কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি :
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষ করে ১৭৩ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে তাদের বহনকারী জাহাজটি ঘাটে এসে পৌঁছায়। এর আগে মঙ্গলবার সকালে মিয়ানমারের সিটওয়ে বন্দর থেকে তাদের নিয়ে জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়।
বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম-উস-সাকিব বিষয়টি আজ নিশ্চিত করেন।
ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে কক্সবাজার জেলার ১২৯ জন, বান্দরবানের ৩০ জন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী ও নরসিংদীর ৭ জন এবং নীলফামারীর একজন রয়েছেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় নৌযানে করে মিয়ানমারের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল কক্সবাজার পৌঁছান। এ সময় প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানায় বিজিবি।
রিজিয়ন কমান্ডার বলেন, মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষ করে ১৭৩ জন বাংলাদেশি দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজার নুনিয়াছড়া ঘাঁটিতে পৌঁছেছেন। প্রথমে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। এরপর বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের খারাংখালী এলাকার বাসিন্দা ছেনেয়ারা বেগম বলেন, ১২ বছর আগে আমার ভাই খোরশেদ আলম (৩০) নিখোঁজ হন। গতকাল খবর পেয়েছি মিয়ানমার কারাগার থেকে অনেক বাংলাদশিকে আনা হচ্ছে। তাই ভাইয়ের জন্য অপেক্ষায় আছি। ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে শোকে মা মারা গেছেন।
উখিয়ার পালংখালী মধ্যম ফারির বিল এলাকার ফরিদা খাতুন বলেন, আমার ছেলে আরফাত হোসন (২০) সিএনজি চালক ছিল। দালালের খপ্পরে পড়ে ১৪ মাস আগে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ৯ মাস পরে তার চিঠি পেয়ে নিশ্চিত হয়েছি সে মিয়ানমারের কারাগারে রয়েছে। নিকট আত্নীয়ের মাধ্যমে খবর পেয়েছি মিয়ানমার থেকে তাদের আনা হচ্ছে। আমি এখনো নিশ্চিত না যে সেখানে আমার ছেলে আছে কিনা। তারপরও ছেলেকে পাওয়ার এক বুক আশা নিয়ে এসেছি।
একই কথা বললেন, পালংখালীর একই গ্রামের বাসিন্দা সাবেকুন্নাহার, হাজেরা খাতুন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার জমিলা, উখিয়ার বদি বলম শাহ আলম, টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের হাজমপাড়ার নুরুল ইসলাম।সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভিড় করছেন স্বজনরা।
ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র বলছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সফররত ‘মিয়ানমার নেভাল শিপ চিন ডুইন’ ১৭৩ বাংলাদেশিদের বহন করে মঙ্গলবারই যাত্রা দিয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা করে বাংলাদেশে ফেরত আনা হচ্ছে।
মূলত এসব বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটি বৃহস্পতিবার সকালেই বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয়রত মিয়ানমারের সেনা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবেন।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়ার জন্যই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছেন।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, গত ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন। যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ এবং সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেসব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশও সংরক্ষিত হতে পারে।