মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রাবিরতি করা একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে পিকনিকে আসা তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন লুট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তরুণীদের মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নেহাল নামের এক যুবক লঞ্চের একেবারে সামনে দুই নারীকে বেল্ট দিয়ে প্রকাশ্যে পেটাচ্ছে। তাদের বয়স ১৫-১৭ হবে। আর সেই ভিডিও ধারণ করছে সেখানকার শতাধিক মানুষ।
শুক্রবার (৯ মে) দিবাগত রাত ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে ঢাকাগামী এমভি ক্যাপ্টেন নামের লঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সাদা রঙের পোশাক পরিহিত আনুমানিক ১৫-১৭ বছর বয়সী এক নারীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে উঠিয়ে লাঠি দিয়ে বেপরোয়াভাবে পেটাচ্ছেন মুন্সিগঞ্জ শহরের নেহাল আহমেদ জিহাদ নামের একজন। এ সময় ৫০-৬০ জন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ সেই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করছেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে, এ ঘটনায় লঞ্চের কেবিনে অবস্থানরত তরুণ-তরুণীদের অসংলগ্ন অবস্থা ও মাদক সেবনের অভিযোগে স্থানীয়রা লঞ্চে তল্লাশি করে ভাঙচুর চালায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে লালমোহন গিয়ে পুনরায় ঢাকায় ফিরছিল এমভি ক্যাপ্টেন নামের লঞ্চটি। লঞ্চটিতে কয়েক শতাধিক যাত্রী ছিল। যার মধ্যে একদল তরুণ-তরুণী পার্টি করছিল। রাত ৮টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রাবিরতির জন্য নোঙর করে। এ সময় যাত্রীরা স্থানীয়দের কাছে তরুণ-তরুণীদের মাদক ও অশ্লীলতার অভিযোগ করলে লঞ্চে উঠে তিন তলার কয়েকটি কক্ষে তরুণ-তরুণীদের আটক করে স্থানীয়রা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে উত্তেজিত হয়ে উঠে স্থানীয়রা। উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর করে লঞ্চের কিছু জানালা। এ সময় মারধর করা হয় দুই তরুণীসহ বেশ কয়েকজনকে। তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে তারা ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে এসেছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে ছেড়ে যায় লঞ্চটি।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার দিকে লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জ ঘাটে নোঙর করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাঙচুরের খবর পেয়ে সেখানে যান তারা। পরে ভেতরে ঢুকে বেশ কিছু দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেন এবং মারধরের শিকার নারীদের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসেন।
ঘটনাস্থলে ছিলেন এমন একজন সাংবাদিক জানান, ঢাকা-লালমোহন রুটের লঞ্চটি প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। লঞ্চটির দ্বিতীয় তলার বেশ কয়েকটি কেবিনে ২০-২৫ জন কিশোর-যুবক ও দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী ছিল। তারা ঢাকা থেকে ওই লঞ্চের কেবিন ভাড়া করে সারা দিন পিকনিক করে রাতে বাড়ি ফিরছিল।
স্থানীয় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইয়াবা আর গাজা সেবন চলছিল লঞ্চটিতে। এজন্যই স্থানীয়রা সেখানে যায়। পরে দেখে রুমের মধ্যে ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে সেবন করছে। এ নিয়েই ঝামেলা হয়।
এদিকে, দুই তরুণীকে মারধর করা জনতার মধ্যে একজন নেহাল আহমেদ জিহাদ বলেন, শত শত মানুষ ছিল। আমি যদি কয়েকটি বাড়ি দিয়ে সবাইকে শান্ত না করতাম হয়তো মেয়েগুলোর সঙ্গে আরও খারাপ আচরণ হতো। তাদের কয়েকটি মোবাইলও নিয়ে গিয়েছিল, সেগুলো আমি উদ্ধার করেছি। তাদের দুজনকে মারা আমার ঠিক হয়নি, তবে পরিস্থিতি শান্ত করতেই ভাই হিসেবে কাজ করছি। এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম জানান, সন্ধ্যার নাশতা কেনার জন্য ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী লঞ্চ থেকে পন্টুনে নামে। সেখানে থাকা স্থানীয়রা মাদকসেবী সন্দেহে তাদের পিছু নিয়ে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করলে লঞ্চের ম্যানেজার মো. শফিক তাদের প্রবেশে বাধা দেয়। এতে উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে লঞ্চে ঢুকে ভাঙচুর, লুট ও যাত্রীদের মারপিট করে। পরে খবর পেয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজনা কমে আসে।
প্রকাশ্যে নারীদের মারধরের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঘটনাটি যেহেতু নদীতে ঘটেছে, এ বিষয়ে নৌ পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে শুনেছি।
মুক্তারপুর নৌ পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে থানার পুলিশের সঙ্গে আমরাও ছিলাম। মারধরের ঘটনার পর আমরা লঞ্চটিকে অনেক দূর পর্যন্ত পাহারা দিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসি। ভুক্তভোগীরা পরে মারধর ও লুটের ঘটনায় অভিযোগ করবেন বলে আমাদের জানান। শনিবার (১০ মে) সকাল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।