নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার পক্ষে। আমরা আশা করি গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে, এর বাইরে কোনো সুযোগ নেই। যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না তারা শেখ হাসিনার সুরেই কথা বলছে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আমরা জনঅধিকার পার্টি কর্তৃক আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ১ম বর্ষ যুগপৎ আন্দোলন শরিক দল’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা চলে গেলেও দেশে স্বৈরাচারী মানসিকতা এখনও রয়ে গেছে, যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পথে বড় অন্তরায়।
শেখ হাসিনার শাসন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার মানসিকতার কিছু লোক দেশে রয়ে গেছে। তারা সামান্য ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। কিছু না হলেই মব তৈরি করে অন্যকে মানতে বাধ্য করছে। এটা গণতান্ত্রিক আচরণ নয়।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মধ্যে বিভেদ নেই। সবাই সবার মতামত দেবে-এটাই গণতন্ত্র। নতুন বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে হবে, সহনশীল হতে হবে এবং মন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুধু রাজনীতি গণতান্ত্রিক করলে চলবেন না, অর্থনীতিকেও গণতান্ত্রিক করতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে হবে। কোনো একক গোষ্ঠিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে অর্থনীতি চালানো যাবে না। অর্থনীতি সবার জন্য হতে হবে। প্রত্যেকটি নাগরিক যেন অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি নাগরিক যাতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার ভূমিকা রাখতে পারে সেই চিন্তা করছি। এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নাগরিকদের যখন আয় বাড়বে তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়বে তখনই তারা সুনাগরিক হবে। তারা ট্যাক্স দেবে। তখন ট্যাক্সের টাকা দিয়ে দাবি করতে পারবে, আমার ট্যাক্সের টাকা দিয়ে এটা করা যাবে না, আমার টাকায় সেটা করা যাবে না। আমার ট্যাক্সের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ২৪ আন্দোলনের কৃতিত্ব নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই । এটি সমস্ত বাংলাদেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফলাফল। বাংলাদেশের মালিক জনগণ, তারা সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কৃতি বদলাতে হবে। সহনশীল হতে হবে। অপরের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তার প্রতি, তার মতের প্রতি সম্মান জানাতে শিখতে হবে।
শেখ হাসিনা কিছু কিছু ক্ষুদে স্বৈরাচার রেখে গেছেন এমন মন্তব্য করে খসরু বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে সংসদে পাশ করুন, এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। সেটা না করে যদি কেউ বলে আমাদের এই দাবি না মানলে নির্বাচন করবো না অথবা আমরা আন্দোলন করবো, এটা হচ্ছে অগণতান্ত্রিক।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে একটা জিনিস প্রতিষ্ঠিত, বিপ্লবোত্তর সমস্ত দেশে যত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে, সেসমস্ত দেশগুলো ভালো করছে। আর যে সমস্ত দেশের বিপ্লব পরবর্তী এই ধরনের কাজ করেনি, তাদের নিজেদের মধ্যে দ্বিধা সৃষ্টি করার প্রচেষ্টায় চলছে, সেই দেশগুলোতে এখন গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশগুলোতে সমাজ বিভক্ত, সেই দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে, গণতন্ত্র তো দূরের কথা। আমাদের এক বছর অলরেডি অতিরিক্ত হয়ে গেছে, যত তাড়াতাড়ি জনগণের ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষণ জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তা কিছুই থাকবে না। দিনের শেষে দেখবেন, একটা সাংঘর্ষিক জাতি হিসেবে আমরা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করছি।