স্পোর্টস ডেস্ক :
নেপলসে তখন আতশবাজির ঝলকানি। চারদিক আনন্দের বাধ ভেঙে গেছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা বেঁচে থাকলে নিশ্চিতভাবে সেই আনন্দের মিছিলে শামিল হতেন। সঙ্গ দিতেন প্রিয় ক্লাবকে। ৩৩টি বছর! কত অপেক্ষা, কত হাহাকার। অবশেষে নাপোলির সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটলো। ৩৩ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে সিরিআর শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতলো ইতালির ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। কারণ নাপোলি প্রায় তিন যুগে প্রথমবার ইতালির চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
ম্যারাডোনার হাত ধরে ১৯৮৭ সালে প্রথম সিরি আ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নাপোলি, তিন বছর পর আবারও। ১৯৯০ সালে আর্জেন্টাইন গ্রেটের স্বর্ণালী সময়ে দ্বিতীয় ও শেষবার এই ট্রফি জিতেছিল তারা। ম্যারাডোনা তার জীবদ্দশায় এরপর আর ক্লাবকে লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে দেখেননি। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর বৃহস্পতিবার (৪ মে) আবারও ইতালিয়ান লিগের ট্রফিটি নিজেদের করে নিলো নাপোলি।
খেলা ছিল উদিনেসের মাঠে। ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় সান্দি লভরিকের গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় নাপোলি। মনে হচ্ছিল, শিরোপা উৎসবের অপেক্ষা বোধ হয় আরও বাড়বে তাদের।
তবে বিরতির পর নিজেদের খুঁজে পায় নাপোলি। ৫২ মিনিটে তাদের সমতায় ফেরান পুরো মৌসুমে দারুণ খেলা ওসিমেন। আর এই গোলই নাপোলিকে তৈরি করে দেয় উৎসবের উপলক্ষ। শেষ পর্যন্ত জয় পায়নি নাপোলি, ১-১ গোলে ড্র হয়েছে ম্যাচ। তবে উৎসবের রঙে রাঙাতে ওই এক পয়েন্টই যথেষ্ট ছিল।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাজিওর থেকে ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে থাকায় পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত হয়েছে নাপোলির।লিগে এটি তাদের তৃতীয় শিরোপা। এর আগে জিতেছিল ১৯৮৭ আর ১৯৯০ সালে। দুইবারই শিরোপাজয়ী দলের সদস্য ছিলেন ম্যারাডোনা।
নাপোলিকে সেই সোনালি দিনের স্মৃতিতে ফেরানো কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি শিরোপা জয়ের উৎসব নিয়ে বলেন, ‘নাপোলির সমর্থকদের এই খুশি দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাদের অনুভূতিটা কেমন। জীবন কঠিন হয়ে গেছে, এই মানুষগুলো এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল। তাদের পুরোপুরিই এভাবে উদযাপন করার অধিকার আছে। তাদের এই আনন্দ এনে দিতে পেরে ভালো লাগছে।’
নাপোলি কোচ বলেন, এই সাফল্যে ম্যারাডোনার প্রভাব অনুভূত হয়েছিল। তিনি যোগ করেন, ‘নাপোলি, এটা তোমার জন্য। এখানে অনেকে আছে যারা তাদের জীবনের কঠিন মূহূর্ত পার করেছে। এই আনন্দের সবটুকু তাদের প্রাপ্য।
ইতালির উত্তরে অবস্থিত উদিনে স্টেডিয়ামের ভেতরে ছিলেন ১১ হাজার ভক্ত, বাইরে আরও ৫ হাজার। নেপলসে ৫০ হাজারের বেশি দর্শক স্টেডিয়ামের বাইরে বিশাল স্ক্রিনে দেখেছেন ম্যাচ। খেলা শেষ হতেই খুশির জোয়ার নেমে আসে শহরে। ক্লাবের প্রেসিডেন্ট অরেলিও ডি লরেন্তিস নেপলস স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা আমাকে সবসময় বলেছেন, আমরা জিততে চাই এবং আমরা জিতলাম। আমরা সবাই একসঙ্গে এটা জিতেছি।
লরেন্তিস ২০০৪ সালে যখন ক্লাবের দায়িত্ব নেন, তখন নাপোলিকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছিল। তৃতীয় বিভাগে তাদের শুরু। তিনি বললেন, ৩৩ বছর ধরে দেখা স্বপ্ন পূরণ। এটা লম্বা প্রক্রিয়া।
২০২০ সালের নভেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ম্যারাডোনা। তার সম্মানে ক্লাবের স্টেডিয়ামের নামকরণ হয় ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। শেষ বাঁশি বাজতেই রঙিন আতশবাজিতে চারদিক আলোকিত হয়ে ওঠে।
ম্যারাডোনার হাত ধরে দুইবার সিরিএ ট্রফি স্কদেত্তা জেতে নাপোলি। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে প্রথমবার ম্যারাডোনার জাদুতে চ্যাম্পিয়ন নাপোলি। আর ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে দলকে এনে দেন দ্বিতীয় শিরোপা। এরপর ৩৩ বছরের আক্ষেপ ঘোচল কাল রাতে। শিরোপা নিশ্চিত পরেই নেপলসের মানুষ দলবেঁধে নেমে আসে রাস্তায়, মেতে উঠে তুমুল উদযাপনে। কেননা ৩৩ বছর পর শিরোপা ঘরে তুলা জয়ের উল্লাসটা ভিন্ন হবার কথা। এছাড়া ডিয়েগো ম্যারাডোনার স্মৃতি বিজরিত এ ক্লাবের এমন অর্জনে গোটা ফুটবল বিশ্বেই বইছে উত্তেজনার জোয়ার!
২০০১ সালে রোমার পর মিলান ও তুরিন শহরের বাইরে ইতালির দক্ষিণের কোনও ক্লাব প্রথমবার শিরোপা জিতলো। পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখে ট্রফি জেতার রেকর্ডে তুরিনো (১৯৪৭-৪৮), ফিওরেন্তিনা (১৯৫৫-৫৬), ইন্টার মিলান (২০০৬-০৭) ও জুভেন্টাসের (২০১৮-১৯) পাশে নাম লিখলো নাপোলি।