স্পোর্টস ডেস্ক :
দলের বাকি সবাই যখন ব্যর্থ, তখন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হিসেবে অভিভূত হলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ইনজুরিতে পড়েও হাল ছাড়েননি, গড়েছেন রেকর্ড। ডাবল হান্ড্রেড করে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে ছেড়েছেন মাঠ। ৯১ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অবিশ্বাস্য ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংসে আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চলে গেছে অস্ট্রেলিয়া। প্যাট কামিন্সের সঙ্গে ২০২ রানের জুটি গড়েছেন ম্যাক্সওয়েল, যাতে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের অবদান ৬৮ বলে ১২ রান।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে ম্যাক্সওয়েল বীরত্বে ১৯ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া।
২৯২ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দেয়ার পর অস্ট্রেলিয়াকে বোলিংয়েও চেপে ধরেছিলো আফগানিস্তান। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ রানের মধ্যেই সেরা চার ব্যাটারকে হারিয়ে বসেছে অস্ট্রেলিয়া। ৯ম ওভারের শুরুতেই ডেভিড ওয়ার্নার এবং জস ইংলিসকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
মুম্বাইর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আফগান বোলিংয়ের সামনে হাসফাঁস করতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা। দ্বিতীয় ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটিতে ভাঙন ধরান আফগান বোলার নাভিন-উল হক।
দ্বিতীয় ওভারেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ট্রাভিস হেডকে ফিরিয়ে দেন আফগান এই পেসার। ২ বলে কোনো রানই করতে পারেননি হেড। এরপর অবশ্য মিচেল মার্শ এবং ডেভিড ওয়ার্নার মিলে চেষ্টা করেন জুটি গড়ার।
কিন্তু ৪৩ রানের মাথায় সেই নাভিন-উল হকের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হন মিচেল মার্শ। ১১ বলে ২৪ রান করে আউট হন তিনি। ওয়ার্নার আর মার্নাস লাবুশেন মিলে চেষ্টা করেন জুটি গড়ার। কিন্তু ৯ম ওভারের প্রথম ও দ্বিতীয় বলে ওয়ার্নার এবং ইংলিশকে আউট করেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
মার্নাস লাবুশেন রানআউট হয়ে যান ২৮ বলে ১৪ রান করে। মার্কাস স্টয়নিজ রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ৭ বলে মাত্র ৬ রান করে। মিচেল স্টার্ক ৭ বলে ৩ রান করে কট বিহাইন্ড হয়ে যান রশিদ খানের বলে। যদিও পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, স্টার্কের ব্যাটেই বল লাগেনি। স্টার্ক রিভিউ নিলে হয়তো বেঁচে যেতেন।
কিন্তু ম্যাক্সওয়েল ও কামিন্সের ১৭০ বলে ২০২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিই তাদের সেমিফাইনালে তুলে দিল। আফগানদের হয়ে নাভিন-উল-হক, ওমরজাই ও রশিদ খান দুটি করে উইকেট পান।
আগে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তানের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। এই দুই ওপেনারে ভালো শুরু করেণ আফগানরা। তাদের জুটি ৩৮ রান যোগ করেই ইনিংসের অষ্টম ওভারের গুরবাজ আউট হন। আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরার আগে ২১ রান করেন এই ব্যাটার। পরে দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাট করতে আসেন রহমত শাহ। তাকে সঙ্গে নিয়ে দেখে শুনে খেলতে থাকেন আরেক ওপেনার ইব্রাহিম।
এই দুই জুটিতে ৮৩ রান গড়েন জাদরান-রহমত। তবে দলীয় ১২১ রানে ম্যাক্সওয়েলের ঘূর্ণিতে কাটা পড়ে সাজঘরে ফেরেন রহমত। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৩০ করেন এ ডানহাতি ব্যাটার। এরপর ক্রিজে আসেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদী। উইকেটে এসে থিতু হলেও ব্যক্তিগত ইনিংস লম্বা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। দলীয় ১৭৩ রানে ২৬ করে আউট হন শাহিদী।
আফগান অধিনায়কের বিদায়ে উইকেটে আসেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংস বড় করতে থাকে ইব্রাহিম। তবে এ জুটও বেশি এগোতে পারেননি। দলীয় ২১০ রানে ২২ করেই বিদায় নেন ওমরজাই। এরপর উইকেটে আসেন মোহাম্মদ নবী। তবে ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফেরেন এ অভিজ্ঞ ব্যাটার।
কিন্তু একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখে ওপেনার ইব্রাহিম। অজি বোলারদের তুলোধুনো করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনি। এছাড়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম শতকের দেখাও পেয়ে যান এই আফগান ওপেনার। আর শেষ মুহূর্তে ঝড়ো গতিতে রান তোলেন রশিদ খান।
এতে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রানে থামে আফগানদের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জস হ্যাজলউড ২টি এবং ১টি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং অ্যাডাম জাম্পা।