নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়কের ভুত ভুলে যেতে হবে। আজকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলে এসেছি, এদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে না।
বুধবার (২২মার্চ) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, বড় বড় কথা ছাড়ুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত নামিয়ে ফেলুন। ঐ ভূত আর বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না। আজকে আমরা আমেরিকার অ্যাম্বাসেডরকে বলে এসেছি, ইট ইজ নট পসিবল টু রিটার্ন টু কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট এগেইন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বাংলাদেশ আর ফেরত যাবে না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বের যে দুর্দিন তার প্রতিক্রিয়া আজকে বাংলাদেশে। এই দুর্দিনে অনেক রাজনৈতিক বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। বিএনপি নামে একটি অবৈধ দল, অবৈধ ব্যক্তির হাতে গড়া অবৈধ দল, সেই অবৈধ দলের অবৈধ মহাসচিব মির্জা ফখরুল। বিএনপির সংবিধানের কোথায় আছে তিনি ১২ বছর দলের মহাসচিব থাকতে পারবেন। সে কি পদের বৈধতা হারায়নি? তিনি যে পদত্যাগ দাবি করেন, তার নিজেরই তো পদত্যাগ করা উচিত। বিএনপির সংবিধান অনুযায়ী তো তিনি অবৈধ।
আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর কত কিছু হলো। তাদের স্বপ্ন খালেদা জিয়া দেশ চালাবেন। তারা সরকার পতনের আন্দোলন করবেন। আন্দোলনের জন্য পল্টন তো পেলেনই না, পেলেন গোলাপবাগের গরুর হাট। দৌঁড়ের আন্দোলন হলো নিরব পদযাত্রা, পদযাত্রা দাঁড়িয়ে মানববন্ধন। বিএনপির আন্দোলন চোরাবালিতে আটকে গেছে। বিএনপির অবস্থা জয়নুলের শিল্পকর্মের গরুর গাড়ির মতো।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলন এসে গেছে নীরব পদযাত্রায়। পদযাত্রা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে মানববন্ধনে। এখন বিএনপির আন্দোলন চোরাবালিতে আটকে গেছে; সামনেও যায় না, পেছনেও যায় না; ডানেও যায় না, বামেও যায় না।
বিএনপি দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, অবৈধ ব্যক্তির হাতে গড়ে ওঠা অবৈধ দল হচ্ছে বিএনপি। ফখরুল নাকি বলে আমরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছি। ফখরুল গণতন্ত্রকে তোমরা কবর দিয়েছো। গণতন্ত্র হত্যা বিএনপি করেছে, তাদের হাতে এদেশ আর যাবে না। শেখ হাসিনা মেরামত করেছে, তাদের হাতে এদেশ আর ফিরিয়ে দেবে না। তাদের সরকার পতনের আন্দোলন ভুয়া, সাতাশ দফা ভুয়া, পদযাত্রা ভুয়া। তাদের নেতাও ভুয়া। মির্জা ফখরুল দেশ পালিয়েছিলেন, শুধু পালাননি, আর রাজনীতি করবেন না বলে লিখিত দিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। যার শক্তি কমে যায়, মুখের বিষ উগরে ওঠে। শক্তি কমে গেছে, চোরাবালিতে আটকে গেছে। পথ নাই পালাবার, কাজে বড় বড় কথা ছাড়ুন। তত্ত্ববধায়ক সরকারের ভুত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলুন। ওই ভুত আর বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার অভিমুখে। নেত্রী অনেক আশা করে, বাছ-বিচার করে ছাত্রলীগের কমিটিগুলো করেছেন। তোমরা (ছাত্রলীগ) তাকে হতাশ করো না।’
জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘১৯৭০ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার বৈধ অধিকার লাভ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতারা চেয়েছিলেন একজন সামরিক কর্মকর্তা ঘোষণা দিলে বাঙালি উজ্জীবিত হবে। কাজেই তাকে খুঁজে এনে চট্টগ্রাম কালুরঘাটে ঘোষণা দিতে বলা হয়।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের ইতিহাস মুছে দেওয়ার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশুপার্ক বানিয়েছিল। ৭ মার্চ, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ও টুঙ্গিপাড়া নিষিদ্ধ করেছিল। গণতন্ত্রকে তোমরা (বিএনপি) হত্যা করেছো, সমাহিত করেছো। বিএনপির আন্দোলন এখন চোরাবালিতে আটকে গেছে।
কাদের বলেন, পিতাকে দিয়ে স্বাধীনতা, কন্যাকে দিয়ে মুক্তি। শেখ হাসিনা আজ মুক্তির সংগ্রামের কান্ডারি। দশ দফা ভুয়া, সাতাশ দফা ভুয়া, বিক্ষোভ মিছিল ভুয়া আর নেতাও ভুয়া। আমরা পালিয়েছি? তোমার (বিএনপি) নেতা ফখরুলই মুচলেকা দিয়ে পালিয়েছেন। বিএনপি ধ্বংস করেছে, শেখ হাসিনা মেরামত করেন।
এ সময় তিনি ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, নেত্রী অনেক যাচাই-বাচাই করে এই কমিটি দিয়েছেন। তাকে হতাশ করবে না। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সময়, যাদের সন্ত্রাসী মানসিকতা, চাঁদাবাজির মানসিকতা, সিট বাণিজ্যের মানসিকতা, যাদের কমিটি বাণিজ্য করার মানসিকতা, যাদের মাদকের মানসিকতা, তাদেরকে কমিটি থেকে বাদ দাও। এই কমিটির প্রতি আমাদের অনেক আশা। অনেক দিনের পচা-গলিত জিনিস এখনও রয়েছে গেছে। প্রয়োজনে অপারেশন করে বিষফোঁড়া বাদ দিতে হবে। এগুলো না থাকলে ছাত্রলীগের কোনও ক্ষতি হবে না। ইদানিং অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, যা আমাদের লজ্জিত করে। এ সকল ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কেউ যেন ছাত্রলীগের কমিটিতে জায়গা না পায়। খারাপে স্মার্ট লোকদের আমাদের দরকার নেই। ভালো কাজে স্মার্ট হতে হবে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আ.লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সদস্য তারানা হালিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শাওন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।