Dhaka সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুজিব-হাসিনা দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন : মাহমুদুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারিবারিকভাবে সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। তিনি ও তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পারিবারিকভাবে সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। তিনি ও তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য প্রথমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পদক্ষেপ নেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, শাহবাগে প্রতিষ্ঠিত গণজাগরণ মঞ্চে বিচারের দাবির পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য সরকারের সহযোগিতায় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। বিশ্বের সব ফ্যাসিস্ট সরকারই জনগণকে উন্মাদনা করার জন্য একটি পাবলিক এনিমি কনসেপ্ট বা গণশত্রু তৈরি করে; যা ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই। হিটলারের জার্মানিতে প্রথমে কমিউনিস্ট ও পরবর্তীতে বিরোধী ঘরানার লোকদের এভাবেই গণশক্তি হিসেবে অবিহিত করে প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ একইভাবে ২০১৩ সালে শাহবাগে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে নির্মূল করতে দিনের পর দিন বিক্ষোভের আয়োজন করে সরকার।

জবানবন্দিতে মাহমুদুর রহমান বলেন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে আন্দোলনের ফলে আপিল বিভাগ আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজাকে রেট্রোস্পেকটিভ ইফেক্ট দিয়ে ফাঁসির রায়ে উন্নীত করে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চরম অবিচারের উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, শাহবাগের বিক্ষোভকারীদের নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে তৎকালীন সরকার। তাদের নির্দেশে সচিবালয় থেকে কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে ফাঁসির দাবিতে সমর্থন জানাতে বাধ্য হন। এমনকি সংসদে দাঁড়িয়ে শাহবাগী উদ্যোক্তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি মানসিকভাবে শাহবাগে থাকতেন। এছাড়া ভারতীয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এসে বলেন- প্রটোকল না আটকালে তিনি নিজেও শাহবাগে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করতেন। আর এতেই প্রমাণিত হয় যে শাহবাগের এই তথাকথিত আন্দোলনে ভারতের পূর্ণ সমর্থন ছিল।

এই সম্পাদক আরও বলেন, শাহবাগের উদ্যোক্তাদের ইসলাম বিদ্বেষী চেহারা প্রকাশিত হতে থাকলে এর প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের উত্থাপন হয়। গণজাগরণ মঞ্চে ফাঁসির দাবির বাইরেও যেসব গণমাধ্যম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের বিবেচনায় ভিন্নমতের ব্যক্তিদের মালিকানাধীন; সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিও জানান। ফলে ন্যায়বিচার না করে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবির মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়ায় ফ্যাসিবাদের চরিত্র উন্মোচিত হয়। আর এসব নিয়ে দেশের মানুষকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে সতর্ক করার চেষ্টা করে আমার দেশ। শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শিরোনামে সংবাদও প্রকাশ করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিপদ সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ।

স্কাইপ কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদুর রহমান বলেন, শাপলা চত্বরে গণহত্যার কিছুদিন আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার চলছিল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন নিজামুল হক নাসিম। তিনি বিচারের নামে যে অবিচার করেছিলেন তার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপিয়েছিল দৈনিক আমার দেশ ও লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা। নিজের বেঞ্চের মামলা নিয়ে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক জিয়া উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন বিচারপতি নিজামুল। তাদের স্কাইপ কথোপকথনের প্রমাণ ও ইমেইল আমার দেশ ও ইকোনমিস্টের কাছে পৌঁছায়।

সেই কথোপকথনে দেখা যায়, একটি তামাশয় পরিণত হয়েছে পুরো বিচারপ্রক্রিয়া। সাক্ষীর জেরার প্রশ্নোত্তর থেকে শুরু করে খসড়া রায় লিখে দেওয়া পর্যন্ত বিচারপতি নিজামুল, বিদেশে থাকা জিয়া উদ্দিন ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল-মালুম নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে আগে থেকেই নির্ধারণ করেছেন। এর একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। সেটি হলো, জেয়াদ আল-মালুমকে আগে থেকেই বিচারপতি নিজামুল বলতেন— বিচার চলাকালে তিনি যেন মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে অবজেকশন জানান। পরে তাকে বসিয়ে দেবেন বিচারপতি নিজামুল। ভাষাটা এমন ছিল- ‘আপনি দাঁড়াইয়া যাবেন আর আমি বসাইয়া দিমু। সবাই মনে করবে আমাদের খাতির নেই।’

