নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে লাগা ভয়াবহ আগুন দীর্ঘ প্রায় ৬ ঘণ্টা পরে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দীর্ঘ সময় ধরে পুড়েছে মার্কেটের শত শত দোকান। এখনও মার্কেটের বিভিন্ন স্থান ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে আছে। আগুনে প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেট ও কাঁচা বাজারে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৭০০-৮০০টি দোকান ছিল।
জানা গেছে মার্কেটটিতে ৫শর বেশি দোকান ছিল। এসব দোকানে কাজ করে ২ হাজারের বেশি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ মার্কেটে সবজি দোকানের পাশাপাশি জুতার দোকান, স্বর্ণের দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোতে কোটি কোটি টাকার মালামাল ছিল।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথমে হক বেকারি থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে বাতাসে মুহূর্তেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেট বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিস প্রথমে এসে ভেতরে ঢুকতে পারেনি। এজন্য আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
কৃষি মার্কেটের কাপড়ের বিক্রেতা মাহবুব হাসান জানান, তার দোকানে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছুই বের করতে পারেননি। মার্কেটের পাশে যাদের দোকান ছিল তারা কিছু মালামাল বের করতে পারলেও ভেতরের দিক থেকে কেউ কিছু বের করতে পারেনি।
ওয়াহিদ নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী জানান, তিনি রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। মার্কেটে এ সময় আগুর জ্বললেও তার দোকান স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ৩০ মিনিটের মধ্যে আগুন তার দোকান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। মার্কেটের ভেতর হওয়ায় তিনি দোকানে যেতে পারেননি। দুই মার্কেটে প্রায় পাঁচশোর বেশি দোকান ছিল সব পুড়ে গেছে।
ওয়াহিদ বলেন, হক বেকারি থেকে প্রথমে আগুন লাগে। নিরাপত্তাকর্মীরা প্রথম ফায়ার ইস্টিংগুইসার দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু দোকানের শাটার বন্ধ থাকায় কোনো কাজে আসেনি। মুহূর্তেই আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে।
আগুনের ঘটনায় ১৮টি স্বর্ণের দোকান পুড়ে গেছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্লাস্টিকের মালামাল, ক্রোকারিজ ও ব্যাগের দোকানগুলো।
কৃষি মার্কেটের নতুন কাঁচা বাজার মার্কেটের সামনে ৯টি এবং ভেতরে ৯টিসহ মোট ১৮টি স্বর্ণের দোকান ছিল বলে জানান দুবাই জুয়েলার্সের মালিক আমির হোসেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ভোর রাতে আগুন লাগায় এবং মার্কেট বন্ধ থাকার কারণে মালামাল তেমন সরাতে পারিনি। বেশিরভাগই পুড়ে গেছে।
আলিফ জুয়েলার্সের কর্মচারী শামসুদ্দিন বলেন, বাইরের দিকে দোকান হওয়ার পরও আমরা কোনও জিনিসপত্র বের করতে পারিনি। দোকানে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যমানের মালামাল ছিল। দোকানটি সম্পূর্ণই পুড়ে গেছে।
দুবাই জুয়েলার্সের মালিক আমির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, কৃষি মার্কেটে দুটি জুয়েলার্সের দোকান ছিল তার। ভোর চারটায় খবর পেয়ে মার্কেটে আসেন। তখনও তার দোকানে আগুন লাগেনি। কিন্তু মার্কেট বন্ধ থাকায় মালামাল সরাতে পারেননি তিনি। দুই দোকানে দুই কোটি টাকার জুয়েলার্সের মালামাল ছিল। সব পুড়ে গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মার্কেটটির দোকান মালিক সমিতির কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। ফলে এ বিষয়ে তাদের কারো বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
এদিকে পৌনে ৬ ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে কৃষি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার। তিনি জানান, ভোরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৭ ইউনিট ও ১৩৭ জন কর্মী। আগুন নির্বাপণে এখনো আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অগ্নি নির্বাপণী সাহায্যকারী দল। এ ছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণ, উদ্ধার অভিযান ও সার্বিক শৃঙ্খলায় ঘটনাস্থলে কাজ করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এনএসআই, স্কাউটের ভলান্টিয়ার সদস্যরা। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মার্কেটে ওপর থেকে পানি ছিটানো হয়।