Dhaka শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ফিলিস্তিনের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোনাজাত করলেন লক্ষাধিক মানুষ। মোনাজাতে তারা ফিলিস্তিনের মুক্তি চেয়েছেন। মোনাজাতের মাধ্যমে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির সমাপ্ত হয়েছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ৪টার দিকে। মোনাজাত করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। ফিলিস্তিনের পক্ষে কয়েক লাখ লোক এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

মোনাজাতে বলা হয়, ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা মানবতার ওপর চরম আঘাত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান।

একইসঙ্গে মোনাজাতে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত আগ্রাসনের বিচার চেয়ে দোয়া করা হয়েছে।

মোনাজাতে অংশ নেওয়া মো. শাহজাহান নামে এক বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, টেলিভিশনে ছোট ছেটা শিশুদের লাশ দেখে ঘুম আসে না। আজ মোনাজাতে শুধু একটাই কথা বলেছি যে, হে আল্লাহ, ফিলিস্তিনকে রক্ষা করো।

পরে ফিলিস্তিনের মুক্তি চেয়ে ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে স্লোগান তোলেন মাওলানা মামুনুল হক, ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ একাধিকজন।

এদিকে মোনাজাতের আগে মঞ্চে থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

মাহমুদুর রহমানের পাঠ করা ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামাটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম। আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী, যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা-যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি-সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।

এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চারটি স্তরে আমাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করব-

আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি। যেহেতু-জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সকল জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে; এবং-আমরা দেখেছি, গাযায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়-বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল; এবং-এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়-বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইজরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে; এবং-এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইজরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে; সেহেতু আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি।

এবং-গাযা আমাদের জন্য এক আয়না-যেখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা; সেহেতু আমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য-একটি অঙ্গীকার করছি:

১। আমরা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো-প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইজরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে;

২। আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করবো-যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সকল প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ;

৩। আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবো-যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে;
৪। আমরা বিভাজিত হবো না-কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।

আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়।

আমরা শুরু করবো নিজেদের ঘর থেকে-ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ-সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।

আমরা মনে রাখবো: গাযার শহীদরা কেবল আমাদের দোয়া চান না-তাঁরা আমাদের প্রস্তুতি চান।

শেষকথা:

শান্তি বর্ষিত হোক গাযার সম্মানিত অধিবাসীদের উপর-তাঁদের উপর, যাঁরা নজিরবিহীন সবর করেছেন, যাঁরা অবিচল ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন। যাঁরা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছেন।

বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন। শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর, যাঁরা নাম রেখে গেছেন ইজ্জতের খতিয়ানে-

শান্তি বর্ষিত হোক হিন্দ রজব, রীম এবং ফাদি আবু সালেহ সহ সকল শহীদেরর উপর, যাঁদের রক্ত দ্বারা গাজার পবিত্রভূমি আরো পবিত্র হয়েছে, যাঁদের চোখে ছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা।

শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মাকদিসের গর্বিত অধিবাসীদের উপর, যাঁদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় ‘আল-কুদস লানা’, আল কুদস আমাদের!

গাজার জনগণকে অভিনন্দন-

আপনারা ঈমান, সবর আর কুরবানীর মহাকাব্য রচনা করেছেন। দুনিয়াকে দেখিয়েছেন-ঈমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি আমরা, বাংলাদেশের মানুষ-শাহ জালাল আর শরীয়াতুল্লাহর ভূমি থেকে দাঁড়িয়ে, আপনাদের সালাম জানাই, আপনাদের শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই, আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দো’আ-হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও, যার উপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়োনিস্টদের সব ষড়যন্ত্র।

বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ।

এর আগে, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে যখন বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে, তখন বাংলাদেশেও ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে আয়োজিত হচ্ছে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামক এই ব্যতিক্রমধর্মী গণসমাবেশ।

এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমদুল্লাহ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন, নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহেদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক কায়েম, খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা মামুনুল হক, অ্যাক্টিভিস্ট সাইমুম সাদি, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিএনপির জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক।

এদিকে ‘মার্চ ফর গাজা’য় যোগ দেওয়া মানুষের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্যে হয়ে পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশেপাশের এলাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় পা ফেলার জায়গা নেই। অনেকেই এসেছেন বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে। এসবের মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনের প্রতি নিজেদের সমর্থন এবং ইসরায়েলের প্রতি নিজেদের ঘৃণা প্রকাশ করেন। অনেকেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক স্লোগান দেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সোহরাওয়র্দী উদ্যানে জড়ো হন। শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা, মৎসভবন, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষকে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির কারণে মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে জনতার উপস্থিতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে। রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামটর ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে যানজটের এমন চিত্র দেখা গেছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি

