- এটা আমরা মানি না। কেন মানেন না। রাস্তায় নেমে এরাই তো স্বাধীনতা এনেছে। তারা বুক পেতে দিয়ে বলেছে গুলি কর। আপনি আমি তা পারিনি। প্রধান উপদেষ্টার এ কথাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা বলি তাদেরকে অবশ্যই ভোটার করতে হবে। যারা বুক পেতে দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিতে পারে, আমরা দেশবাসী তাদের ভোটের অধিকার দিতে পারি না?

শফিকুর রহমান বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কোনো উদাহরণ নেই জাতি বিভক্ত হয়ে সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছে এবং তারা উন্নতির শিখরে উঠেছে। বরং বিভক্ত জাতি বিশৃঙ্খল থাকে। আর যারা বিশৃঙ্খল থাকে তাদের মাথায় অন্য সবাই কাঁঠাল ভেঙে খায়। বাংলাদেশের বিগত ৫৩টি বছরে আমরা এই বিভক্তির কবর রচনা করতে চাই। কোনো পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি এদেশের মানুষ আর মানবে না। ওই বিভক্তি আমাদের সর্বনাশ করেছে। এই সর্বনাশে জাতি আর হাবুডুবু খেতে চায় না। এখন যারা এই বিভক্তিকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করবে তারা কার্যত জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে আর ক্ষমা করবে না। আমাদের এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। কোনো কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দেশ এবং জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের বিরুদ্ধ, দেশের বিরুদ্ধে হাজার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমরা ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করব।

তিনি বলেন, অপার সম্ভাবনার একটি দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের জমিনের ওপরে সবুজ গালিচায় ঢাকা মাটিতে আল্লাহ প্রচুর খনিজ সম্পদ দান করেছেন। এ দেশের বাতাস বসবাসের উপযোগী ও অনুকূল। এমন একটি দেশের কেন এমন পরিণতি হলো। এর কারণ হচ্ছে যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ শাসন করেছেন তারা জনগণের আমানত রক্ষা করেনি। তারা জনগণের আমানতকে নিজের পকেটে ঢুকিয়েছে। তারা তসরুপ করেছেন, চুরি করেছেন, ডাকাতি করেছেন, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন এবং সেই সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করেছেন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লাখ কোটি টাকা বাইরে পাচার করা হয়েছে। কারা পাচার করেছে আপনারা তা জানেন। আগে তারা টাকা পাঠিয়েছেন। পরে তারা সেই টাকার পেছনে পালিয়ে গেছেন।

জামায়াতের আমির বলেন, দেশের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে, দরদ আছে তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না। আপনারা জানেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ১১ জন নেতাকে আওয়ামী লীগ খুন করেছে। বিচারিক আদালতের নামে তাদেরকে হত্যা করেছে। ১১ জনের একজনও বাংলাদেশ থেকে পালায়নি। পালানোর চেষ্টা করেননি। মীর কাসিম বাইরে ছিলেন তিনিও ফেরত এসেছেন এবং আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তি উপহার দিয়েছে তরুণরা। আগে মানুষ ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে ছিল। মুখ দিয়ে কথা বলতে পারতো না। স্বস্তির সাথে নিজের জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারতো না। এখন মানুষ স্বস্তির সাথে সব পারে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারতো না। কথা বললেই মানুষের জীবনে বিভীষিকাময় শাস্তি নেমে আসতো। এখন একটা সরকার ক্ষমতায় আছে। মিডিয়ার ভাইয়েরা নির্দ্বিধায় খবর পরিবেশন করতে পারে।

শফিকুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে মিডিয়ার ভাইয়েরা ওলটপালট করে ফেলে। আমার বক্তব্য বদলে ফেলে। আমি বলেছিলাম যে যদি বাংলাদেশে কোরআনের সমাজ কায়েম হয় তাহলে সেই সমাজে মায়েদেরকে মায়ের মর্যাদা দেওয়া হবে। তারা গর্বের সাথে ইজ্জতের সাথে এদেশে বসবাস করবে। কর্মক্ষেত্রে যার যার আগ্রহ আছে, অভিজ্ঞতা আছে, দক্ষতা আছে সে সেখানে যাবে। তারা সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। জোর করে আমরা কাউকে পোশাক পরাবো না। আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো প্রত্যেকটি মা শালীন ও মার্জিত পোশাক পরে গর্ববোধ করবে। অথচ একটা টেলিভিশন চ্যানেল বলে দিলো জামায়াতের আমির বলেছেন- মেয়েরা ইচ্ছামতো পোশাক পরিধান করবে। সংবাদমাধ্যমকে বলা হয় জাতির বিবেক ও জাতির আয়না। আমাদের অনুরোধ সাদাকে সাদা বলতে হবে, কালোকে কালো বলতে হবে। যদি আমিও কালো হই তাহলে কালোই বলবেন, আমাকে ছাড় দেবেন না।

বীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ক্বারী আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন-কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ড. এনামুল হকসহ প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

দেশে যেন উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারে : তারেক রহমান

যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ শাসন করেছেন, তারা জনগণের আমানত রক্ষা করেন নাই : জামায়াত আমির

প্রকাশের সময় : ০৮:২৬:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

বীরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি : 

বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ শাসন করেছেন, তারা জনগণের আমানত রক্ষা করেন নাই। তারা জনগণের আমানত নিজেদের পকেটে লুকিয়েছেন, দেশের সম্পদ তসরুপ করেছেন। সেই সম্পদ তারা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। আগে টাকা পাচার করেছেন-পরে যেখানে পাচার করেছেন সেখানে তারা পালিয়ে হাজির হয়েছেন। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত তারা মানুষ খুন করেছেন।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে, তাদের আমরা সম্মানিত করতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে কোন বৈষম্য থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না। এমন একটি রাষ্ট্র চাই-যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। দেশের যেসব মানুষের সামর্থ থাকবে না, তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে এই রাষ্ট্র। এদেশে কোন পথশিশু থাকবে না। সব পথশিশুর দায়িত্ব নেবে সরকার। এমন একটি রাষ্ট্র চাই যেখানে অফিস, আদালত, কোর্ট, কাচারি-কোথাও ঘুস বাণিজ্য থাকবে না, যেখানে কোন চাঁদাবাজ ও দখলদারিত্ব থাকবে না। আমাদের মা বোনেরা তাদের ইজ্জতের সঙ্গে বসবাস করবে। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেকটি মানুষকে শ্রদ্ধা করবে। এমন বাংলাদেশ যদি আপনারা চান-তাহলে দরকার আপনাদের অকুন্ঠ সমর্থন ও ত্যাগ-তিথিক্ষা।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে অপার সম্ভাবনাময় ছোট একটি দেশ বাংলাদেশ। এখানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের ভাই-বোনেরা যুগযুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর ভালোবাসা নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু মাঝে মাঝে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশের সম্প্রতি নষ্ট করতে চায়। সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু, স্বাধীনতা পক্ষে-বিপক্ষে দুটি শক্তিতে ভাগ করতে চায়। দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কোন উদাহারণ নেই কোন জাতি বিভক্ত হয়ে সম্মানিত এবং মর্যাদা লাভ করেছে এবং তারা উন্নতির শিখরে উঠেছে। বরঞ্চ বিভক্ত জাতি বিশৃঙ্খল থাকে। ওই বিভক্তি আমাদের সর্বনাশ করেছে। আমরা এই বিভক্তির কবর রচনা করতে চাই। এখন যারা এই বিভক্তিকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করবে তারা কার্যত জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবে। আমাদের এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দেশ এবং জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, বুক পেতে যারা জীবন দিতে পেরেছে তাদের হাতে এদেশ নিরাপদ থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা তাদেরকে সম্মানিত করতে চাই। আমরা একটি সোনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে নৈতিকতার শিক্ষা থাকবে। শিক্ষা মানুষকে মানুষ করবে। আমাদের শিশুরা একটি সার্টিফিকেট নিয়ে শুধু বের হবে না। দুই হাতে কাজ নিয়েও বের হবে। অফিস আদালতে ঘুষ বাণিজ্য চলবে না, কোনো চাঁদাবাজ আর হাত বাড়াবে না, দখলদারিত্ব থাকবে না- এমন একটি বাংলাদেশ আমরা চাই।

শফিকুর রহমান বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আমরা নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু স্বৈরাচার সরকরের পতন ঘটাতে পারিনি। আমাদের ছেলেমেয়েদের হাতে তাদের নেতৃত্বে আমরা দেশবাসী ছিলাম। অগ্রভাগে তারাই ছিল। এটা আমাদের গর্বের।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন ১৮ নয়, ১৭ বছর বয়স যাদের হয়েছে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কেউ কেউ বলছেন- এটা আমরা মানি না। কেন মানেন না। রাস্তায় নেমে এরাই তো স্বাধীনতা এনেছে। তারা বুক পেতে দিয়ে বলেছে গুলি কর। আপনি আমি তা পারিনি। প্রধান উপদেষ্টার এ কথাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা বলি তাদেরকে অবশ্যই ভোটার করতে হবে। যারা বুক পেতে দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিতে পারে, আমরা দেশবাসী তাদের ভোটের অধিকার দিতে পারি না?

