বিনোদন ডেস্ক :
কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একটি ভিডিও শনিবার (২৮ জুন) রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুলকালাম।
এ ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল শোবিজ অঙ্গনও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক তারকা ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্ষকদের বিচার দাবি করছেন। প্রতিবাদ জানিয়েছেন আজমেরী হক বাঁধন, মিশা সওদাগর, নুসরাত ফারিয়া, তমা মির্জা, মৌসুমি হামিদ, জয় চৌধুরী, আরশ খান, প্রার্থনা ফারদিন দীঘিসহ আরো অনেক তারকা।
আজমেরী হক বাঁধন প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘ধর্ষণ একটি ভয়াবহ অপরাধ। কিন্তু এই দেশে, এটি দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। মানুষ কেবল তখনই এটি নিয়ে কথা বলে, যখন একটি মর্মান্তিক ঘটনা ভাইরাল হয়, একটি ভিডিও ক্লিপ, একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট। তারপর হঠাৎ করেই সবাই ক্ষেপে যায়। কিন্তু অল্প সময়ের জন্য। শীঘ্রই, মানুষ এগিয়ে যায়, ভুলে যায় সব। কারণ প্রতিদিন একটি নতুন নাটক, নতুন কেলেঙ্কারি। একজন মহিলার যন্ত্রণা তার আরেকটি অংশ হয়ে ওঠে। এটা কেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে? আমরা ধর্ষণকে সংবাদের মতো বিবেচনা করি, এটিকে গুরুতর সংকটের মতো নয়? আরও খারাপ কথা, কিছু লোক এই অপরাধগুলি রেকর্ড করে, শেয়ার করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনোদনের মতো ছড়িয়ে দেয়। তারা নির্দোষ নয়। তারা অপরাধের অংশ। এবং তাদেরও শাস্তি পেতে হবে। আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে, প্রচন্ড রেগে আছি আমি এবং হ্যাঁ, আমি ভীত। কারণ আমি একজন নারী এবং আমি এদেশে নিরাপদ বোধ করি না। বাস্তবে তো অবশ্যই, এমনকি অনলাইনেও না। ধর্ষণ তৃপ্তিদায়ক কোনও বিষয় নয়। ট্রমা নাটক নয়। আর এটা চলতে পারে না।’
অভিনেতা ও শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর লিখেছেন, দেশের প্রতিটি মানুষ যেনো শান্তিতে বসবাস করতে পারে। প্রতিটি নারী যেনো নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে। প্রতিটি অন্যায়ের সঠিক বিচার হোক। আর প্রতিটি ধর্ষকের হোক ফাঁসি। মুরাদনগরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি।
অভিনেত্রী তমা মির্জা ক্ষোভ ঝেড়ে লিখেছেন, মুরাদনগর, কুমিল্লা! বিভৎসতা! লজ্জা!
অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদের পোস্টে উঠে আসে হতাশা ও অসহায়তা, মানুষ আর মানুষ নেই। পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ আর কোনো মানুষ থাকবে না, খুব শিগগিরই।
হ্যাশট্যাগ দিয়ে আরেক চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি লিখেছেন, ‘ধর্ষণকে না বলুন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। নীরবতাই সমর্থন। ধর্ষণ বন্ধ করুন।’
ধর্ষণের প্রতিবাদ জানিয়ে নুসরাত ফারিয়া লিখেছেন, ‘স্টপ রেপ।’ সংগীতশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণী লিখেছেন, ‘বিবস্ত্র বাংলাদেশ।’
দীর্ঘ লম্বা একটি পোস্টে অভিনেতা জিয়াউল রোশান লিখেছেন, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় ধর্ষকদের একটাই শাস্তি চাই। জনসম্মুখে ফাঁসি। তারা কোন দল করে, আর কোন ধর্মের সেটা জানা দরকার নাই, জানতেও চাই না, জাস্ট জনসম্মুখে ফাঁসি চাই।’
ছোট পর্দার অভিনেতা আরশ খান এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘কাপুরুষত্ব যখন চরম পর্যায়ে পৌছায়, তখন তা কুপুরুষত্বে রূপ নেয়। জন্ম পরিচয়হীন না হলে একজন নারীর সঙ্গে এমন করা সম্ভব না। একবার যারজ সব সময় যারজই থাকে।’
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’খ্যাত অভিনেতা শিমুল শার্মা এক পোস্টে লিখেছেন, ‘কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর? মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।’
অভিনেতা সাইদুর রহমান পাভেল ফেসবুক লাইভে এসে ধর্ষকদের ফাঁসি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ধর্ষকদের মেরে ফেলুন। প্রকাশ্যে ফাঁসি দিন।’ এ ছাড়া দেশের সার্বিক অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে জানিয়ে পাভেল বলেন, ‘এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটা তো আরো খারাপ হয়ে গেল। এখন দেশের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে। এখন তো মনে হচ্ছে ভুল করেছি ভাই। ভুল করেছে সবাই।’
কণ্ঠশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণী লিখেছেন, ‘বিবস্ত্র বাংলাদেশ।’
কণ্ঠশিল্পী সিঁথি সাহা লিখেছেন, ‘কোন দেশে আছি? এ কি দেখলাম? ঘেন্না ঘেন্না ঘেন্না, থু থু থু!’
জয় চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো তাই তোমায় ভালোবাসি। আমার প্রাণের বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি! কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর সাথে যা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। যিনি ধর্ষণ করেছেন এবং যিনি পরবর্তীতে ভিডিও করে পাবলিশ করেছেন উভয়ের বিচার চাই।’
নির্মাতা নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাটা যেন একটা কৌতুক, আবার কষ্টের ট্র্যাজেডি। মনে হয়, পুরো দেশটা যেন এক বিশাল পরীক্ষাগার, আর সেই পরীক্ষার দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে এমন কারও হাতে, যার জ্ঞান নেই, দায়িত্ববোধ নেই। ঠিক যেন বান্দরের হাতে লাঠি। যার হাতে দেশের হাল, সে বুঝেই না, সে কী করছে। শক্তি আছে, ক্ষমতা আছে, কিন্তু বিচক্ষণতা নেই, দেশপ্রেম নেই। যে লাঠি দিয়ে দেশকে সামলানোর কথা, সেই লাঠি দিয়েই গুঁতো দিচ্ছে দেশের স্বপ্ন, সম্ভাবনা আর শান্তি। মানুষের ব্যথা-কষ্টের খবর কেউ রাখে না। নীতির জায়গায় এখন নীতিহীনতা, দেশের অবস্থা এমন এক নাটকের দৃশ্য, যেখানে দর্শক কাঁদছে-কিন্তু মঞ্চে যারা নাচছে, তারা বুঝতেই পারছে না, মানুষ হাসছে না, কাঁদছে। বাংলাদেশ এখন ঠিক সেই অবস্থায়, যেখানে বান্দরের হাতে লাঠি, আর দেশটা কেবল সহ্য করে যাচ্ছে।’
সংগীতশিল্পী লুৎফর হাসান লিখেছেন, ‘কোনও অপরাধী গ্রেফতার হলেই আমরা খুশি হই। আমরা থেমে যাই। আমাদের থেমে যাওয়ার পরই শুরু হয় আসল প্রক্রিয়া। আলগোছে অপরাধী মুক্ত হয়। বিদেশে পালিয়ে যায়। দেশে জায়গা বদল করে। যেকোনো এক উপায়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আমাদের সাথে মিশে যায়। ইতিহাস থেকে উঠে যায় অপরাধীর শাস্তি কার্যকরের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।’
নির্মাতা শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘পুলিশ এখনও (সুদিনের অপেক্ষায়) নিরাসক্ত, দায়সারা ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেই আগের মতোই নেতা-নেত্রী তোষণ করে উন্নতির উপায় খুঁজছে। পথেঘাটে চলতে ফিরতে গেলে এমনই বোধ হয়। বাংলাদেশে কিছুই বদলায় না। পুলিশও বদলাবে না।’