প্রকাশের সময় : ০৫:২৫:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ফিলিস্তিনের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোনাজাত করলেন লক্ষাধিক মানুষ। মোনাজাতে তারা ফিলিস্তিনের মুক্তি চেয়েছেন। মোনাজাতের মাধ্যমে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির সমাপ্ত হয়েছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ৪টার দিকে। মোনাজাত করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। ফিলিস্তিনের পক্ষে কয়েক লাখ লোক এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

মোনাজাতে বলা হয়, ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা মানবতার ওপর চরম আঘাত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান।

একইসঙ্গে মোনাজাতে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত আগ্রাসনের বিচার চেয়ে দোয়া করা হয়েছে।

মোনাজাতে অংশ নেওয়া মো. শাহজাহান নামে এক বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, টেলিভিশনে ছোট ছেটা শিশুদের লাশ দেখে ঘুম আসে না। আজ মোনাজাতে শুধু একটাই কথা বলেছি যে, হে আল্লাহ, ফিলিস্তিনকে রক্ষা করো।

পরে ফিলিস্তিনের মুক্তি চেয়ে ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে স্লোগান তোলেন মাওলানা মামুনুল হক, ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ একাধিকজন।

এদিকে মোনাজাতের আগে মঞ্চে থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

মাহমুদুর রহমানের পাঠ করা ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামাটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম। আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী, যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা-যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি-সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।

এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চারটি স্তরে আমাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করব-

আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি। যেহেতু-জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সকল জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে; এবং-আমরা দেখেছি, গাযায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়-বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল; এবং-এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়-বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইজরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে; এবং-এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইজরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে; সেহেতু আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি।

এবং-গাযা আমাদের জন্য এক আয়না-যেখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা; সেহেতু আমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য-একটি অঙ্গীকার করছি:

১। আমরা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো-প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইজরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে;

২। আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করবো-যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সকল প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ;

৩। আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবো-যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে;
৪। আমরা বিভাজিত হবো না-কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।

আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়।

আমরা শুরু করবো নিজেদের ঘর থেকে-ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ-সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।

আমরা মনে রাখবো: গাযার শহীদরা কেবল আমাদের দোয়া চান না-তাঁরা আমাদের প্রস্তুতি চান।

শেষকথা:

শান্তি বর্ষিত হোক গাযার সম্মানিত অধিবাসীদের উপর-তাঁদের উপর, যাঁরা নজিরবিহীন সবর করেছেন, যাঁরা অবিচল ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন। যাঁরা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছেন।

বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন। শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর, যাঁরা নাম রেখে গেছেন ইজ্জতের খতিয়ানে-

শান্তি বর্ষিত হোক হিন্দ রজব, রীম এবং ফাদি আবু সালেহ সহ সকল শহীদেরর উপর, যাঁদের রক্ত দ্বারা গাজার পবিত্রভূমি আরো পবিত্র হয়েছে, যাঁদের চোখে ছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা।

শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মাকদিসের গর্বিত অধিবাসীদের উপর, যাঁদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় ‘আল-কুদস লানা’, আল কুদস আমাদের!

গাজার জনগণকে অভিনন্দন-

আপনারা ঈমান, সবর আর কুরবানীর মহাকাব্য রচনা করেছেন। দুনিয়াকে দেখিয়েছেন-ঈমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি আমরা, বাংলাদেশের মানুষ-শাহ জালাল আর শরীয়াতুল্লাহর ভূমি থেকে দাঁড়িয়ে, আপনাদের সালাম জানাই, আপনাদের শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই, আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দো’আ-হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও, যার উপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়োনিস্টদের সব ষড়যন্ত্র।

বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ।

এর আগে, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে যখন বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে, তখন বাংলাদেশেও ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে আয়োজিত হচ্ছে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামক এই ব্যতিক্রমধর্মী গণসমাবেশ।

এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমদুল্লাহ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন, নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহেদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক কায়েম, খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা মামুনুল হক, অ্যাক্টিভিস্ট সাইমুম সাদি, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিএনপির জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক।

এদিকে ‘মার্চ ফর গাজা’য় যোগ দেওয়া মানুষের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্যে হয়ে পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশেপাশের এলাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় পা ফেলার জায়গা নেই। অনেকেই এসেছেন বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে। এসবের মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনের প্রতি নিজেদের সমর্থন এবং ইসরায়েলের প্রতি নিজেদের ঘৃণা প্রকাশ করেন। অনেকেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক স্লোগান দেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সোহরাওয়র্দী উদ্যানে জড়ো হন। শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা, মৎসভবন, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষকে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির কারণে মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে জনতার উপস্থিতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে। রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামটর ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে যানজটের এমন চিত্র দেখা গেছে।