শফিকুর রহমান বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কোনো উদাহরণ নেই জাতি বিভক্ত হয়ে সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছে এবং তারা উন্নতির শিখরে উঠেছে। বরং বিভক্ত জাতি বিশৃঙ্খল থাকে। আর যারা বিশৃঙ্খল থাকে তাদের মাথায় অন্য সবাই কাঁঠাল ভেঙে খায়। বাংলাদেশের বিগত ৫৩টি বছরে আমরা এই বিভক্তির কবর রচনা করতে চাই। কোনো পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি এদেশের মানুষ আর মানবে না। ওই বিভক্তি আমাদের সর্বনাশ করেছে। এই সর্বনাশে জাতি আর হাবুডুবু খেতে চায় না। এখন যারা এই বিভক্তিকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করবে তারা কার্যত জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে আর ক্ষমা করবে না। আমাদের এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। কোনো কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দেশ এবং জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের বিরুদ্ধ, দেশের বিরুদ্ধে হাজার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমরা ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করব।

তিনি বলেন, অপার সম্ভাবনার একটি দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের জমিনের ওপরে সবুজ গালিচায় ঢাকা মাটিতে আল্লাহ প্রচুর খনিজ সম্পদ দান করেছেন। এ দেশের বাতাস বসবাসের উপযোগী ও অনুকূল। এমন একটি দেশের কেন এমন পরিণতি হলো। এর কারণ হচ্ছে যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ শাসন করেছেন তারা জনগণের আমানত রক্ষা করেনি। তারা জনগণের আমানতকে নিজের পকেটে ঢুকিয়েছে। তারা তসরুপ করেছেন, চুরি করেছেন, ডাকাতি করেছেন, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন এবং সেই সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করেছেন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লাখ কোটি টাকা বাইরে পাচার করা হয়েছে। কারা পাচার করেছে আপনারা তা জানেন। আগে তারা টাকা পাঠিয়েছেন। পরে তারা সেই টাকার পেছনে পালিয়ে গেছেন।

জামায়াতের আমির বলেন, দেশের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে, দরদ আছে তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না। আপনারা জানেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ১১ জন নেতাকে আওয়ামী লীগ খুন করেছে। বিচারিক আদালতের নামে তাদেরকে হত্যা করেছে। ১১ জনের একজনও বাংলাদেশ থেকে পালায়নি। পালানোর চেষ্টা করেননি। মীর কাসিম বাইরে ছিলেন তিনিও ফেরত এসেছেন এবং আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তি উপহার দিয়েছে তরুণরা। আগে মানুষ ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে ছিল। মুখ দিয়ে কথা বলতে পারতো না। স্বস্তির সাথে নিজের জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারতো না। এখন মানুষ স্বস্তির সাথে সব পারে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারতো না। কথা বললেই মানুষের জীবনে বিভীষিকাময় শাস্তি নেমে আসতো। এখন একটা সরকার ক্ষমতায় আছে। মিডিয়ার ভাইয়েরা নির্দ্বিধায় খবর পরিবেশন করতে পারে।

শফিকুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে মিডিয়ার ভাইয়েরা ওলটপালট করে ফেলে। আমার বক্তব্য বদলে ফেলে। আমি বলেছিলাম যে যদি বাংলাদেশে কোরআনের সমাজ কায়েম হয় তাহলে সেই সমাজে মায়েদেরকে মায়ের মর্যাদা দেওয়া হবে। তারা গর্বের সাথে ইজ্জতের সাথে এদেশে বসবাস করবে। কর্মক্ষেত্রে যার যার আগ্রহ আছে, অভিজ্ঞতা আছে, দক্ষতা আছে সে সেখানে যাবে। তারা সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। জোর করে আমরা কাউকে পোশাক পরাবো না। আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো প্রত্যেকটি মা শালীন ও মার্জিত পোশাক পরে গর্ববোধ করবে। অথচ একটা টেলিভিশন চ্যানেল বলে দিলো জামায়াতের আমির বলেছেন- মেয়েরা ইচ্ছামতো পোশাক পরিধান করবে। সংবাদমাধ্যমকে বলা হয় জাতির বিবেক ও জাতির আয়না। আমাদের অনুরোধ সাদাকে সাদা বলতে হবে, কালোকে কালো বলতে হবে। যদি আমিও কালো হই তাহলে কালোই বলবেন, আমাকে ছাড় দেবেন না।

বীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ক্বারী আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন-কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ড. এনামুল হকসহ প্রমুখ।