বিচারপতি নিজামুলের পদোন্নতির বর্ণনাও দেন আমার দেশ সম্পাদক। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এসকে সিনহার কাছে অনেকবার নিজের পদোন্নতির জন্য আবদার করেছিলেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল। জবাবে সিনহা বলেছেন, ‘পদোন্নতির আগে কয়েকটি রায় দিয়ে আসতে হবে।’ কেননা তৎকালীন আইনমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সিনহার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সবমিলিয়ে স্কাইপ ও ই-মেইলে পাওয়া সব নথিই পরিষ্কার করেছিল এসব মামলার রায় পূর্ব নির্ধারিত। জনগণকে বোকা বানানোর জন্য বিচারের নাটক করা হয়েছিল। তবে এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পদত্যাগে বাধ্য হন বিচারপতি নিজামুল।

মাহমুদুর রহমান বলেন, পদত্যাগ করলেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন এই চেয়ারম্যানকে। উল্টো তাকে পুরস্কার হিসেবে কিছুদিনের মধ্যে হাইকোর্টে বেঞ্চ দেওয়া হয়। এরপর পদোন্নতি দিয়ে আপিল বিভাগে নেওয়া হয়। এমনকি বিচারপতির চাকরি থেকে অবসরের পর তাকে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান করা হয়। অর্থাৎ জনগণকে ফ্যাসিস্ট সরকার বুঝিয়ে দিলো যে, সবরকম অন্যায় করার অধিকার তাদের রয়েছে।

এদিন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন মাহমুদুর রহমান। তিনি এ মামলার ৪৬তম সাক্ষী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান। এছাড়া আলোচিত এ মামলায় এদিন সাক্ষ্য দেবেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

গত বুধবার এ মামলায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল মাহমুদুর রহমান ও নাহিদ ইসলামের। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তারা ওইদিন আসতে না পারায় ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় চাওয়া হয়। পরে আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে, ৯ সেপ্টেম্বর ১৪তম দিনের মতো এ মামলায় ছয়জন সাক্ষ্য দেন। এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল মোট ৪৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনজন সাক্ষ্য দেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মুজিব-হাসিনা দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন : মাহমুদুর রহমান

প্রকাশের সময় : ০৪:২৯:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারিবারিকভাবে সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। তিনি ও তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পারিবারিকভাবে সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। তিনি ও তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য প্রথমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পদক্ষেপ নেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, শাহবাগে প্রতিষ্ঠিত গণজাগরণ মঞ্চে বিচারের দাবির পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য সরকারের সহযোগিতায় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। বিশ্বের সব ফ্যাসিস্ট সরকারই জনগণকে উন্মাদনা করার জন্য একটি পাবলিক এনিমি কনসেপ্ট বা গণশত্রু তৈরি করে; যা ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই। হিটলারের জার্মানিতে প্রথমে কমিউনিস্ট ও পরবর্তীতে বিরোধী ঘরানার লোকদের এভাবেই গণশক্তি হিসেবে অবিহিত করে প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ একইভাবে ২০১৩ সালে শাহবাগে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে নির্মূল করতে দিনের পর দিন বিক্ষোভের আয়োজন করে সরকার।

জবানবন্দিতে মাহমুদুর রহমান বলেন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে আন্দোলনের ফলে আপিল বিভাগ আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজাকে রেট্রোস্পেকটিভ ইফেক্ট দিয়ে ফাঁসির রায়ে উন্নীত করে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চরম অবিচারের উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, শাহবাগের বিক্ষোভকারীদের নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে তৎকালীন সরকার। তাদের নির্দেশে সচিবালয় থেকে কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে ফাঁসির দাবিতে সমর্থন জানাতে বাধ্য হন। এমনকি সংসদে দাঁড়িয়ে শাহবাগী উদ্যোক্তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি মানসিকভাবে শাহবাগে থাকতেন। এছাড়া ভারতীয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এসে বলেন- প্রটোকল না আটকালে তিনি নিজেও শাহবাগে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করতেন। আর এতেই প্রমাণিত হয় যে শাহবাগের এই তথাকথিত আন্দোলনে ভারতের পূর্ণ সমর্থন ছিল।

