মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দেবর ও ভাবি নিহত হয়েছেন। রোববার (৩০ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার বৌলতলী ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, জাঙ্গালিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের মেয়ে নাসরিন আক্তার (২৩) ও একই উপজেলার দক্ষিণ চাড়িগাও এলাকার ইউনুস শিকদারের ছেলে মো. ইমরান শেখ (২৫)। ইমরান সম্পর্কে নাসরিন আক্তারের ফুফাতো দেবর।
স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগে স্বামী শুভ শিকদার ও চার বছরের মেয়েসহ বাবার বাড়ি জাঙ্গালিয়া বেড়াতে আসেন নাসরিন। রোববার (৩০ জুলাই) সকালে ব্যবসার কাজে ঢাকা যান স্বামী শুভ শিকদার। কিছুক্ষণ পর শুভ শিকদারের ফুফাতো ভাই ইমরান ওই বাড়িতে যান। এ সময় নাসরিনের মেয়েকে খেলার জন্য বাইরে পাঠান তারা। এর কিছুক্ষণ পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘরটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন স্থানীয়রা। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তারা। ফায়ার সার্ভিস আসতে আসতে পুরো ঘর আগুনে পুড়ে যায়। পরে ঘরের ভেতরে নাসরিন ও ইমরান শেখের পুরে যাওয়া মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়।
লৌহজং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে বিচ্ছিন্ন এলাকায় রাস্তা না থাকায় নৌকাযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে। প্রায় ৩০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সময় দুটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারী অপরজন পুরুষ। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে বসতঘরে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহত নাসরিনের বাবা নূর ইসলাম খান বলেন, আমার মেয়ে, মেয়ের জামাই শুভ ও দেবর ইমরান কয়েকদিন আগে বেড়াতে আসে। সকালে শুভ তার ব্যবসার কাজে ঢাকায় যান। মেয়ে ও মেয়ের দেবর বাসায় ছিলেন। হঠাৎ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘরে আগুন লেগে যায়। আমরা প্রাথমিকভাবে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে ফায়ার সার্ভিসকে কল করে জানাই। ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই ঘরসহ আমার মেয়ে ও মেয়ের দেবর আগুনে পুড়ে মারা যায়।
লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ্-আল-তায়েবির বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমরা খবর পাই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বসত ঘর থেকে বেলা সোয়া ১১ টার দিকে দুজনের অগ্নিদগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করি। তবে কী কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল আউয়াল। এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, যতটুকু শুনেছি, যে ঘরে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে সেই ঘরটি ভেতর থেকে আটকানো ছিল। ঘরের মধ্যে শুধু নিহত দুজনই ছিলেন। ছোট ওই ঘরে প্রচুর মালামাল ছিল। এ কারণে মুহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে শুধু এই ঘরটির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশপাশের ঘরগুলো আগুনে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ইউএনও আরও বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহত পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। সে সঙ্গে পুঁড়ে যাওয়া ঘর পুনর্বাসনের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।