নিজস্ব প্রতিবেদক :
মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) কীটনাশক আমদানিতে জালিয়াতির অভিযোগে রাসায়নিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
এছাড়াও মশার লার্ভা নিধনের ব্যাকটেরিয়া বিটিআই আমদানিতে উত্থাপিত জালিয়াতির অভিযোগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সার্বিক বিষয় তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি।
শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মুখপাত্র মকবুল হোসাইন এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) এ বিষয়ে ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক অফিস আদেশ জারি করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রমে ব্যবহৃত কীটনাশক সরবরাহ কাজে (দরপত্র আইডি-৮১৩৮৩৪) সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সরবরাহকৃত ৫ হাজার কেজি বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিঙ্গাপুরে উৎপাদিত এবং তাদের নিকট হতে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরবরাহকৃত বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিঙ্গাপুরের উৎপাদিত এবং সরবরাহকৃত নয় বলে ওই কোম্পানির ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
সরবরাহকৃত বিটিআই বেস্ট কেমিক্যালের উৎপাদিত এবং সরবরাহকৃত কিনা তার সপক্ষে প্রমাণ দাখিলসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য মার্শাল এগ্রোভেটকে দুটি পত্র পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। গত ১৭ আগস্ট মার্শাল এগ্রোভেটের প্রেরিত পত্রের বিষয়ে মশক নিধন কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি কারিগরি ও যাচাই কমিটির সভায় পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহকৃত বিটিআই যে বেস্ট কেমিক্যালের উৎপাদিত— এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি এগ্রোভেট।
সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিএনসিসি। তারা জানায়, সিঙ্গাপুর থেকে মার্শাল এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বিটিআই সরবরাহ করা হয়নি এবং মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের নিযুক্ত পরিবেশকও নয়। এছাড়া মার্শাল এগ্রোভেট মি. লি কিয়াং যিনি বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিটিআই এক্সপার্ট ও রপ্তানি ব্যবস্থাপক বলে দাবি করেছেন, তিনি বেস্ট কেমিক্যালের কর্মচারী নন।
প্রতারণার আশ্রয় নেয়ায় মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজকে ডিএনসিসির সকল কার্যক্রমে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান ডিএনসিসির মুখপাত্র মকবুল হোসাইন।
পাশাপাশি বিটিআই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ডিএনসিসি বলেও জানান তিনি।
এ জালিয়াতির অভিযোগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে ডিএনসিসির অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ কমিটির আহ্বায়ক ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বিটিআই আমদানিতে প্রতারণায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ডিএনসিসির সম্মানহানি করায় প্রতারক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স। জালিয়াতির অভিযোগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।