Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে নদী পার হতে বাঁশের সাঁকোই ভরসা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ১৮৫ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বাঙ্গরা (পশ্চিম) ইউনিয়নের ধনপতিখলা ও দৌলতপুর সড়কের পাশের আর্সি নদীর ওপর নেই কোনো সেতু। নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে ৫২ বছর ধরে চলাচল করছে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। কারণ বাঁশ দিয়ে তৈরি প্রায় ২০০ ফুট লম্বা সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় পানিতে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

ওই ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোটে পাস করার পর প্রতিশ্রুতির কথা তাদের আর মনে থাকে না। দেশ স্বাধীনের পরের বছর বাঁশের পোল (সাঁকো) দেয় গ্রামবাসী। কত জনপ্রতিনিধি আসল আর গেল কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওই নদী পারাপার হয় বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের ধনপতিখোলা, কালারাইয়া, মোহাম্মদপুর, ঘোড়াশাল, সোনাকান্দা, যোগেরখিল, মেটংঘরসহ দৌলতপুর গ্রামের মানুষ।

এছাড়া রোয়াচালা, কুড়ন্ডী, পিপিড়িয়া কান্দা, চুলুড়িয়া, বড়িয়াচড়া, কুড়াখাল, কালীসিমা, পেন্নই, দিঘিরপাড়, পাজিরপাড়, কাউইন্নামুড়ি, বৃষ্ণপুর, শ্রীকাইল, চন্দনাইল, রামচন্দ্রপুর, বি-চাপিতলাসহ উপজেলার উত্তর অঞ্চলের লোকজনের বাঙ্গরা বাজার থানা সদরের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগ করতে হলে প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে আসতে হয়। আর্সি নদীটি কালারাইয়া ও ধনপতিখোলা গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় দুই পাশের ২০টি গ্রামের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে এবং বাঙ্গরা বাজার থানা সদরে আসতে হচ্ছে।

খোষঘর গ্রামের কলেজপড়ুয়া মহসিন ভূইয়া জানান, ব্রিজের জন্য আমাদের কয়েকটি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভয়ে ভয়ে পার হতে হয় সাঁকো। প্রায় সময় অনেক শিক্ষার্থী পারাপারের সময় সাঁকো থেকে পড়ে আহত হচ্ছে। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত স্কুলে যায় না।

উপজেলার ধনপতিখোলা গ্রামের সত্তোর্ধ কৃষক মো. বাতেন মিয়া বলেন, যুদ্ধের আগে এই নদীর পার হতাম নৌকা দিয়ে। গত প্রায় ৫-৬ মাস আগে বাজারে যাওয়ার জন্য ওই সাঁকো পার হতে গিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছি। এরপর থেকেই এই সাঁকো পার হতে আমার খুবই ভয় হয়।

শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ও মো. রুবেল মিয়া বলেন, নড়বড়ে ওই সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে যায়।

ধনপতিখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তৌহিদ মিয়া বলেন, প্রতিদিন বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাওয়া-আসা করছে। এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকার ২০টি গ্রামের প্রায় তিন লাখ লোকের ভোগান্তির অবসান হতো।

বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহার খান বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি আর্সি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের। আমি অনেক বার এমপি-মন্ত্রীর কাছে গিয়েও বরাদ্দ পাইনি। সেতুটি নির্মিত হলে মুরাদনগর উপজেলা উত্তর অঞ্চলের ২০ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আরও উন্নত হবে তাদের জীবনমান।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রায়হানুল আলম চৌধুরী বলেন, কয়েক মাস আগে আমি এই উপজেলায় আসছি। বিষয়টি আমার জানা নেই।

মুরাদনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ড. আহসানুল হক সরকার কিশোর বলেন, আর্সি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ সময়ের দাবি। বিষয়টি নিয়ে আমি একাধিকবার এমপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

মুরাদনগরে নদী পার হতে বাঁশের সাঁকোই ভরসা

প্রকাশের সময় : ১২:৩৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বাঙ্গরা (পশ্চিম) ইউনিয়নের ধনপতিখলা ও দৌলতপুর সড়কের পাশের আর্সি নদীর ওপর নেই কোনো সেতু। নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে ৫২ বছর ধরে চলাচল করছে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। কারণ বাঁশ দিয়ে তৈরি প্রায় ২০০ ফুট লম্বা সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় পানিতে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

ওই ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোটে পাস করার পর প্রতিশ্রুতির কথা তাদের আর মনে থাকে না। দেশ স্বাধীনের পরের বছর বাঁশের পোল (সাঁকো) দেয় গ্রামবাসী। কত জনপ্রতিনিধি আসল আর গেল কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওই নদী পারাপার হয় বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের ধনপতিখোলা, কালারাইয়া, মোহাম্মদপুর, ঘোড়াশাল, সোনাকান্দা, যোগেরখিল, মেটংঘরসহ দৌলতপুর গ্রামের মানুষ।

এছাড়া রোয়াচালা, কুড়ন্ডী, পিপিড়িয়া কান্দা, চুলুড়িয়া, বড়িয়াচড়া, কুড়াখাল, কালীসিমা, পেন্নই, দিঘিরপাড়, পাজিরপাড়, কাউইন্নামুড়ি, বৃষ্ণপুর, শ্রীকাইল, চন্দনাইল, রামচন্দ্রপুর, বি-চাপিতলাসহ উপজেলার উত্তর অঞ্চলের লোকজনের বাঙ্গরা বাজার থানা সদরের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগ করতে হলে প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে আসতে হয়। আর্সি নদীটি কালারাইয়া ও ধনপতিখোলা গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় দুই পাশের ২০টি গ্রামের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে এবং বাঙ্গরা বাজার থানা সদরে আসতে হচ্ছে।

খোষঘর গ্রামের কলেজপড়ুয়া মহসিন ভূইয়া জানান, ব্রিজের জন্য আমাদের কয়েকটি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভয়ে ভয়ে পার হতে হয় সাঁকো। প্রায় সময় অনেক শিক্ষার্থী পারাপারের সময় সাঁকো থেকে পড়ে আহত হচ্ছে। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত স্কুলে যায় না।

উপজেলার ধনপতিখোলা গ্রামের সত্তোর্ধ কৃষক মো. বাতেন মিয়া বলেন, যুদ্ধের আগে এই নদীর পার হতাম নৌকা দিয়ে। গত প্রায় ৫-৬ মাস আগে বাজারে যাওয়ার জন্য ওই সাঁকো পার হতে গিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছি। এরপর থেকেই এই সাঁকো পার হতে আমার খুবই ভয় হয়।

শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ও মো. রুবেল মিয়া বলেন, নড়বড়ে ওই সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে যায়।

ধনপতিখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তৌহিদ মিয়া বলেন, প্রতিদিন বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাওয়া-আসা করছে। এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকার ২০টি গ্রামের প্রায় তিন লাখ লোকের ভোগান্তির অবসান হতো।

বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহার খান বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি আর্সি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের। আমি অনেক বার এমপি-মন্ত্রীর কাছে গিয়েও বরাদ্দ পাইনি। সেতুটি নির্মিত হলে মুরাদনগর উপজেলা উত্তর অঞ্চলের ২০ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আরও উন্নত হবে তাদের জীবনমান।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রায়হানুল আলম চৌধুরী বলেন, কয়েক মাস আগে আমি এই উপজেলায় আসছি। বিষয়টি আমার জানা নেই।

মুরাদনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ড. আহসানুল হক সরকার কিশোর বলেন, আর্সি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ সময়ের দাবি। বিষয়টি নিয়ে আমি একাধিকবার এমপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি।