Dhaka বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন : নতুন যে তথ্য দিলো পুলিশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০১:৪৪:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৭৬ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে গৃহকর্মীর হাতে মা ও মেয়ে হত্যার প্রায় ৬০ ঘণ্টার মাথায় মূল আসামি আয়েশাকে স্বামীসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তেজগাঁও বিভাগের তৎপরতায় ‘ক্লুলেস’ এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য দ্রুত উদঘাটন হয়।

পুলিশ বলছে, মোহাম্মদপুর থানার অতীতের বিভিন্ন মামলা ও জিডির তথ্য বিশ্লেষণ করে আয়েশাকে শনাক্ত করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের ভেতরে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ৩ দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী ‘আয়েশা’কে দায়ী করে মামলা করেন নিহতের স্বামী আজিজুল ইসলাম (৫৭)।

এই ঘটনায় আয়েশাকে সন্দেহ করা হলেও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—গৃহকর্মী আয়েশার কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় সংরক্ষিত না থাকা। সিসিটিভির ফুটেজেও তাকে চেনার মতো কোনো স্পষ্ট ভিজ্যুয়াল পাওয়া যায়নি, কারণ সে প্রতিবারই বোরকা পরে, মুখ ঢেকে আসা–যাওয়া করত।

তিনি আরও জানান, ঘটনার আশেপাশে কোনো ডিজিটাল ক্লু না পেয়ে তদন্ত দল ‘ম্যানুয়াল’ উপায়ে থানায় গত এক বছরের গৃহকর্মী কর্তৃক সংঘটিত চুরির ঘটনাগুলো খুঁজতে থাকে। তদন্তকারীরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেন— গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বাস, গৃহকর্মীর পরিচয়ে সংঘটিত পূর্বের চুরি তথ্য নিয়ে মাঠে নামে তদন্তকারীরা। এখানেও আয়েশার তথ্য মিলে যায়। হুমায়ুন রোডে সেই ভুক্তভোগী পরিবার থেকে একটি পুরনো মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়, যা থেকেই শুরু হয় আসামির সন্ধান।

সিডিআরের বিশ্লেষণে পাওয়া অবস্থান ধরে হেমায়েতপুরে গিয়ে জানা যায়—নম্বরটি ব্যবহার করত রাব্বি নামের এক ব্যক্তি। তদন্তে বেরিয়ে আসে—রাব্বির স্ত্রীই হলো সেই আয়েশা, এবং তারা পূর্বে জেনেভা ক্যাম্পে থাকত—বাদীর দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। পরবর্তীতে হেমায়েতপুরে অভিযান চালানো হলে দরজা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অবশেষে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় আয়েশার কাছ থেকে একটি চুরি করা ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়— কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন সে ২ হাজার টাকা চুরি করে।

তৃতীয় দিন টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তার তর্ক হয়।

চতুর্থ দিনে সুইচ গিয়ার চাকু লুকিয়ে বাসায় আসে। টাকা চুরির বিষয়টি নিয়ে তর্ক হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আফরোজা ফোনে তার স্বামীকে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে পিছন থেকে ছুরি মারে আয়েশা। এই সময়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ঘাতক গৃহকর্মী। এ দিকে একই সময়ে মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে ফোন দিতে চাইলে আয়েশা ইন্টারকমের মূল তার ছিঁড়ে ফেলে।

আয়েশার ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

ডিএমপির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, নিজের রক্তমাখা কাপড় বদল করে। এরপর নাফিসার স্কুল ড্রেসে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এই সময়ে ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ–ফোন নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঢাকা ছাড়ার সময়ে সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন ও পোশাক ভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল বলেন, আয়েশা আগে থেকেই চুরির স্বভাব রয়েছে। এমনকি নিজের বোনের বাড়ি থেকেও ২ লাখ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করেছিল। এর আগে হুমায়ুন রোডে চুরির ঘটনায় থানা পুলিশ তাকে আটক করেছিলো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, দেশবাসী তথা ঢাকাবাসীর উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে অনুরোধ আপনারা যারা বাসায় গৃহকর্মী রাখেন তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হবেন। আপনার বাসায় কাজ করা ব্যক্তির পরিচয়পত্র ও তাকে শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে রাখবেন। কারণ আপনি বাসার গৃহকর্মীর বানানো খাবার খান, আপনার বেড রুমে গৃহকর্মী প্রবেশ করে৷ এখানে আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জড়িত।