এই সম্পাদক আরও বলেন, শাহবাগের উদ্যোক্তাদের ইসলাম বিদ্বেষী চেহারা প্রকাশিত হতে থাকলে এর প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের উত্থাপন হয়। গণজাগরণ মঞ্চে ফাঁসির দাবির বাইরেও যেসব গণমাধ্যম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের বিবেচনায় ভিন্নমতের ব্যক্তিদের মালিকানাধীন; সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিও জানান। ফলে ন্যায়বিচার না করে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবির মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়ায় ফ্যাসিবাদের চরিত্র উন্মোচিত হয়। আর এসব নিয়ে দেশের মানুষকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে সতর্ক করার চেষ্টা করে আমার দেশ। শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শিরোনামে সংবাদও প্রকাশ করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিপদ সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ।

স্কাইপ কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদুর রহমান বলেন, শাপলা চত্বরে গণহত্যার কিছুদিন আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার চলছিল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন নিজামুল হক নাসিম। তিনি বিচারের নামে যে অবিচার করেছিলেন তার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপিয়েছিল দৈনিক আমার দেশ ও লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা। নিজের বেঞ্চের মামলা নিয়ে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক জিয়া উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন বিচারপতি নিজামুল। তাদের স্কাইপ কথোপকথনের প্রমাণ ও ইমেইল আমার দেশ ও ইকোনমিস্টের কাছে পৌঁছায়।

সেই কথোপকথনে দেখা যায়, একটি তামাশয় পরিণত হয়েছে পুরো বিচারপ্রক্রিয়া। সাক্ষীর জেরার প্রশ্নোত্তর থেকে শুরু করে খসড়া রায় লিখে দেওয়া পর্যন্ত বিচারপতি নিজামুল, বিদেশে থাকা জিয়া উদ্দিন ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল-মালুম নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে আগে থেকেই নির্ধারণ করেছেন। এর একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। সেটি হলো, জেয়াদ আল-মালুমকে আগে থেকেই বিচারপতি নিজামুল বলতেন— বিচার চলাকালে তিনি যেন মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে অবজেকশন জানান। পরে তাকে বসিয়ে দেবেন বিচারপতি নিজামুল। ভাষাটা এমন ছিল- ‘আপনি দাঁড়াইয়া যাবেন আর আমি বসাইয়া দিমু। সবাই মনে করবে আমাদের খাতির নেই।’

বিচারপতি নিজামুলের পদোন্নতির বর্ণনাও দেন আমার দেশ সম্পাদক। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এসকে সিনহার কাছে অনেকবার নিজের পদোন্নতির জন্য আবদার করেছিলেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল। জবাবে সিনহা বলেছেন, ‘পদোন্নতির আগে কয়েকটি রায় দিয়ে আসতে হবে।’ কেননা তৎকালীন আইনমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সিনহার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সবমিলিয়ে স্কাইপ ও ই-মেইলে পাওয়া সব নথিই পরিষ্কার করেছিল এসব মামলার রায় পূর্ব নির্ধারিত। জনগণকে বোকা বানানোর জন্য বিচারের নাটক করা হয়েছিল। তবে এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পদত্যাগে বাধ্য হন বিচারপতি নিজামুল।

মাহমুদুর রহমান বলেন, পদত্যাগ করলেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন এই চেয়ারম্যানকে। উল্টো তাকে পুরস্কার হিসেবে কিছুদিনের মধ্যে হাইকোর্টে বেঞ্চ দেওয়া হয়। এরপর পদোন্নতি দিয়ে আপিল বিভাগে নেওয়া হয়। এমনকি বিচারপতির চাকরি থেকে অবসরের পর তাকে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান করা হয়। অর্থাৎ জনগণকে ফ্যাসিস্ট সরকার বুঝিয়ে দিলো যে, সবরকম অন্যায় করার অধিকার তাদের রয়েছে।

এদিন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন মাহমুদুর রহমান। তিনি এ মামলার ৪৬তম সাক্ষী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান। এছাড়া আলোচিত এ মামলায় এদিন সাক্ষ্য দেবেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

গত বুধবার এ মামলায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল মাহমুদুর রহমান ও নাহিদ ইসলামের। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তারা ওইদিন আসতে না পারায় ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় চাওয়া হয়। পরে আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে, ৯ সেপ্টেম্বর ১৪তম দিনের মতো এ মামলায় ছয়জন সাক্ষ্য দেন। এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল মোট ৪৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনজন সাক্ষ্য দেন।