নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরিশাল-বাউফল সড়কের বিঘাই নদীতে নেহালগঞ্জ সেতুর নির্মাণকাজ চলছে ঢিমেতালে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুরু হওয়া এ সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজের মেয়াদ বাড়িয়েছে তিনবার। গত জুনে দ্বিতীয় দফায়ও সেতুটির কাজ শেষ না হওয়ায় আবারো মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে সেতু মন্ত্রণালয়। ফলে বর্তমান সরকারের মেয়াদে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার সুযোগ নেই। এ কারণে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের অবসান শিগগিরই হচ্ছে না। তাদের অপেক্ষার প্রহর আরো দীর্ঘ হলো।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে সরকার এ অঞ্চলের কোটি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে নেহালগঞ্জে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী সওজ অধিদপ্তর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে। ২০২০ সালে টেন্ডার আহ্বান করলে মাহফুজ খান লিমিটেড ও এমএস জামিল ইকবাল জেমি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ সেতুর কাজ পায়। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কার্যাদেশ দেয়া হয়।
ওই বছরই ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৬২২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের সেতুতে থাকছে ১৩টি স্প্যান। নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুটির মাঝের অংশে দুটি স্প্যান হবে ১০০ দশমিক ৭৩৫ মিটার স্টিল ট্রাস সিস্টেমের। সঙ্গে ৬০০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। সেতুটির এক প্রান্তে রয়েছে বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের নেহালগঞ্জ গ্রাম ও অন্য প্রান্তে একই উপজেলার চন্দ্রমোহন গ্রাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার সদর উপজেলায় নির্মাণাধীন এ নেহালগঞ্জ সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, টুঙ্গিবাড়িয়া, চাঁদপুরা, চরকাউয়া, বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি, চরাদি, কলসকাটি, সুখি নীলগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া, আলিমাবাদ এলাকার বাসিন্দারা। পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলাবাসীও সরাসরি এ সেতুর সুফল ভোগ করবে।
স্থানীয় চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতি মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন এ সেতুর আশায় রয়েছে। তারা খেয়া নৌকায় নদী পারাপারের ভোগান্তির অবসান চায়। সর্বশেষ গত জুনে সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। আমরা আশায় ছিলাম দুর্ভোগ লাঘবের। তা আর হচ্ছে কই। এখন শুনি আবার সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরকার এখন জনগণের দুর্ভোগের চেয়ে ঠিকাদারের সুবিধাই বেশি দেখছে।
সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাদিরা রহমান বলেন, জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে চলেছে ঠিকই। তবে আমরা কাজ আরো দ্রুত শেষ হোক সেটা চাচ্ছি। কেন যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ শ্লথগতিতে এগোচ্ছে তা বুঝে আসে না। সেতুটি চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে সহজতর। পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে এ অঞ্চলের মানুষের। তিনি সংশ্লিষ্টদের এ সেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবি জানান।
এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সওজ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সদর উপজেলায় নির্মাণাধীন নেহালগঞ্জ সেতুটির কাজ সম্পন্ন হলে উপকৃত হবে পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার কয়েক লাখ লাখ মানুষ। সহজতর হবে দুই জেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহফুজ খান বলেন, আমাদের কাজের মান নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। সেতুর মাঝখানে যে স্টিল ট্রাস হবে সেটির ওয়েট নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় এখন একটু কাজের গতি কমে গেছে। আশা করি, বিষয়টি নির্ধারণ হলেই যথাসময়ে সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে। এখন পর্যন্ত ৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শতভাগ নিয়ম মেনেই সেতুর কাজ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বরিশাল বিভাগীয় সওজ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, সেতুর কাজ ৭৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুটির মাঝের অংশে দুটি স্টিল ট্রাসসহ স্প্যান বসবে। এজন্য কাজ একটু ধীরগতিতে চলছে। আশা করি, ২০২৪ সালের জুনেই নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। সেতুটি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলে এ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো গতিশীল হবে।