 

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন : নতুন যে তথ্য দিলো পুলিশ

প্রকাশের সময় : ০১:৪৪:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে গৃহকর্মীর হাতে মা ও মেয়ে হত্যার প্রায় ৬০ ঘণ্টার মাথায় মূল আসামি আয়েশাকে স্বামীসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তেজগাঁও বিভাগের তৎপরতায় ‘ক্লুলেস’ এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য দ্রুত উদঘাটন হয়।

পুলিশ বলছে, মোহাম্মদপুর থানার অতীতের বিভিন্ন মামলা ও জিডির তথ্য বিশ্লেষণ করে আয়েশাকে শনাক্ত করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের ভেতরে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ৩ দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী ‘আয়েশা’কে দায়ী করে মামলা করেন নিহতের স্বামী আজিজুল ইসলাম (৫৭)।

এই ঘটনায় আয়েশাকে সন্দেহ করা হলেও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—গৃহকর্মী আয়েশার কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় সংরক্ষিত না থাকা। সিসিটিভির ফুটেজেও তাকে চেনার মতো কোনো স্পষ্ট ভিজ্যুয়াল পাওয়া যায়নি, কারণ সে প্রতিবারই বোরকা পরে, মুখ ঢেকে আসা–যাওয়া করত।

তিনি আরও জানান, ঘটনার আশেপাশে কোনো ডিজিটাল ক্লু না পেয়ে তদন্ত দল ‘ম্যানুয়াল’ উপায়ে থানায় গত এক বছরের গৃহকর্মী কর্তৃক সংঘটিত চুরির ঘটনাগুলো খুঁজতে থাকে। তদন্তকারীরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেন— গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বাস, গৃহকর্মীর পরিচয়ে সংঘটিত পূর্বের চুরি তথ্য নিয়ে মাঠে নামে তদন্তকারীরা। এখানেও আয়েশার তথ্য মিলে যায়। হুমায়ুন রোডে সেই ভুক্তভোগী পরিবার থেকে একটি পুরনো মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়, যা থেকেই শুরু হয় আসামির সন্ধান।

সিডিআরের বিশ্লেষণে পাওয়া অবস্থান ধরে হেমায়েতপুরে গিয়ে জানা যায়—নম্বরটি ব্যবহার করত রাব্বি নামের এক ব্যক্তি। তদন্তে বেরিয়ে আসে—রাব্বির স্ত্রীই হলো সেই আয়েশা, এবং তারা পূর্বে জেনেভা ক্যাম্পে থাকত—বাদীর দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। পরবর্তীতে হেমায়েতপুরে অভিযান চালানো হলে দরজা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অবশেষে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় আয়েশার কাছ থেকে একটি চুরি করা ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়— কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন সে ২ হাজার টাকা চুরি করে।

তৃতীয় দিন টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তার তর্ক হয়।

চতুর্থ দিনে সুইচ গিয়ার চাকু লুকিয়ে বাসায় আসে। টাকা চুরির বিষয়টি নিয়ে তর্ক হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আফরোজা ফোনে তার স্বামীকে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে পিছন থেকে ছুরি মারে আয়েশা। এই সময়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ঘাতক গৃহকর্মী। এ দিকে একই সময়ে মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে ফোন দিতে চাইলে আয়েশা ইন্টারকমের মূল তার ছিঁড়ে ফেলে।

আয়েশার ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

ডিএমপির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, নিজের রক্তমাখা কাপড় বদল করে। এরপর নাফিসার স্কুল ড্রেসে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এই সময়ে ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ–ফোন নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঢাকা ছাড়ার সময়ে সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন ও পোশাক ভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল বলেন, আয়েশা আগে থেকেই চুরির স্বভাব রয়েছে। এমনকি নিজের বোনের বাড়ি থেকেও ২ লাখ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করেছিল। এর আগে হুমায়ুন রোডে চুরির ঘটনায় থানা পুলিশ তাকে আটক করেছিলো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, দেশবাসী তথা ঢাকাবাসীর উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে অনুরোধ আপনারা যারা বাসায় গৃহকর্মী রাখেন তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হবেন। আপনার বাসায় কাজ করা ব্যক্তির পরিচয়পত্র ও তাকে শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে রাখবেন। কারণ আপনি বাসার গৃহকর্মীর বানানো খাবার খান, আপনার বেড রুমে গৃহকর্মী প্রবেশ করে৷ এখানে আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জড়িত।