আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ‘ভারতবিরোধী’ হিসেবে পরিচিত রাজধানী মালের মেয়র মোহামেদ মুইজ্জু। দেশটির বিরোধী দল প্রগ্রেসিভ পার্টি অব দ্য মালদ্বীপের (পিপিএম) নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী মুইজ্জু পেয়েছেন ৫৪ শতাংশ ভোট।
রোববার (১ অক্টোবর) স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
মালদ্বীপের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ধাওরু জানিয়েছে, নির্বাচনে ব্যবহৃত ৫৬৮ ব্যালটের সবগুলোর ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। আর ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, মোহাম্মদ মুইজ্জো পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ ভোট। আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলিহ পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ভোট।
মোহাম্মদ মুইজ্জো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার অর্থ হলো দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে ভারতের যে প্রভাব রয়েছে সেটি কমে যাবে। অপরদিকে বাড়বে চীনের প্রভাব।
নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই দলের কারাবন্দি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিনের মুক্তি দাবি জানিয়েছেন মুইজ্জু। পিপিএমের সদরে এক বিবৃতিতে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে এ দাবি জানান তিনি। দুর্নীতি মামলায় ১১ বছরের সাজা ভোগ করছেন আব্দুল্লা ইয়ামিন।
অন্যদিকে নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।
চীন ও ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দেশটির স্থানীয় সময় ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটার ছিলেন দুই লাখ ৮২ হাজার ৮০৪ জন। দেশটিতে প্রথম দফার নির্বাচনে কোনো প্রার্থী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়।
ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই মুইজ্জোর সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্লাস শুরু করেন। আহমেদ আজান নামের এক সমর্থক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুইজ্জোকে অভিনন্দন। লড়াই এখনো শেষ হয়নি। ইন্ডিয়া আউট।’
মোহাম্মদ মুইজ্জো এর আগে রাজধানী মালের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি আগামী পাঁচ বছরের জন্য পর্যটনসমৃদ্ধ এ দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন।
মোহাম্মদ মুইজ্জোর রাজনৈতিক দল প্রোগ্রেসিভি পার্টি অব দ্য মালদ্বীপ (পিপিএম) নেতৃত্বাধীন জোট এর আগে ২০১৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপের ক্ষমতায় ছিল।
তখন চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল মালদ্বীপ। এমনকি ওই সময় চীনের রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনেশিয়েটিভে যোগ দিয়েছিল দেশটি এবং বড় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বেইজিংয়ের কাছ থেকে বিপুল ঋণ আদায় করে নিয়েছিল।
গত ৯ সেপ্টেম্বর মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেদিন এককভাবে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। ফলে এ নির্বাচন গড়ায় দ্বিতীয় দফায় (রানঅফ)।
নির্বাচনের আগে মোহামেদ মুইজ্জু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট হতে পারলে মালদ্বীপে ভারতের প্রভাব কমাবেন। এছাড়া দেশটিতে যে অল্প সংখ্যক ভারতীয় সেনা মোতায়েন আছেন তাদের বের করে দেবেন।
৪৫ বছর বয়সী মুইজুর রাজনৈতিক দল পিপিএম নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। এসময় চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে মালদ্বীপ।
২০১৮ সালে সবশেষ নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ। তাকে ‘ভারতপন্থি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।